Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

শিবের তাণ্ডবনৃত্যের ভঙ্গিমায় কি সুপ্ত আছে বিজ্ঞানের কোনও সূত্র?

বর্তমানে এ দেশে পুরাণকে বিজ্ঞান বলে প্রমাণ করার চেষ্টায় খামতি নেই।

সার্ন চত্বরে বসানো নটরাজ মূর্তি। নিজস্ব চিত্র

সার্ন চত্বরে বসানো নটরাজ মূর্তি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:২৫
Share: Save:

পুরাণের গল্পে সৃষ্টি-স্থিতি-লয়কে এক ছন্দে মিলিয়েছেন নটরাজ শিব। তাঁর তাণ্ডবনৃত্যের ভঙ্গিমায় সুপ্ত আছে কি বিজ্ঞানের কোনও সূত্র?

বর্তমানে এ দেশে পুরাণকে বিজ্ঞান বলে প্রমাণ করার চেষ্টায় খামতি নেই। সেই ঘোলাটে আবর্তের বাইরে বেরিয়ে ভারতীয় শিল্পভাবনা ও বিজ্ঞানের ছন্দ মেলাতে চাইছেন বিজ্ঞানী, পুরাতত্ত্ববিদ, নৃত্যশিল্পীরা। এবং সেই আলোচনার, সেই প্রয়াসের মূলেও উঠে আসছে নটরাজ মূর্তি!

শনি ও রবিবার পুণের ‘ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’ (আইইউকা)-এ এই বিষয়েই আলোচনায় বসেছিলেন সোনাল মানসিংহ, ক্ষমা ভট্টের মতো নৃত্যশিল্পী, আইইউকা-র অধিকর্তা পদার্থবিদ সোমক রায়চৌধুরী, শিল্পী বিকাশ কাসলকর, পুরাতত্ত্ববিদ জিবি দেগলুরকরের মতো অনেকে। আলোচনার মূলে কী ছিল, তা স্পষ্ট করতে গিয়ে সোমকবাবু বলেন, ‘‘আইনস্টাইনের থিয়োরি অব রিলেটিভিটি আমাদের শাস্ত্রে ছিল— এই ধরনের দাবি শুনতে চাই না। তার থেকে আমাদের ঐতিহ্যে ভাবনার কী খোরাক রয়েছে, তার খোঁজ নেওয়া অনেক বেশি প্রয়োজন।’’

আরও পড়ুন: শবরী নিয়ে অবস্থান বদলালেন রাহুল

নটরাজ বিজ্ঞানের আঙিনায় প্রবেশ করেছেন আগেই! ইউরোপীয় পরমাণু গবেষণা সংস্থা ‘সার্ন’-এর কেন্দ্রেই রয়েছে ভারতের দেওয়া নটরাজ মূর্তি। বহু ভারতীয় বিজ্ঞানীরই অভিজ্ঞতা, রাতে বিরাট চত্বরে সেই মূর্তির ছায়া যেন গায়ে কাঁটা দেয়! ওই মূর্তি বসানোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ। তাঁর বক্তব্য, নটরাজ সৃষ্টি এবং ধ্বংস, দুইয়েরই দেবতা। সার্নের লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারেও ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির কয়েক মাইক্রোসেকেন্ড পরের ছবি তৈরি হচ্ছে। আবার তা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তাই দর্শনের জায়গা থেকেই নটরাজ ও বিজ্ঞান কোথাও যেন মিলে যাচ্ছে।

নটরাজের সঙ্গে বিজ্ঞানের সম্পর্ক নিয়ে ফেসবুকে সোমকবাবুর কৌতূহল: কার্ল সাগানের মতো বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী কেন বারবার নটরাজের প্রতীক নিয়ে আলোচনা করেছেন! পদার্থবিজ্ঞানী দীপক ঘোষ বলছেন, গান-নাচের ছন্দের পুরোটাই বিজ্ঞান। গানের মূল তো আসলে কিছু শব্দের কম্পাঙ্ক। সেই কম্পাঙ্ক মগজের স্নায়ুকোষে নাড়া দিয়ে আবেগ জাগিয়ে তোলে। তাই আনন্দের গানে এবং দুঃখের গানে ভিন্ন আবেগ ফুটে ওঠে। নাচের ক্ষেত্রে সেই প্রকাশ আরও বেশি। বিদেশে নাচকে তাই ‘কগনিটিভ নিউরোসায়েন্স’-এর অন্যতম বিষয় হিসেবে ধরা হচ্ছে। মস্তিষ্কের সব অংশ সমান ভাবে কাজ করছে কি না, নাচের মাধ্যমে তা বোঝা সম্ভব।

নৃত্যশিল্পী মমতাশঙ্করের মতে, জীবনের শুরু হৃৎস্পন্দন দিয়ে। সেটাই তো ছন্দ। জগৎ নির্দিষ্ট ছন্দ মেনে চলে, নাচও তা-ই। ছন্দ হারালে যেমন হৃৎস্পন্দন থেমে যেতে পারে, তেমনই ছন্দের অভাবে নাচ পূর্ণতা পায় না। ‘‘আমার বাবা, উদয়শঙ্করের নৃত্যদর্শন মানে শরীর, মন ও আত্মার ভারসাম্য,’’ বলছেন মমতাশঙ্কর।

বিজ্ঞান বলে, বস্তুকে ভেঙে ভেঙে পৌঁছনো যায় অণু-পরমাণু-প্রোটন-নিউট্রনে। পদার্থবিদ সোমকবাবু সেই চোখেই ভাঙছেন নাচকে। নাচের মূলে নানা ‘ফর্ম’। সেই ‘ফর্ম’ ভাঙলে ছোট ছোট মুদ্রা! অনেকেই মনে করেন, তাণ্ডবনৃত্য বা নটরাজের শিল্পশৈলীর স্রষ্টা আসলে জগতের সেই আবহমান ভাঙাগড়ার ছন্দটিকেই ধরতে চেয়েছিলেন! মহাকালের নৃত্যচ্ছন্দে যোগ দিয়ে জগতে ও জীবনে অখণ্ড লীলারস উপলব্ধির কথা তাই কি লিখেছিলেন রবি ঠাকুরও?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lord Shiva Dancing Pose Nataraja Science CERN
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE