Advertisement
E-Paper

বাড়ির ছাদ ফুঁড়ে ঢুকে পড়া সেই উল্কাপিণ্ডের জন্ম পৃথিবীর আগে! দেড় মাস পর জানলেন বিজ্ঞানীরা

১৯৫৪ সালে আমেরিকার আলাবামার সিলাকোগার একটি বাড়িতে আছড়ে পড়েছিল প্রায় চার কেজি ওজনের একটি উল্কা। ছাদ ফুঁড়ে সেই উল্কা গিয়ে পড়েছিল একটি রেডিয়োতে। তার পরে ছিটকে গিয়ে লেগেছিল এক ব্যক্তির গায়ে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২৫ ০৮:৫৬
পৃথিবীর থেকে বয়সে প্রায় দু’কোটি বছরের বড় সেই উল্কাপিণ্ড।

পৃথিবীর থেকে বয়সে প্রায় দু’কোটি বছরের বড় সেই উল্কাপিণ্ড। ছবি: সংগৃহীত।

নিজের বাড়ির বসার ঘরে দুপুরবেলা একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। আচমকাই শোনেন গুলির মতো শব্দ! সম্বিৎ ফিরে পাওয়ার পরে বোঝেন, আকাশ থেকে নেমে এসে কিছু একটা ছাদ ফুঁড়ে ঢুকে পড়েছে তাঁর ঘরে। অল্পের জন্য চোট পাননি তিনি। কিন্তু কী সেই জিনিস, যা গত ২৬ জুন ছাদ ফুঁড়ে নেমে এসেছিল আমেরিকার জর্জিয়া স্টেটের ম্যাকডোনো শহরের ওই বাড়িতে?

আকাশ থেকে নেমে আসা সেই পিণ্ড আসলে উল্কা, নিশ্চিত করেছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা। জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, সেই উল্কাপিণ্ডের বয়স পৃথিবীর থেকেও বেশি। একটু আধটু নয়, পৃথিবীর থেকে বয়সে প্রায় দু’কোটি বছরের বড় সেই উল্কাপিণ্ড। তার জন্ম হয়েছিল ৪৫৬ কোটি বছর আগে। প্রায় দেড় মাসের গবেষণার পরে তেমনটাই সম্প্রতি জানতে পেরেছেন গবেষকেরা।

বিজ্ঞানীরা বলেন, এখন পর্যন্ত পৃথিবীর বুকে ৫০ হাজার উল্কার হদিস মিলেছে। পরিসংখ্যান বলছে, একমাত্র একটি উল্কাই আঘাত করেছে মানুষকে। তা ছাড়া উল্কার দ্বারা কোনও মানুষ কখনও আহত হননি। ২৬ জুন ম্যাকডোনোর সেই বাড়ির বাসিন্দাকেও আঘাত করতে পারত সেই উল্কা। অল্পের জন্য বেঁচেছেন তিনি। জর্জিয়া স্টেটের বাসিন্দাদের অনেকেই জানিয়েছেন, ওই দিন দুপুরে আকাশে আগুনের গোলা দেখেছিলেন তাঁরা। সেই উল্কারই একাধিক খণ্ড ম্যাকডোনোর ওই বাড়ির ছাদ ফুঁড়ে প্রবেশ করেছিল।

সেগুলি কুড়িয়ে নিয়ে গবেষণা করছেন জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। গবেষক স্কট হ্যারিস জানিয়েছেন, উল্কার প্রায় ২৩ গ্রাম খণ্ডাংশ পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। তার আকৃতি একটি কালোজামের মতো। ওইটুকুর আঘাতেই ভেঙে গিয়েছে মেঝের অংশ। হ্যারিস মনে করেন, এই উল্কাটি পৃথিবীর থেকেও বয়সে বড়। ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’-কে হ্যারিস জানিয়েছেন, মঙ্গল এবং বৃহস্পতির মাঝে যে গ্রহাণুপুঞ্জ রয়েছে, তা হল এই উল্কাটির উৎসস্থল। সেখানেই কোনও গ্রহাণু প্রায় ৪৭ কোটি বছর আগে ভেঙে গিয়ে তৈরি হয়েছিল এই উল্কাটি।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণে প্রবেশ করার পরে খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যায় উল্কাপিণ্ড। মনে রাখতে হবে, মহাকাশে প্রতি ঘণ্টায় তাদের গতি থাকতে পারে কয়েক হাজার মাইল। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের প্রবেশের সময় ঘর্ষণ হয়। তার জেরে আগুন ধরে যায় উল্কাপিণ্ডে। ২৬ জুন জর্জিয়ার মানুষজন সেই আগুনই দেখেছিলেন আকাশে। নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, উল্কা যখন মাটিতে পড়ে, তখন তার আয়তন মূল গ্রহাণুর পাঁচ শতাংশেরও কম হয়। সাধারণত একটি নুড়ি বা পাথরের মতো আকার হয় তার। তবে হ্যারিস জানিয়েছেন, ওই নুড়ির মতো উল্কাপিণ্ড যখন মাটিতে আছড়ে পড়ে, তখন যে শব্দ এবং কম্পন হয়, তা কাছ থেকে গুলি ছোড়ার মতোই।

জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হ্যারিস জানিয়েছেন, উল্কা যখন বাড়ির ছাদ ফুঁড়ে প্রবেশ করেছিল, তখন বাড়ির বাসিন্দা শব্দ শুনেছিলেন। তবে ওই বাড়ির বাসিন্দার বক্তব্য এখনও মেলেনি। হ্যারিস জানিয়েছেন, নিজের বসার ঘরে উল্কার আরও খণ্ডাংশ পড়েছে কি না, ওই ব্যক্তি এখনও খুঁজে চলেছেন।

ওই গবেষক জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত জর্জিয়া স্টেট থেকে ২৭টি উল্কার হদিস মিলেছে। ২৬ জুন যেটি আছড়ে পড়েছে, সেটি ২৭তম। কয়েক দশকে হয়তো একটি করে উল্কা মিলেছে। হ্যারিস জানিয়েছেন, এখন প্রযুক্তি অনেক আধুনিক। তা ছাড়া মানুষজনও অনেক বেশি সজাগ। ফলে আগামী দিনে আরও বেশি করে উল্কার খোঁজ মিলতে পারে। কোটি কোটি বছর আগে পৃথিবী যখন তৈরি হয়েছিল, তখন তা যে সব বস্তু দিয়ে তৈরি হয়েছিল, তার কিছু কিছু মেলে উল্কাতেও।

১৯৫৪ সালে আমেরিকার আলাবামার সিলাকোগার একটি বাড়িতে আছড়ে পড়েছিল প্রায় চার কেজি ওজনের একটি উল্কা। ছাদ ফুঁড়ে সেই উল্কা গিয়ে পড়েছিল একটি রেডিয়োতে। তার পরে ছিটকে গিয়ে লেগেছিল ওই বাড়ির বাসিন্দা ইএইচ হজেসের গায়ে। তাঁর শরীরের কিছু অংশ ছড়ে গিয়েছিল। তবে গুরুতর আহত হননি তিনি। ওই ঘটনা ছাড়া উল্কা পড়ে আর কখনও কেউ জখম হয়েছেন বলে শোনা যায়নি। এ বার ম্যাকোডোনোর এক বাড়িতে পড়ল একটি উল্কাপিণ্ড। বাড়ির বাসিন্দার পরিচয় এখনও স্পষ্ট করে জানাননি গবেষকেরা। জানানো হয়েছে, অল্পের জন্য চোটের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছেন তিনি। আর তাঁদের দাবি, শহরের নাম অনুসারে উল্কাটির নাম হোক ম্যাকডোনো।

Meteorite meteoroid US NASA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy