Advertisement
E-Paper

৫৬-য় মহাকাশে গা ছমছমে অন্ধকারে হাঁটলেন এই মহিলা...

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সের মহিলা মহাকাশচারী। পেগি হুইট্‌সন। বয়স ৫৬। তিন বার গিয়েছেন মহাকাশে। কাটিয়েছেন ইতিমধ্যেই প্রায় ৪৫০ দিন। মহাকাশে হেঁটেছেন ৪৬ ঘণ্টারও বেশি সময়। গত দেড় মাস ধরে পেগির টুইটার-বার্তার ‘ফলোয়ার’ হয়ে যে ছবি আর ভিডিও হাতে এসেছে আমাদের, তারই হীরক-দ্যুতি রইল এখানে।

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৭ ১০:৩১

চোখ কপালে তুলে দেওয়া প্রোমোশন বলতে আমরা কী বুঝি?

কেউ যদি দুম্ করে গুগ্‌ল, অ্যাপল বা মাইক্রোসফ্‌টের চিফ এক্সিকিউটিভ বা টেকনিক্যাল অফিসার (সিইও বা সিটিও) হয়ে যান, ৫৫/৫৬ বছর বয়সে!

নিন্দুকেরা বলেন, বিল গেট্‌স, ল্যারি পেজ’দের বয়সের বাছ-বিচার আছে। ‘জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশন’-এর ছুৎমার্গও তাঁদের আছে কি না, জানা না-থাকলেও কোনও মহিলাকে এখনও পর্যন্ত গুগ্‌ল, অ্যাপল বা মাইক্রোসফ্‌টের সিইও বা সিটিও হতে দেখা যায়নি।

আর তিনি মহিলা হয়েও, এই ৫৬ বছর বয়সে ‘প্রোমোশন’ পেয়েছেন মহাকাশে! সদ্য ফেলে আসা নভেম্বরে। ৬ মাসের জন্য, আপাতত। আমাদের যখন গা পোড়ানো গরম কাল, সেই এপ্রিল-মে মাসে উত্তর গোলার্ধের বসন্তে একটি উজ্জ্বল রেকর্ডের ‘ফুল’ ফুটিয়ে তাঁর ফিরে আসার কথা মার্কিন মুলুকে।


সেই তিনি। গত শুক্রবার যিনি মহাকাশের অতলান্ত অন্ধকারে হাঁটলেন সাড়ে ৬ ঘণ্টা!


গত শুক্রবার রাতে যাঁর সঙ্গে মহাকাশে হাঁটলেন পেগি (বাঁ দিকে), সেই শেন কিমব্রাও

এই ৫৬ বছর বয়সেও তিনি মহাকাশে হাঁটলেন টানা সাড়ে ৬ ঘণ্টা। গত শুক্রবার ভারতীয় সময় ৬ জানুয়ারির সন্ধ্যে সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত। অত গভীর রাতবিরেতে অতলান্ত, আদিগন্ত মহাকাশের গা ছমছমে গায়ে কাঁটা দেওয়া অন্ধকারে সাড়ে ৬ ঘণ্টা ধরে হাঁটাহাঁটি করতে কেনই-বা ভয় লাগবে ওই মহিলার, হোক না বয়সটা ৫৬, মহাকাশে এটা তো তাঁর তৃতীয় বারের হাঁটাহাঁটি!

আরও পড়ুূন- কোথা থেকে আসে রেডিও তরঙ্গ, ধাঁধার জট খুললেন কলকাতার শমী

পেগি হুইটসনের কথা বলছি। মার্কিন মহিলা মহাকাশচারী। গত ১৪ বছরে তিন-তিন বার পাড়ি জমিয়েছেন মহাকাশে। প্রথম দু’বারের সফরেই মহাকাশে কাটিয়ে ফেলেছেন ৩৭৭টি পার্থিব দিন-রাত। সেরে ফেলেছেন ৩৯ ঘণ্টা ৪৬ মিনিটের ‘হণ্টন’- মহাকাশে!

অত রাতবিরেতে, গত শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) অতলান্ত মহাকাশের গায়ে কাঁটা দেওয়া অন্ধকারে সাড়ে ৬ ঘণ্টা ধরে কেন হাঁটাহাঁটি করলেন ওই মহিলা?


তখনও যাননি মাইক্রো-গ্র্যাভিটির মুলুকে। পেগি টুইটারে পাঠিয়েছেন সেই ছবি


২৮ ডিসেম্বর। ক্রিসমাস-হুল্লোড়ে পেগি। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে।


কে বলবে ৫৬! ৪ জানুয়ারি মহাকাশ স্টেশনে হার্ডওয়্যার সারাচ্ছেন পেগি...

৩৭৭ কিলোমিটার (প্রায় ২৫০ মাইল) ওপরের কক্ষপথে থেকে পৃথিবীকে পাক মারছে যে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস), তাতে আলো জ্বালাতে, তার যাবতীয় যন্ত্রপাতি চালাতে ‘জ্বালানি’ জোগায় যা, বহু বহু দিনের পুরনো সেই ৪৮টি নিকেল-হাইড্রোজেন ব্যাটারি যে বদলে ফেলতে হবে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব! তার জায়গায় তড়িঘড়ি বসাতে হবে এক-একটা ঢাউস রেফ্রিজারেটারের অর্ধেক সাইজের ২৪টি লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি। আদ্যিকালের (প্রায় এক দশকেরও বেশি পুরনো) সেই ৪৮টি নিকেল-হাইড্রোজেন ব্যাটারি দিয়েই এখন চালানো হয় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের পাওয়ার বা বিদ্যুৎ গ্রিড। তার জায়গায় সর্বাধুনিক লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি লাগবে মাত্রই ২৪টি। আর তাতে মহাকাশ স্টেশনের পাওয়ার গ্রিড হবে অনেক বেশি শক্তিশালী। বিদ্যুতের উৎপাদন হবে অনেক বেশি। লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারিগুলি হবে অনেক বেশি দীর্ঘায়ু।


যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে! ৩ জানুয়ারি টুইটে জানালেন পেগি

প্রায় এক দশকেরও বেশি পুরনো ৪৮টি নিকেল-হাইড্রোজেন ব্যাটারি দু’-তিন বছরের মধ্যেই বদলে ফেলতে হবে ২৪টি লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি দিয়ে। হাতে আর সময় নেই বেশি। ৩টি লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি নিয়ে ডিসেম্বরেই মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছে গিয়েছিল জাপানের মালবাহী মহাকাশযান ‘এইচটিভি-৬’।


পেগির স্বপ্ন দেখার শৈশবের ছবি


পেগি মহাকাশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে পড়লেন, হাঁটাহাঁটি করতে...

মহাকাশ স্টেশনে যে বিশাল রোবটটি রয়েছে, সেই ‘ডেক্সটার’ (পুরো নাম- ‘ডেকস্ট্রাস ম্যানিপ্যুলেটর’) তার ১১ ফুট লম্বা ‘হাত’টা বাড়িয়ে জাপানের মালবাহী মহাকাশযান থেকে সেই ৩টি লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি আর তাদের অ্যাডাপ্টারগুলিকে মহাকাশ স্টেশনের বাইরের ‘লনে’ নামিয়ে রেখেছিল ডিসেম্বরেই। গত শুক্রবার গা ছমছমে অন্ধকার রাতে মহাকাশে সাড়ে ৬ ঘণ্টা ধরে হাঁটাহাঁটি করে ওই মার্কিন মহিলা পেগি হুইটসন ৩টি লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির ধাতব প্লেটগুলিতে তার জড়ানোর কাজটা শুরু করে দিলেন। সেই রাতে পেগির সঙ্গী ছিলেন আরও এক মার্কিন মহাকাশচারী শেন কিমব্রাও।

মহাকাশের গা ছমছমে অতলান্ত অন্ধকার আর হাড়-জমানো ঠাণ্ডায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা ধরে হাঁটাহাঁটি করলেন যিনি, সেই বেপরোয়া মহিলাটি কে? কী তাঁর পরিচয়?

তিনি পেগি হুইটসন। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সের মহিলা মহাকাশচারী। এ বার মহাকাশে থাকতে থাকতেই যিনি পা দেবেন ৫৭-য়। গত শুক্রবার মহাকাশে হাঁটাহাঁটির সময় কিমব্রাওকে সঙ্গে নিয়ে পেগি মহাকাশ স্টেশনের বিদ্যুৎ ও ডেটা কেব্‌লের মধ্যে রাখা ৩টি ঝকঝকে নতুন লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির গায়ে তার জড়িয়েছেন, প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা ধরে। মহাকাশ স্টেশনের বাইরের ‘লনে’। কিছু কাজ এখনও বাকি রয়েছে। সেটা সারতে কাল শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারি আবার মহাকাশে হাঁটতে বেরবেন কিমব্রাও। অন্য এক মহাকাশচারীকে সঙ্গে নিয়ে।


মহাকাশ স্টেশনের কুলিং সিস্টেম মেরামতির ট্রেনিংয়ে পেগি হুইটসন। পাঠিয়েছেন টুইটারে।


গত শুক্রবার রাতে মহাকাশে হাঁটতে বেরনোর আগে তোলা ছবি। সঙ্গী মহাকাশচারী শেন কিমব্রাও।


আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের দরজা খুলে মহাকাশে হাঁটতে বেরচ্ছেন পেগি হুইটসন। গত, শুক্রবার।


পেগির টুইটার-বার্তা

পেগি প্রথম বার মহাকাশে গিয়েছিলেন সেই কবে, ২০০২-এ। ‘এক্সপেডিশান-৫’-এর মহাকাশচারী হয়ে। ফের গিয়েছিলেন ২০০৮ সালে। ‘এক্সপেডিশান-১৬’-র সওয়ার হয়ে। গত দু’বারে মহাকাশে মোট ৩৭৭ দিন কাটানোর পুঁজি নিয়ে পেগি এ বার মহাকাসে পাড়ি জমিয়েছিলেন গত ১৭ নভেম্বর, ‘সয়ুজ-এমএস-০৩’ মহাকাশযানে চেপে। ‘এক্সপেডিশান-৫০/৫১’-র মহাকাশ-অভিযাত্রী হয়ে। কোনও মার্কিন মহাকাশচারীর সবচেয়ে বেশি দিন মহাকাশে কাটানোর রেকর্ড (জেফ উইলিয়ামস মহাকাশে কাটিয়েছেন ৫৩৪ দিন) ভাঙার লক্ষ্য নিয়ে। গত শুক্রবারকে হিসেবের মধ্যে ধরলে পেগি ইতিমধ্যেই মহাকাশে হেঁটেছেন ৭ বার। হেঁটেছেন মোট ৪৬ ঘণ্টা ১৬ মিনিট! ভাবতে পারেন?


আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পেগির ক্রিসমাস পালনের ছবি।


পেগির কৃতজ্ঞতা স্বীকার। গ্রাউন্ড স্টেশনের কর্মীদের প্রতি।

আমেরিকার রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ো-কেমিস্ট্রির পিএইচডি পেগি হুইটসন হিউস্টনে নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে এক জন অগ্রণী বায়ো-কেমিস্ট। গত ১৭ নভেম্বর তৃতীয় বারের জন্য মহাকাশে পাড়ি জমানোর পর থেকেই পেগির টুইটার-বার্তার অন্যতম ‘ফলোয়ার’ ছিলেন আনন্দবাজারের এই প্রতিবেদক। গত দেড় মাসে আনন্দবাজারের এই প্রতিবেদককে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে বেশ কয়েক বার টুইটার-বার্তা পাঠিয়েছেন পেগি। পাঠিয়েছেন তাঁর মহাকাশ-যাপনের দিনগুলি আর রাতগুলির চমকে দেওয়া একের পর এক ছবি। পাঠিয়েছেন মহাকাশে পাড়ি জমানোর আগে তাঁর ভিডিও ফুটেজ। পেগির সেই সব টুইটার-বার্তা আর পাঠানো ছবি ও ভিডিও’র কিছু কিছু এখানে তুলে ধরা হল:

বিল গেটস, ল্যারি পেজ’দের একটু অন্য ভাবে চিন্তা-ভাবনা করার ভাবনাটা উস্‌কে দিতে কি পারলেন শেষ পর্যন্ত এই মার্কিন মহিলা মহাকাশচারী, পেগি হুইটসন?

Peggy Whitson World's Oldest Woman in Space Woman Spacewalk in ISS for longest period
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy