Advertisement
E-Paper

আচমকা নিবে আসে নক্ষত্রের আলো! শত আলোকবর্ষ দূরের গ্রহদের কী ভাবে খুঁজে পাওয়া যায়? বিজ্ঞানীদের কৌশল কী

সম্প্রতি নাসা তাদের জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের মাধ্যমে আবিষ্কার করেছে ১১০ আলোকবর্ষ দূরে অ্যান্টলিয়া নক্ষত্রপুঞ্জের মধ্যেকার একটি গ্রহকে। এত দিন যার অস্তিত্ব কারও জানা ছিল না। কোন কৌশলে এত দূরের গ্রহ খুঁজে পান বিজ্ঞানীরা?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২৫ ০৮:৫৯
How exoplanets are discovered by scientists in transit method

মহাকাশে দূরের গ্রহ আবিষ্কৃত হয় ট্রানজ়িট পদ্ধতিতে। —ফাইল চিত্র।

ভেবে দেখেছেন কি? তারারা যত আলোকবর্ষ দূরেই থাক, একে একে কিন্তু ঠিক খুঁজে বার করছেন বিজ্ঞানীরা!

কিন্তু কী ভাবে? কোন কৌশলে কোটি কোটি কিলোমিটার দূরের মহাজাগতিক বস্তুকে দেখতে পাওয়া যায়? কী ভাবে তাদের আচরণ বোঝা যায়? বিজ্ঞানীরা কিন্তু শুধু দূরের গ্রহ, নক্ষত্র বা উপগ্রহের অস্তিত্ব প্রমাণ করেই থেমে থাকেন না। কোন নক্ষত্র কত বড়, কোন কোন গ্রহ তার চারপাশে ঘোরে, কত জোরে ঘোরে, যাবতীয় খুঁটিনাটি তথ্য খুঁজে বার করেন তাঁরা। এ যেন অজানাকে জানার, একেবারে নিংড়ে নেওয়ার এক নিরন্তর চেষ্টা। আদতে যার কোনও শেষ নেই!

বিশাল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অধিকাংশই এখনও মানুষের অজানা। দৃষ্টি যেখানে পৌঁছোয় না, সেখানকার রহস্য উদ্‌ঘাটনের জন্য মহাকাশে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করেছেন বিজ্ঞানীরা। বসানো হয়েছে শক্তিশালী সব ক্যামেরা, টেলিস্কোপ। দূরের গ্রহ, নক্ষত্র আবিষ্কারে প্রযুক্তিই ভরসা। ক্যামেরার দৃষ্টি যত দূর যায়, তার মধ্যে থেকে গ্রহ বা নক্ষত্রের ছবি তুলে আনা অবশ্য কঠিন নয়। কিন্তু তার বাইরে? ক্যামেরার ক্ষমতার বাইরের জগত থেকে গ্রহদের কী ভাবে খুঁজে পান বিজ্ঞানীরা?

পৃথিবী ছাড়াও আরও সাত-সাতটি গ্রহ, তাদের বহু উপগ্রহ এবং বামন গ্রহ নিয়ে সূর্যের ভরা সংসার। এই সৌরজগতের বাইরেও ছোটবড় এমন অনেক সূর্য রয়েছে। মহাকাশে ছড়িয়ে তাদের পরিবার। অতি সম্প্রতি আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা তাদের জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের মাধ্যমে আবিষ্কার করেছে ১১০ আলোকবর্ষ দূরে অ্যান্টলিয়া নক্ষত্রপুঞ্জের মধ্যেকার একটি গ্রহকে। এত দিন যার অস্তিত্ব কারও জানা ছিল না। জেমস ওয়েবের তথ্য বলছে, ওই নতুন গ্রহটির বয়স খুব বেশি নয়। ৬০ লক্ষ বছর হবে। যে নক্ষত্রকে তা প্রদক্ষিণ করে, সেটি আকারে সূর্যের চেয়ে ছোট। আর নতুন গ্রহটি আকারে সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহ শনির সমান। এই গ্রহের অস্তিত্ব কিন্তু ছবি তুলে প্রমাণ করেছে নাসার টেলিস্কোপ। তবে বাইরের সব গ্রহ আবিষ্কার করা, তাদের আচরণ সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া সহজ নয়। জেমস ওয়েব অত্যন্ত শক্তিশালী টেলিস্কোপ। তাই ১১০ আলোকবর্ষ দূর থেকেও নতুন গ্রহের নিখুঁত ছবি তুলে আনা গিয়েছে। কিন্তু যাদের ছবি ক্যামেরায় ধরা যায় না, তাদের সম্পর্কে খুঁটিনাটি তথ্য জানতে অন্য ধরনের বিশেষ কৌশল অবলম্বন করতে হয় বিজ্ঞানীদের। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, সৌরজগতের বাইরের এই গ্রহদের বলা হয় ‘এক্সোপ্ল্যানেট’। এদের আবিষ্কারের পদ্ধতির নাম ‘ট্রানজ়িট মেথড’!

কী এই ট্রানজ়িট মেথড?

দূরের গ্রহ আবিষ্কারের একাধিক পদ্ধতি আছে। যখন যেমন প্রয়োজন, তেমন পদ্ধতি প্রয়োগ করেন বিজ্ঞানীরা। তবে ‘এক্সোপ্ল্যানেট’ আবিষ্কারে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি ‘ট্রানজ়িট মেথড’। এই প্রক্রিয়ায় গ্রহ আবিষ্কারের জন্য ক্যামেরা বা টেলিস্কোপের সাহায্য নেওয়া হলেও সরাসরি তার ছবি ওঠে না। বিজ্ঞানীরা জানান, গ্রহের তুলনায় নক্ষত্র আবিষ্কার সহজ। কারণ নক্ষত্র এক একটি আগুনের গোলা। তাদের নিজস্ব আলো আছে। দূর থেকে সেই আলো দেখা যায়। কিন্তু গ্রহ অন্ধকার। নক্ষত্রের আলো পড়লে তা আলোকিত হয়। সাধারণত নক্ষত্রের আলোয় গ্রহ ঢেকে যায়। তাই দূর থেকে তাদের দেখা পাওয়া কঠিন। ট্রানজ়িট পদ্ধতি অনুযায়ী, নক্ষত্রের উপর ছায়া থেকে গ্রহের অস্তিত্ব নিশ্চিত করা যায়!

কী ভাবে? নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নক্ষত্রের আলোর কারণে ক্যামেরায় গ্রহ ধরা না পড়লেও তার ছায়ায় আলো কিছু ক্ষণের জন্য ক্ষীণ হয়ে আসে। ঘুরতে ঘুরতে বিজ্ঞানীদের তাক করে রাখা টেলিস্কোপ এবং নক্ষত্রের মাঝে যখন গ্রহ চলে আসে, তখন তার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। দেখা না গেলেও আলো নিবে এলেই বোঝা যায়, সেখানে গ্রহ রয়েছে। এটাই ট্রানজ়িট পদ্ধতি। আমাদের সৌরজগতেও এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়। পৃথিবী এবং সূর্যের মাঝে রয়েছে বুধ এবং শুক্রগ্রহ। এই দুই গ্রহ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে চলে এলে সূর্যের আলো কিছুটা ক্ষীণ হয়ে আসে। দেখা মেলে ট্রানজ়িট পদ্ধতির।

শুধু গ্রহের অস্তিত্ব নয়, তার নানা আচরণ, বৈশিষ্ট্যও ধরা পড়ে ট্রানজ়িট পদ্ধতিতে। নক্ষত্রকে এক বার প্রদক্ষিণ করতে গ্রহের কত সময় লাগছে, কত ক্ষণ নক্ষত্রের আলো ক্ষীণ হয়ে থাকছে, তার ভিত্তিতে গ্রহটির কক্ষপথের আকার নির্ধারণ করা যায়। আর নক্ষত্রের আলো ঠিক কতটা ক্ষীণ হচ্ছে, তা বলে দেয় গ্রহটি কত বড় বা কত ছোট। এ ছাড়া, গ্রহের বায়ুমণ্ডল কী দিয়ে তৈরি, ট্রানজ়িট থেকে তার হদিসও মেলে। নক্ষত্রের আলো গ্রহের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। সেখানে বিভিন্ন স্তরে তার প্রতিফলন অনুযায়ী বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, কী উপাদান রয়েছে বায়ুমণ্ডলে। ১৯৯০-এর দশক থেকে এখনও পর্যন্ত মহাকাশে সৌরজগতের বাইরে প্রায় ৫,৯০০টি নতুন গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ট্রানজ়িট পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে। মাত্র দুই শতাংশ গ্রহের ক্ষেত্রে সরাসরি ছবি তুলতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা।

exoplanet New Exoplanets New Planet NASA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy