মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে ভাইরাসের সংক্রমণ! এ সন্দেহ আগে থেকেই রয়েছে। তবে মেলেনি পোক্ত প্রমাণ। এ বার সেই পোক্ত প্রমাণের খোঁজে আরও এক ধাপ এগোলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে— স্কিৎজ়োফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিজ়অর্ডার বা বিষণ্ণতার মতো মানসিক রোগের সঙ্গে যোগ থাকতে পারে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস (এইচসিভি)-এর সংক্রমণের।
জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা মস্তিষ্কের বিভিন্ন নমুনা নিয়ে পরীক্ষানিরিক্ষা চালাচ্ছিলেন। সম্প্রতি ওই গবেষণার তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে মস্কিষ্কের ত্রিস্তরীয় আবরণীতে ১৩ ধরনের ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে যাঁদের স্কিৎজ়োফ্রেনিয়া বা বাইপোলার ডিজ়অর্ডার রয়েছে, তাঁদের মস্কিষ্কের নমুনায় হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে।
মূলত দু’টি ধাপে এই গবেষণা চলেছে। প্রথম ধাপে স্কিৎজ়োফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিজ়অর্ডার এবং তীব্র বিষণ্ণতায় ভুগতে থাকা রোগীদের মস্তিষ্ক এবং অন্যদের মস্তিষ্কের নমুনা পর্যালোচনা করে দেখা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে আরও বৃহত্তর পরিসরে গবেষণা চালানো হয়। তাতে প্রায় সাড়ে ২৮ কোটি রোগীর মস্তিষ্কের নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়। তাতে দেখা গিয়েছে, স্কিৎজ়োফ্রেনিয়া আক্রান্ত রোগীদের ৩.৫ শতাংশের মস্তিষ্কে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস রয়েছে। বাইপোলার ডিজ়অর্ডারে আক্রান্তদের ৩.৯ শতাংশের মস্তিষ্কে মিলেছে এই ভাইরাস। তীব্র বিষণ্ণতায় ভোগা রোগীদের ১.৮ শতাংশের মধ্যে এই ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে। গবেষণায় এ-ও দেখা গিয়েছে, যাঁদের মধ্যে এই মানসিক সমস্যাগুলি নেই, তাঁদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে এই ভাইরাসের সংক্রমণ তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই কম (মাত্র ০.৫ শতাংশ)।
তবে এই ভাইরাসগুলি মূলত মস্তিষ্কের আবরণীতেই পাওয়া গিয়েছে। গবেষকেরা মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাসের (মস্তিষ্কের এই অংশটি মানুষের স্মৃতি, অনুভূতি, কোনও কিছু আত্মস্থ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে) নমুনাও পরীক্ষা করে দেখেন। সেখানে কোনও ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা যায়নি। যা থেকে গবেষকদের অনুমান, রোগজীবাণু থেকে মস্তিষ্ককে সুরক্ষিত রাখতে আবরণীগুলি ঠিকঠাক কাজ করেছে। তবে যাঁদের মস্তিষ্কের আবরণীতে ভাইরাস ধরা পড়েছে, তাঁদের হিপোক্যাম্পাসে জিনগত পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। যা থেকে অনুমান করা হচ্ছে, মস্তিষ্কের বাইরের প্রান্ত থেকেও ভাইরাস নিজের প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
আরও পড়ুন:
মানসিক রোগ এবং ভাইরাসের মধ্যে সুনির্দিষ্ট কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করতে অবশ্য আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি গবেষকেরা এ-ও মনে করছেন, হেপাটাইটিস সি থাকা বা সেটি প্রভাব ফেলতে পারে মানেই এই নয় যে সেটিই রোগের একমাত্র কারণ হয়ে ওঠে। স্কিৎজ়োফ্রেনিয়া বা বাইপোলার ডিজ়অর্ডারে ভুগতে থাকা রোগীদের সকলের শরীরেই যে এই ভাইরাস রয়েছে, এমনটাও নয়। তাই এই বিষয়ে আরও গবেষণা করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা।