Advertisement
E-Paper

মহাকাশে পৃথিবীকে আগলে রাখে, শক্তিশালী সেই ‘রক্ষাকর্তা’ দুর্বল হচ্ছে! দক্ষিণ অতলান্তিকে বিপদ-শঙ্কা

ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার সোয়ার্ম স্যাটেলাইট কনস্টেলেশন দীর্ঘ দিন ধরে পৃথিবীর এই দুর্বল অংশকে পর্যবেক্ষণ করছে। ২০১৪ সাল থেকে ২০২৫ পর্যন্ত দীর্ঘ ১১ বছরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের দক্ষিণ পূর্ব প্রান্তে দক্ষিণ অতলান্তিক মহাসাগরের উপর একটি নির্দিষ্ট অংশে ‘রক্ষাকর্তা’ দুর্বল হয়ে পড়েছে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:০১
পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রে অশনি সঙ্কেত দেখলেন বিজ্ঞানীরা।

পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রে অশনি সঙ্কেত দেখলেন বিজ্ঞানীরা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

মহাকাশের পদে পদে বিপদ। গহীন শূন্যের কোন আনাচ-কানাচে কোন বিপদ ওত পেতে আছে, বিজ্ঞানীরা পৃথিবীতে বসে তার সিকি ভাগও অনুমান করতে পারেন না। কিন্তু প্রকৃতির নিয়মেই সেই বিপদের হাত থেকে বাঁচার উপায় গড়ে নিয়েছে পৃথিবী। আমাদের গ্রহকে মহাকাশের যাবতীয় বিপদ থেকে আগলে রেখেছে বিস্তীর্ণ চৌম্বকক্ষেত্র। মহাকাশের উচ্চশক্তি সম্পন্ন বিভিন্ন কণা এই চৌম্বকক্ষেত্রের কারণেই পৃথিবীর কাছে ঘেঁষতে পারে না। পারে না কোনও ক্ষতি করতে। কিন্তু সম্প্রতি সেই চুম্বকেই বিপদ সঙ্কেত পাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের একটি নির্দিষ্ট অংশ দুর্বল হয়ে পড়ছে, মত বিজ্ঞানীদের। দীর্ঘ দিনের গবেষণা এই মতকে আরও জোরালো করেছে। দক্ষিণ অতলান্তিক সাগরের কাছে চৌম্বকক্ষেত্রের ওই দুর্বল অংশটি তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন। দাবি, দিন দিন দুর্বলতা বাড়ছে। কমছে চুম্বকের শক্তি। এমনকি, দুর্বলতার পরিধিও বাড়ছে। মোটেই একে ভাল সঙ্কেত বলে মনে করছেন না বিশেষজ্ঞেরা। বরং তাঁরা চিন্তিত, উদ্বিগ্ন।

ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার সোয়ার্ম স্যাটেলাইট কনস্টেলেশন দীর্ঘ দিন ধরে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের এই দুর্বল অংশকে পর্যবেক্ষণ করছে। সম্প্রতি এই সংক্রান্ত গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে ‘ফিজিক্স অফ দ্য আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটরি ইন্টেরিয়র্‌স’ নামের পত্রিকায়। ২০১৪ সাল থেকে ২০২৫ পর্যন্ত দীর্ঘ ১১ বছরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে দক্ষিণ অতলান্তিক মহাসাগরের উপর একটি নির্দিষ্ট অংশে চৌম্বকক্ষেত্র দুর্বল হয়ে পড়েছে। ধীরে ধীরে চৌম্বকশক্তি উধাও হচ্ছে সেখান থেকে। এই অঞ্চলটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সাউথ অ্যাটলান্টিক অ্যানোমালি’ বা এসএএ।

দক্ষিণ অতলান্তিকের কাছে চৌম্বকক্ষেত্রের অস্বাভাবিক আচরণ বিজ্ঞানীদের চোখে প্রথম ধরা পড়েছিল বিশ শতকে। এই অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে কোনও মহাকাশযান গেলে বরাবর উচ্চ রেডিয়েশন অনুভূত হত। ফলে মহাকাশযানে যান্ত্রিক ত্রুটি অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠত। কখনও কখনও সম্পূর্ণ ‘ব্ল্যাকআউট’ও অস্বাভাবিক ছিল না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই এসএএ-র পরিধি ২০১৪ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে আরও বেড়েছে। ডেনমার্কের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস ফিনলে বলেছেন, ‘‘দক্ষিণ অতলান্তিক অ্যানোমালি কোনও একটি ব্লক নয়। এর দক্ষিণ আমেরিকার দিকের অংশের চেয়ে আফ্রিকার দিকের অংশ বেশি পরিবর্তিত হচ্ছে। এই অঞ্চলে বিশেষ কোনও ঘটনা ঘটছে, যে কারণে এখানকার চৌম্বকক্ষেত্র দুর্বল হয়ে পড়ছে।’’

ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার গভীরে যে গলিত লোহার স্তর রয়েছে, মূলত তার মাধ্যমেই তৈরি হয় পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র। বিজ্ঞানীদের মতে, ২০২০ সালের পর থেকে আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিমে অতলান্তিকের উপর চৌম্বকক্ষেত্রের নির্দিষ্ট একটি অংশের শক্তি হু হু করে কমেছে। ফিনলের কথায়, ‘‘সাধারণত আমরা দেখি, দক্ষিণ গোলার্ধের কেন্দ্র থেকে চৌম্বকক্ষেত্রের রেখাটি বেরিয়ে আসে। কিন্তু দক্ষিণ অতলান্তিক অ্যানোমালির নীচে অপ্রত্যাশিত ভাবে আমরা একটি অঞ্চল দেখতে পাই, যেখান থেকে চৌম্বকক্ষেত্র বেরিয়ে আসার পরিবর্তে আবার কেন্দ্রের দিকে ফিরে যায়। স্যাটেলাইট তথ্য বলছে, এই অঞ্চলটি আরও পশ্চিমে আফ্রিকার দিকে সরছে।’’

পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র কোথাও শক্তিশালী, কোথাও খানিকটা দুর্বল। কৃত্রিম উপগ্রহের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গত ১১ বছরে সাইবেরিয়ার উপরে চৌম্বকক্ষেত্র বেশি শক্তিশালী হয়েছে। আবার, কানাডার উপরে তার শক্তি তুলনামূলক কমেছে। আগামী দিনে সোয়ার্ম স্যাটেলাইট চৌম্বকক্ষেত্র সম্পর্কে আরও তথ্য দেবে বলে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী। তা চৌম্বকশক্তির এই পরিবর্তন আরও ভাল ভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।

Interstellar Space Solar System Milky Way Galaxy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy