Advertisement
E-Paper

মানুষের চ্যাপ্টা মুখ, বড় মস্তিষ্ক তৈরি হয়েছিল বেনজির দ্রুততায়! ‘শ্রেষ্ঠ’ হয়ে ওঠার পথে নতুন ‘ইতিহাস’ আবিষ্কার

থ্রিডি স্ক্যানিং প্রযুক্তি প্রয়োগ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খুব দ্রুত বদলে গিয়েছে মানুষের বাহ্যিক গড়ন এবং সে গতি ছিল প্রত্যাশার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। মুখ এবং মস্তিষ্কে পরিবর্তনের হার ছিল সবচেয়ে বেশি।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৫

ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত। মূল ছবি: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি।

যেমনটা হওয়ার কথা ছিল, হয়নি। বরং প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি গতিতে বিবর্তিত হয়েছে প্রাচীন মানব। শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে নিমেষে পিছনে ফেলে দিয়েছে গরিলা, শিম্পাঞ্জি, বানর, হনুমানদের! বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, অত্যন্ত দ্রুত গতিতে মানুষের মুখ চ্যাপ্টা হয়েছে, বড় হয়েছে মস্তিষ্ক। সমসাময়িক অন্য বনমানুষদের (এপ) হারিয়ে মানুষের শ্রেষ্ঠ হয়ে ওঠার নেপথ্যে এই গতিকেই দায়ী করছেন গবেষকদের একাংশ।

সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) এক দল বিজ্ঞানী মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস নতুন করে ঘেঁটে দেখেছেন। নতুন খোঁজে দীর্ঘ দিন ধরে চলেছে গবেষণা। তার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ‘প্রসিডিংস্‌ অফ দ্য রয়্যাল সোসাইটি বি’-তে। থ্রিডি স্ক্যানিং প্রযুক্তি প্রয়োগ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খুব দ্রুত বদলে গিয়েছে মানুষের বাহ্যিক গড়ন এবং সে গতি ছিল প্রত্যাশার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। বিশেষ করে মানুষের মুখ এবং মস্তিষ্কে পরিবর্তনের হার ছিল বেশি। মূলত সামাজিকতা এবং বুদ্ধিমত্তা মানুষকে এই দ্রুত বিবর্তনের দিকে ঠেলে দিয়েছে, মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

ইউসিএল-এর নৃতত্ত্ববিদ আদিয়া গোমেজ় রোবেল্স বলেছেন, ‘‘বনমানুষের সব রকম প্রজাতির মধ্যে মানুষের বিবর্তন ছিল দ্রুততম। বড় মস্তিষ্ক এবং ছোট মুখের সঙ্গে খুলির অভিযোজন কতটা গুরুত্বপূর্ণ, এখান থেকেই তার প্রমাণ মেলে। সেই কারণেই মানুষ এত দ্রুত বিবর্তিত হতে পেরেছে। বড় মস্তিষ্ক থাকার সুবিধার সঙ্গে এই অভিযোজনগুলির সম্পর্ক থাকতে পারে। একইসঙ্গে সামাজিক কিছু কারণও এই ধরনের বিবর্তনকে ত্বরাণ্বিত করে থাকতে পারে।’’

এই সংক্রান্ত পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞানীরা ভার্চুয়াল মাধ্যমে একাধিক আধুনিক প্রাণীর মাথার খুলির থ্রিডি মডেল তৈরি করেছিলেন। তার মধ্যে ছিল সাতটি হোমিনিড প্রজাতি (গ্রেট এপ, যেমন মানুষ, গরিলা, শিম্পাঞ্জি, ওরাংওটাং প্রভৃতি) এবং ন’টি হাইলোবেটিড প্রজাতি (লেসার এপ, যেমন গিবন জাতীয় বানর)। প্রায় দু’কোটি বছর আগে একই পূর্বপুরুষ থেকে হোমিনিড এবং হাইলোবেটিডের সৃষ্টি হয়েছিল। তার পর ধীরে ধীরে তারা পৃথক ভাবে বিবর্তিত হয়েছে। হোমিনিডদের শারীরবৃত্তীয় বৈচিত্র্য নানা ভাবে বিকশিত হয়েছে। হাইলোবেটিডেরা অভিন্নই রয়ে গিয়েছে। ফলে পরীক্ষার সময়েও গিবনের খুলিগুলি প্রজাতি নির্বিশেষে এক ধরনের ছিল। মানুষ-সহ গ্রেট এপদের খুলিতে পার্থক্য চোখে পড়েছে বার বার। গ্রেট এপদের মধ্যে মানুষের বিবর্তন সবচেয়ে দ্রুত হয়েছে।

এই পার্থক্য আরও ভাল ভাবে বুঝতে প্রতিটি খুলি মোট চার ভাবে ভাগ করে নিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা— মুখের উপরের অংশ, মুখের নীচের অংশ, মাথার সামনের অংশ এবং মাথার পিছনের অংশ। প্রতি প্রজাতির ক্ষেত্রে কোন অংশে কত পরিবর্তন হয়েছে, বলে দিয়েছে প্রযুক্তিই। দেখা গিয়েছে, গ্রেট এপদের অধিকাংশের রয়েছে বড়, সামনের দিকে প্রসারিত মুখ এবং তুলনামূলক ছোট মস্তিষ্ক। একমাত্র মানুষেরই ছিল চ্যাপ্টা মুখ, বড় গোল মাথা। গিবনদের মুখও কিছুটা চ্যাপ্টা ছিল। কিন্তু তাদের মস্তিষ্ক ছিল ছোটই।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, বৃহত্তর ও জটিলতর মস্তিষ্ক থেকে যে বৃহত্তর বুদ্ধিমত্তা পাওয়া গিয়েছিল, তাই মানুষের দ্রুত বিবর্তনের প্রাথমিক চালিকাশক্তি। তবে সামাজিক কারণগুলির ভূমিকাও অস্বীকার করা যায় না। গোমেজ় রোবেল্সের কথায়, ‘‘মানুষের পরে সবচেয়ে দ্রুত বিবর্তিত হয়েছে গরিলারা। তবে তাদের মস্তিষ্ক অন্য গ্রেট এপদের চেয়ে বেশ ছোট। তাদের ক্ষেত্রে বিবর্তন সম্ভবত সামাজিক নির্বাচনভিত্তিক ছিল। তাদের খুলির উপরের উঁচু অংশ (ক্রেনিয়াল ক্রেস্ট) সামাজিক মর্যাদার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে। মানুষের মধ্যেও এই ধরনের কিছু সামাজিক নির্বাচন যে একেবারে ঘটেনি, তা জোর দিয়ে বলা যায় না।’’

Evolution Human Habits Scientific Discovery
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy