Advertisement
E-Paper

গার্ডারের মতো প্রসারিত হচ্ছে, এর পর চুপসে যাবে আমাদের ব্রহ্মাণ্ড! হাতে আর কত দিন? হিসাব কষল নতুন গবেষণা

দীর্ঘ দিনের গবেষণা মহাবিশ্বের পরিণতি নিয়ে ইতিমধ্যে একাধিক ভবিষ্যদ্বাণী করে ফেলেছে। কিন্তু কোনটা সত্যি? কতটা সত্যি? আকাশ ভরা সূর্য-তারার ভবিতব্য কী? অনন্তকাল ধরে কি তারা এ ভাবেই থাকবে?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৫ ০৮:৫৬
Study reveals how the Universe may shrink within few billion years

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আকাশ ভরা সূর্য-তারা নিয়ে গড়ে উঠেছে এই বিশাল ব্রহ্মাণ্ড। আমাদের পৃথিবী তারই এক কোণের বাসিন্দা। পৃথিবী এবং সূর্যের মতো এমন অজস্র গ্রহ, নক্ষত্র, উপগ্রহ, ধূমকেতু রয়েছে ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে। রয়েছে আরও কত নাম না-জানা বস্তু! এ সবের ভবিতব্য কী? অনন্তকাল ধরে কি তারা এ ভাবেই থাকবে? পাক খেয়ে চলবে একে অপরের চারপাশে? কালের নিয়মে কখনও কেউ ধ্বংস হবে। কখনও আবার কোনও উৎস থেকে জন্ম নেবে নতুন মহাজাগতিক অস্তিত্ব? বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে গবেষণা করে চলেছেন। অজানাকে জানার ইচ্ছা তাঁদের চিরকালীন। আর সেই অজানার আঁতুড়ঘর তো পৃথিবী-পরিমণ্ডলের বাইরের ওই মহাশূন্যই!

দীর্ঘ দিনের গবেষণা মহাবিশ্বের পরিণতি নিয়ে ইতিমধ্যে একাধিক ভবিষ্যদ্বাণী করে ফেলেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল, গ্রহ-নক্ষত্র সম্বলিত এই ব্রহ্মাণ্ড ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে। মহাশূন্যে ঘটে চলেছে তার বিস্তৃতি। বিজ্ঞানীদের একটা বড় অংশ এ বিষয়ে এক মত ছিলেন যে, এই প্রসারণ অনন্ত। এর কোনও শেষ নেই। অনন্তকাল ধরে মহাশূন্যে এমন ভাবেই প্রসারিত হবে ব্রহ্মাণ্ড। ভিতরে কালের নিয়মে গ্রহ-নক্ষত্রের জন্ম-মৃত্যু ঘটে চলবে। তাতে ব্রহ্মাণ্ডের সার্বিক পরিধিতে কোনও পরিবর্তন হবে না।

কিন্তু বিজ্ঞানীদের একাংশের গবেষণা এই ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। মহাবিশ্বের প্রসারণ অনন্ত, অসীম— এ কথা তাঁরা মানতে রাজি নন। তাঁরা বলেন, প্রসারণ শেষে এক দিন আবার শুরু হবে সঙ্কোচন। ধীরে ধীরে চুপসে যাবে ব্রহ্মাণ্ড। সঙ্কুচিত হয়ে আসবে তার ব্যাপক পরিধি। বিজ্ঞানীদের সেই তত্ত্ব নিয়েই সম্প্রতি পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। মিলেছে উত্তর! ব্রহ্মাণ্ডের সেই পরিধির সময়সীমাও বলে দিয়েছে গবেষণা!

আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, চিনের সংহাই জিয়াও টং বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পদার্থবিদেরা এই সংক্রান্ত গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল সম্প্রতি প্রকাশ করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, ব্রহ্মাণ্ডের আয়ু ৩.৩৩ হাজার কোটি বছর। তার মধ্যে প্রায় ১.৪ হাজার কোটি বছর কেটে গিয়েছে। ব্রহ্মাণ্ডের বয়স এখন ১.৩৮ হাজার কোটি বছর। বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী, হাতে আছে আরও প্রায় দু’হাজার কোটি বছর। তার পরেই যবনিকা পতন! তার পরেই ব্রহ্মাণ্ডের ইতি!

গবেষণা বলছে, এই দু’হাজার কোটি বছরের মধ্যে আরও ৭০০ কোটি বছর ধরে ব্রহ্মাণ্ডের সম্প্রসারণ ঘটবে। তার পরের বাকি ১.৩ হাজার কোটি বছরে চলবে সঙ্কোচন। সঙ্কুচিত হতে হতে একটি মাত্র বিন্দুতে পরিণত হবে মহাবিশ্ব। একটি বিন্দু, যার কোনও দৈর্ঘ্য নেই, প্রস্থ নেই, নেই উচ্চতা! ‘বিগ ব্যাং’ তত্ত্বের বিপরীতে এ যেন এক বিপুল ‘বিগ ক্রাঞ্চ’ তত্ত্ব। গোটা বিষয়টিকে একটি বিশাল গার্ডারের (রবার ব্যান্ড) সঙ্গে তুলনা করে বুঝিয়েছেন গবেষকেরা। যে ভাবে গার্ডারকে টানলে তা ক্রমশ প্রসারিত হয়, ব্রহ্মাণ্ডও তেমন কোনও অদৃশ্য শক্তির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দিন দিন ছড়িয়ে পড়ছে। একটা এমন সময় আসবে, যখন এই শক্তি প্রসারণের চেয়ে বড় হয়ে দাঁড়াবে। তখন গার্ডারের সঙ্কোচন অনিবার্য।

মূলত ‘ডার্ক এনার্জি সার্ভে’র মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন বিজ্ঞানীরা। ব্যবহার করেছেন ‘ডার্ক এনার্জি স্পেকট্রোস্কোপিক ইনস্ট্রুমেন্ট। এই ‘ডার্ক এনার্জি’ বা ‘আঁধার শক্তি’তেই গবেষণার মূল নিহিত আছে। এটি একটি অদৃশ্য রহস্যময় শক্তি যা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ৭০ শতাংশ তৈরি করেছে বলে দাবি গবেষকদের। এই শক্তিই রয়েছে ‘গার্ডারের’ প্রসারণের নেপথ্যেও। এত দিন বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, ‘আঁধার শক্তি’ হল একটি মহাজাগতিক ধ্রুবক, যা ব্রহ্মাণ্ডের উপর নিরন্তর চাপ বহাল রাখে। কিন্তু নতুন গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, এই ডার্ক এনার্জি ধ্রুবক না-ও হতে পারে। এটি নিজেও হতে পারে গতিশীল। অতিসূক্ষ্ম কণা অ্যাক্সিয়ন এবং ঋণাত্মক মহাজাগতিক ধ্রুবকের সাহায্যে তাঁরা একটি মডেল তৈরি করে বিষয়টি দেখিয়েছেন। তাতেই উঠে এসেছে ৭০০ কোটি বছরের প্রসঙ্গ।

বিজ্ঞানীদের মতে, প্রসারিত হতে হতে ব্রহ্মাণ্ড যখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছোবে, তখন তার আকার হবে বর্তমানের চেয়ে ৬৯ শতাংশ বড়। অর্থাৎ, আগামী ৭০০ কোটি বছরে ব্রহ্মাণ্ড আরও ৬৯ শতাংশ প্রসারিত হবে। তার পর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এবং ঋণাত্মক মহাজাগতিক ধ্রুবকের কাজ শুরু হবে। শুরু হবে সঙ্কোচন। তার পরে আসবে ‘শেষের সে দিন’!

বিজ্ঞানীরা এ-ও জানিয়েছেন, তাঁদের এই তত্ত্ব এখনও অনিশ্চিত। কারণ পর্যাপ্ত পর্যবেক্ষণ তথ্য এখনও তাঁদের হাতে আসেনি। ফলে এই সংক্রান্ত জ্ঞান এখনও সীমিত। অনেক ক্ষেত্রেই কল্পনা করে নেওয়া হয়েছে পরিণতি। এ বিষয়ে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হতে আরও গবেষণা এবং আরও পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। যাঁরা বলছেন, অনন্তকাল ধরে ব্রহ্মাণ্ড প্রসারিত হবে, তাঁদের তত্ত্বও সত্য হতে পারে। সেই সম্ভাবনাও রয়েছে।

যে তত্ত্ব নতুন গবেষণায় উঠে আসছে, তাতে ২ হাজার কোটি বছরের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। এই সময়সীমা পর্যন্ত আমাদের পৃথিবী বা সূর্য, কেউই ‘বেঁচে’ থাকবে না। পৃথিবীতে প্রাণ থাকবে খুব বেশি হলে আরও ৬০ কোটি বছর। ২ হাজার কোটি বছরে সূর্যেরও মৃত্যু হবে। আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথ হয়তো তত দিনে মিশে যাবে পাশের অ্যান্ড্রোমেডা গ্যালাক্সির সঙ্গে।

galaxy Milky Way Galaxy science research universe
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy