আর মাত্র তিন ঘণ্টার অপেক্ষা! তার পরেই আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে নামবেন ভারতীয় নভশ্চর শুভাংশু শুক্ল। সঙ্গে থাকবেন নাসার ‘অ্যাক্সিয়ম-৪’ অভিযানের আরও তিন নভশ্চর। ভারতীয় সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার দুপুর ৩টে ১ মিনিটে প্রশান্ত মহাসাগরে ‘স্প্ল্যাশডাউন’ করবে তাঁদের মহাকাশযান ‘ড্রাগন’। তবে এখানেই শেষ নয়! ফেরার পরেও দীর্ঘ প্রক্রিয়া অপেক্ষা করে রয়েছে শুভাংশুদের জন্য। রয়েছে নানা নিয়মকানুন। আপাতত সে সবেরই প্রস্তুতি চলছে নাসার অন্দরে।
গত ২৫ জুন স্পেসএক্সের ‘ড্রাগন’ মহাকাশযানে চড়ে আইএসএস-এর উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন শুভাংশুরা। সঙ্গে রয়েছেন অ্যাক্সিয়ম-৪-এর ক্রু-কমান্ডার পেগি হুইটসন, মিশন বিশেষজ্ঞ স্লাওস উজানস্কি-উইজ়নিউস্কি এবং টিবর কাপু। ১৮ দিন মহাকাশে কাটানোর পর সোমবার তাঁদের ফিরতিযাত্রা শুরু হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের একটু পরে বিকেল ৪টে ৪৫ মিনিটে (ভারতীয় সময়) মহাকাশকেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয় শুভাংশুদের মহাকাশযান। শুরু হয় পৃথিবীর দিকে ফিরতিযাত্রা। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ফেরার পরেও দীর্ঘ প্রক্রিয়া অপেক্ষা করে রয়েছে শুভাংশুদের জন্য। এত দিন মহাকাশের মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশে কাটানোর পর পৃথিবীতে ফিরে মানিয়ে নিতে অসুবিধা হয় নভশ্চরদের। সে জন্য ফেরার পর সাত দিন ধরে বিশেষ পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে শুভাংশুদের।
অবতরণের পর কী কী প্রক্রিয়া?
• বেলা ৩টে ১ মিনিটে প্রশান্ত মহাসাগরে স্প্ল্যাশডাউন।
• সমুদ্রে অবতরণের পর প্রথমেই স্পেসএক্সের একটি দল পৌঁছে যাবে শুভাংশুদের ক্যাপসুলের কাছে। ক্যাপসুলটিকে তুলে নেওয়া হবে জাহাজে। সেই জাহাজেই একে একে বেরিয়ে আসবেন নভশ্চরেরা।
• এই জাহাজেই নভশ্চরদের মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হবে। এর পর, তাঁদের একটি হেলিকপ্টারে করে তীরে পাঠানো হবে।
• সেখানে বেশ কয়েক দফা পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে তাঁদের। প্রথমত, মানবশরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে কানের অভ্যন্তরে থাকা ‘ভেস্টিবুলার সিস্টেম’। তা এত দিন পর হঠাৎ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সংস্পর্শে এসে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। যে কারণে পৃথিবীতে ফিরে প্রথম বেশ কয়েক দিন টলমল পায়ে হাঁটেন মহাকাশচারীরা। কখনও আবার পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর হয়ে পড়ে যে, অবতরণের পর পরই চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে হয় নভশ্চরদের। ফলে শুভাংশুদের শারীরিক অবস্থা খতিয়ে দেখা হবে।
• এর পর সরাসরি সাত দিনের পর্যবেক্ষণে পাঠানো হবে চার নভশ্চরকে। ফ্লাইট সার্জনের তত্ত্বাবধানে সাত দিন ধরে তাঁদের স্বাস্থ্যের উপর বিশেষ ভাবে নজর রাখা হবে।
দীর্ঘ দিন মহাকাশে থাকলে কী প্রভাব পড়ে স্বাস্থ্যের উপর?
মানবদেহ যেহেতু মাধ্যাকর্ষণহীন পরিস্থিতিতে কাজ করার জন্য তৈরি নয়, তাই মহাকাশের মাধ্যাকর্ষণশূন্যতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সময় লাগে নভশ্চরদের। দেখা দেয় নানা শারীরিক সমস্যাও, যা খুব উদ্বেগের না হলেও, নেহাত ফেলনাও নয়।
• মহাকাশের ‘মাইক্রোগ্র্যাভিটি’ পরিস্থিতি শরীরের মধ্যস্থ তরল ও রক্তচাপের উপর প্রভাব ফেলে। শরীরের তরল পদার্থ উপরের দিকে বইতে থাকে। যার ফলে মস্তিষ্কে তরল জমা হয়, মুখমণ্ডল ফুলতে থাকে, নানা শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াতেও হেরফের ঘটে। এর ফলে মহাকাশে যাওয়ার পর প্রথম কয়েক দিন বেশির ভাগ মহাকাশচারীরই অসুস্থতা, বমি বমি ভাব এবং মাথা ঘোরার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। একে বলে ‘স্পেস সিকনেস’।
• তা ছাড়া, শূন্য মাধ্যাকর্ষণে থাকার কারণে পাল্লা দিয়ে কমতে থাকে হাড়ের ওজন, ভঙ্গুর হয়ে পড়ে হাড়, যা অস্টিয়োপোরোসিসের আর এক নামান্তর। এ সব থেকে নিজেকে চাঙ্গা রাখতে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হয় নভশ্চরদের।
• চোখের মণির আকার বদলে যায়, রেটিনায় গঠনগত পরিবর্তন হয়। চোখে রক্ত সঞ্চালনও কমে যায়। কখনও কখনও দৃষ্টিশক্তিও কমে যায় মহাকাশচারীদের।
• মহাজাগতিক রশ্মি এবং ক্ষতিকর সৌর বিকিরণের সংস্পর্শে বেশি ক্ষণ থাকলে ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ক্ষতিকর বিকিরণের কতটা শরীর দ্বারা শোষিত হচ্ছে, তা মাপার জন্য ডোসিমিটার নামে এক যন্ত্র পরে থাকতে হয় নভশ্চরদের।