Advertisement
E-Paper

ছায়াপথের ঝাঁক ‘সরস্বতী’ আবিষ্কার করলেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা

সদ্য হদিশ মেলা গ্যালাক্সি সুপার ক্লাস্টার ‘সরস্বতী’ রয়েছে ‘পিসেস’ নক্ষত্রপুঞ্জে। মূল গবেষক পুণের ‘আয়ুকা’র অধিকর্তা সোমক রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘অত দূর থেকে হালে ‘সরস্বতী’র আলো এসে পৌঁছেছে স্লোয়ান ডিজিটাল স্কাই সার্ভেতে। ব্রহ্মাণ্ডের অত দূরে অত অত পদার্থ গিয়ে গড়া এমন গ্যালাক্সি সুপার ক্লাস্টারের জন্ম হল কী ভাবে, ‘সরস্বতী’র আবিষ্কার আমাদের তা বুঝতে অনেকটাই সাহায্য করবে।’’

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৭ ১৬:২০
সদ্য আবিষ্কৃত ‘সরস্বতী’ গ্যালাক্সি সুপারক্লাস্টার।

সদ্য আবিষ্কৃত ‘সরস্বতী’ গ্যালাক্সি সুপারক্লাস্টার।

এই ব্রহ্মাণ্ডে আমরা রয়েছি যে ‘পাড়া’য়, সেই মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির চেয়ে অনেক অনেক দূরে, একটি গ্যালাক্সিপুঞ্জ (গ্যালাক্সি সুপার ক্লাস্টার) বা, ঝাঁক ঝাঁক গ্যালাক্সির একটি মহাঝাঁকের হদিশ পেলেন ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। ব্রহ্মাণ্ডে এত দূরে আর এত বড় গ্যালাক্সিপুঞ্জের হদিশ মিলল এই প্রথম। তার নাম দেওয়া হয়েছে- ‘সরস্বতী’। ব্রহ্মাণ্ডের সুদূরতম প্রান্তে, এই সুবিশাল গ্যালাক্সিপুঞ্জটি রয়েছে আমাদের থেকে ৪০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে। তার মানে, আলোর গতিতে ছুটলে ‘সরস্বতী’তে পৌঁছতে সময় লাগবে ৪০০ কোটি বছর।

ওই ভারতীয় গবেষকদলের নেতৃত্বে রয়েছেন দুই বাঙালি। এক জন পুণের ‘আয়ুকা’র অধিকর্তা অধ্যাপক সোমক রায়চৌধুরী। অন্য জন পুণের ‘আয়ুকা’রই অধ্যাপক জয়দীপ বাগচী। হালে ‘সরস্বতী’ থেকে আলো এসে পৌঁছেছে, তাই এত দিন পর হদিশ মিলল ৪০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে থাকা ওই গ্যালাক্সি সুপারক্লাস্টারের। যার মানে, যে আলো দেখে আমরা হদিশ পেয়েছি ‘সরস্বতী’র, এই আবিষ্কার সেই আলোর পথ ধরে ব্রহ্মাণ্ডের আরও অনেক দূর অতীতের খবর, ৪০০ কোটি বছর আগেকার খবর আমাদের জানিয়ে দিল।

আরও পড়ুন- গবেষণা বলছে, কেমো বাড়িয়ে দিচ্ছে ক্যানসার, সত্যিই তাই?

পুণে থেকে টেলিফোনে মূল গবেষকদের অন্যতম, ‘আয়ুকা’র অধিকর্তা সোমক রায়চৌধুরী আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত যত গ্যালাক্সিপুঞ্জের হদিশ পেয়েছেন বিশ্বের তাবৎ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা, ‘সরস্বতী’ তার মধ্যে রয়েছে সবচেয়ে দূরে। আবিষ্কৃত গ্যালাক্সি সুপার ক্লাস্টারগুলির মধ্যে সবচেয়ে বড় এই ‘সরস্বতী’। এর আগে এত বড় গ্যালাক্সি সুপার ক্লাস্টারের হদিশ পাওয়া যায়নি। মহাকাশে ‘পিসেস’ নক্ষত্রপুঞ্জটি রয়েছে যে দিকে, এই ‘সরস্বতী’ রয়েছে ঠিক সেই দিকেই।’’


‘সরস্বতী’ গ্যালাক্সি সুপার ক্লাস্টারে গ্যালাক্সি ক্লাস্টারগুলির সবচেয়ে ভারী দু’টি ঝাঁক

সোমকবাবুর কথায়, ‘‘ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আগে ‘বিগ ব্যাং’ হয়েছিল ১৩৭০ কোটি বছর আগে। আর এই ‘সরস্বতী’র জন্ম হয়েছিল তার ঠিক ১ হাজার কোটি বছর পর। ৪০০ কোটি বছর আগে ‘সরস্বতী’ থেকে যে আলো বেরিয়েছিল, তা আমাদের স্লোয়ান ডিজিটাল স্কাই সার্ভেতে এসে পোঁছল এই সে দিন! এই আবিষ্কার তাই আমাদের ‘বিগ ব্যাং’-এর আরও কাছাকাছি সময়ে ব্রহ্মাণ্ডে কী কী ঘটনা ঘটেছিল, কী ভাবে তৈরি হয়েছিল গ্যালাক্সিগুলি ও গ্যালাক্সি ক্লাস্টারগুলি আর সেগুলি দিয়ে কী ভাবেই গড়ে উঠেছিল গ্যালাক্সি সুপার ক্লাস্টারগুলি, তা বুঝতে অনেকটাই সাহায্য করবে।’’

এই আবিষ্কারের গবেষণাপত্রটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল’-এ প্রকাশিত হতে চলেছে আগামী ১৯ জুলাই।

‘সরস্বতী’ গ্যালাক্সি সুপার ক্লাস্টার: দেখুন ভিডিও

সদ্য আবিষ্কৃত এই সুপার গ্যালাক্সি ক্লাস্টার ‘সরস্বতী’তে রয়েছে মোট ৪২টি গ্যালাক্সি ক্লাস্টার। যাতে রয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি গ্যালাক্সি।এর আগে, ১৯৮৯ সালে সোমকবাবু যে সুপার গ্যালাক্সি ক্লাস্টারটি আবিষ্কার করেছিলেন, তাতে ছিল ৩৫টি গ্যালাক্সি ক্লাস্টার। তার নাম ছিল- ‘শ্যাপলি’। যাতে গ্যালাক্সির সংখ্যা ৫ হাজারেরও বেশি। ‘শ্যাপলি’র চেয়ে অনেক অনেক বড় আর অনেক অনেক দূরে রয়েছে এই ‘সরস্বতী’। কোনও গ্যালাক্সি সুপার ক্লাস্টার বলতে বোঝায়, অনেক অনেক গ্যালাক্সিপুঞ্জের একটি মহা গ্যালাক্সিপুঞ্জ।

ফলে, ‘সরস্বতী’ জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সামনে ব্রহ্মাণ্ডকে আরও ভাল ভাবে ও সহজে চেনা, জানা, বোঝার ‘দরজা’টা (উইন্ডো) খুলে দিল, এমনটাই মনে করছেন আরও এক মূল গবেষক পুণের ‘আয়ুকা’র অধ্যাপক জয়দীপ বাগচীও।আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিও রয়েছে একটি গ্যালাক্সি মহাঝাঁকের মধ্যেই। তার নাম- ‘লানিয়াকা’ গ্যালাক্সি সুপার ক্লাস্টার। তবে তার জন্ম ‘বিগ ব্যাং’-এর অনেক অনেক পরে।

কেন এই গ্যালাক্সি সুপার ক্লাস্টারটির নাম দেওয়া হল ‘সরস্বতী’?

সোমকবাবুর কথায়, ‘‘সরস্বতী আমাদের দেশের সবচেয়ে প্রাচীন নদীগুলির অন্যতম। আর এই আবিষ্কারের আগাগোড়ায় জড়িত ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরাই। এই গ্যালাক্সি সুপার ক্লাস্টারটি আদতে একটা বড় নদীর মতো। যার মধ্যে এক একটা গ্যালাক্সি ভেসে যাচ্ছে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিতে যেমন তারা বা নক্ষত্রগুলি ভেসে চলেছে আমাদের ছায়াপথে। গ্যালাক্সিপুঞ্জলি এই গ্যালাক্সি সুপার ক্লাস্টারে নদীর স্রোতের মতো ভেসে চলছে বলেই আমাদের আবিষ্কৃত এই গ্যালাক্সি সুপার ক্লাস্টারটির নাম দেওয়া হয়েছে নদীর নামে।’’

অন্যতম মূল গবেষক জয়দীপবাবু বলছেন, ‘‘ব্রহ্মাণ্ডের অত দূরে অত অত পদার্থ গিয়ে গড়া এমন গ্যালাক্সি সুপারক্লাস্টারের জন্ম হল কী ভাবে, এমন গ্যালাক্সি সুপার ক্লাস্টারের জন্মের ক্ষেত্রে ডার্ক এনার্জির ভূমিকা কতটা, ‘সরস্বতী’র আবিষ্কার আমাদের তা বুঝতে অনেকটাই সাহায্য করবে।’’

ছবি ও ভিডিও সৌজন্যে: ইন্টার ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স, পুণে।

Saraswati galaxy Universe IUCAA সরস্বতী গ্যালাক্সি আয়ুকা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy