Advertisement
E-Paper

গুহামানবের কাল থেকেই ছারপোকা মানুষ ভালবাসে! নতুন গবেষণায় আড়াই লক্ষ বছরের পিছু নেওয়ার ইতিহাস

মানুষের সঙ্গে ছারপোকাদের প্রাচীন সম্পর্কের ইতিহাস নিয়ে আগেও বিস্তর গবেষণা হয়েছে। তবে জিন প্রযুক্তিগত পরীক্ষায় বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, আজ থেকে প্রায় ২,৪৫,০০০ বছর আগে মানুষ যখন গুহাবাসী ছিল, তখন থেকেই মানুষের পিছু নিয়েছিল ছারপোকারা।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২৫ ০৮:৫৮

— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

দেখতে দেখতে সবই কি সত্যি সত্যি বদলে যায়? প্রেম পাল্টায় বটে। শরীরও পাল্টায়। তবে ছারপোকাদের জন্য নয়। সাম্প্রতিকতম গবেষণা বলছে, শুধু মানুষের প্রতিই ছারপোকাদের একনিষ্ঠ প্রেম টিকে রয়েছে প্রায় আড়াই লক্ষ বছর ধরে। আদিম প্রস্তর যুগের গুহামানবদের রক্ত-গন্ধ যে ‘নেশা’ ধরিয়েছিল, তার রেশ ছারপোকার দল বয়ে চলেছে আজও।

মানুষের সঙ্গে ছারপোকাদের প্রাচীন সম্পর্কের এই ইতিহাস নিয়ে আগেও বিস্তর গবেষণা হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গিয়েছে, সেই সম্পর্ক আড়াই লক্ষ বছরের পুরনো। জিন প্রযুক্তিগত পরীক্ষায় বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, আজ থেকে প্রায় ২,৪৫,০০০ বছর আগে মানুষ যখন গুহাবাসী ছিল, তখন থেকেই মানুষের পিছু নিয়েছিল ছারপোকারা। তার আগে ছারপোকারা গুহায় থাকা বাদুড়দের রক্ত খেত। বাদুড়রাই ছিল তাদের খাদ্যের একমাত্র উৎস। তার পর এক দিন ছারপোকারা বাদুড়ের গুহাতেই থাকা নিয়ান্ডারথাল মানুষদের রক্তের স্বাদ পেয়ে যায়! সেই শুরু। তার পর থেকে ক্রমে ছারপোকারা দু’টি স্বতন্ত্র প্রজাতিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি প্রজাতি শুধু বাদুড়ের রক্ত ​​খেয়ে বেঁচে থাকে। অন্যটি শুধুই মানুষের রক্ত খায়।

সাম্প্রতিক এই গবেষণাটি ‘বায়োলজি লেটার্স’ নামে এক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গুহাবাসী মানুষ যখন যাযাবরের জীবন যাপন করতে শুরু করেছিল, তখন থেকে ছারপোকারাও সংখ্যায় কমতে শুরু করে। তার পর এক সময় যাযাবর মানুষ বসতি স্থাপনের দিকে ঝোঁকে। তখনই ফের হুহু করে বংশবৃদ্ধি করতে শুরু করে ছারপোকারা। সেও আজ থেকে প্রায় ১৩,০০০ বছর আগের কথা! পরবর্তীতে ক্রমে ক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে একে একে সভ্যতা গড়ে তোলে মানুষ। শুরু হয় নগরায়ন। ব্যাস, সংখ্যায় আরও বাড়তে থাকে ছারপোকারা।

ভার্জিনিয়া টেকের আর্বান এন্টোমোলজি বিভাগের অধ্যাপক ওয়ারেন বুথের কথায়, ‘‘বাগানে কিন্তু ছারপোকাদের দেখা মেলে না। কারণ, এরা বংশবিস্তারের জন্য সম্পূর্ণরূপে মানুষের উপর নির্ভরশীল।’’ এন্টোমোলজি হল জীববিদ্যার একটি শাখা, যেখানে মূলত কীটপতঙ্গ নিয়ে গবেষণা করা হয়। একই বিভাগের আর এক গবেষক লিন্ডসে মাইল্‌স বলেন, ‘‘অতীতে মানুষ যখনই বসতি গড়ে থিতু হয়েছে, তখনই উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়ে গিয়েছে ছারপোকাদের সংখ্যা। ছারপোকাদের জন্য এ যেন এক চুক্তির মতো!’’

ছারপোকার এই বিবর্তনের ইতিহাস জানা গিয়েছে ডিএনএ-র জিনোম বিশ্লেষণ করে। তবে এই গবেষণা শুধু মানুষ এবং ছারপোকাদের সম্পর্কই নয়, বরং সামগ্রিক ভাবে কীটপতঙ্গদের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের উপরেই আলোকপাত করতে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন ভার্জিনিয়া টেকের বিজ্ঞানীরা। কারণ, সেই আদিমকাল থেকেই মানবসভ্যতার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে থেকেছে এরাও। কখনও কখনও তার মাসুলও গুনতে হয়েছে মানুষকে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল বিউবোনিক প্লেগের সময়, যখন ইঁদুরের ত্বকে থাকা সংক্রামিত খুদে পোকা থেকে মানুষের মধ্যেও এই রোগ ছড়িয়েছিল। লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ গিয়েছিল সেই মারণরোগে। গবেষণাপত্রটির আর এক লেখক ব্রায়ান ভেরেলির কথায়, নতুন এই গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, জার্মান তেলাপোকা কিংবা কালো ইঁদুরদের থেকেও হাজার হাজার বছর আগে মানুষের সঙ্গে ছারপোকাদের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তবে পার্থক্য এটাই যে, ছারপোকারা কোনও রোগ ছড়ায়নি, মানুষের তেমন কোনও ক্ষতিও করেনি। ভেরেলি ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান সংক্রান্ত পরিসংখ্যানবিদ। তিনি বলেন, ‘‘এই গবেষণা থেকে প্রমাণ হয়, ছারপোকাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কতটা দীর্ঘ এবং দৃঢ় ছিল! এরা কিন্তু যে কোনও সময় মানুষকে ছেড়ে লাফিয়ে অন্য কোনও প্রাণীর শরীরে আশ্রয় নিতে পারত, কিন্তু তেমনটা তারা করেনি।’’

জার্মানির টিউবিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ক্লাউস রেনহার্ড-ও জানাচ্ছেন, আজ থেকে প্রায় ৪০,০০০ বছর আগে যখন আদিম মানুষ গুহাজীবন ছেড়ে যাযাবরের জীবন বেছে নেয়, সে সময় সত্যিই ভয়ানক এক জিনগত বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছিল ছারপোকাদের। সে সময় ছারপোকাদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গিয়েছিল। এর অবশ্যম্ভাবী ফল ছিল আন্তঃপ্রজনন, অর্থাৎ জিনগত ভাবে সম্পর্কিত দুই প্রাণীর প্রজনন। তাতে ছারপোকাদের জিনগত বৈচিত্র্য ধীরে ধীরে হারিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আদতে দেখা যায়, এতে ছারপোকাদের বিশেষ ক্ষতি হয়নি! শুধু তা-ই নয়, ছারপোকাদের আরও নানা ভাল দিক উল্লেখ করেছেন রেনহার্ড। তিনি বলেন, ‘‘ছারপোকারা খাবার না খেয়ে এক বছরেরও বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারে। একটি গর্ভবতী স্ত্রী ছারপোকাকে বাক্সবন্দি করে রাখলেও সে মাত্র ছ’মাসে ৩০,০০০-এরও বেশি সন্তান উৎপাদন করতে পারে, যার প্রত্যেকটিই জিনগতভাবে সম্পর্কিত! এমনকি, এরা এতই ভাল যে, রক্ত খাওয়ার আগে তারা মানুষের ত্বককে অসাড় করার জন্য এক প্রকার তঞ্চনরোধক প্রবেশ করিয়ে দেয়, যাতে ব্যথা না লাগে!’’

ভারত, পাকিস্তান থেকে আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, ইজ়রায়েল, ইরান... ছারপোকাদের বাস সর্বত্র। আমেরিকায় ছারপোকা নিয়ে বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়া মামলা-মোকদ্দমা পর্যন্ত চলে। ছারপোকা সংক্রান্ত আইনও রয়েছে নিউ ইয়র্কে। তবে যত যা-ই হোক, ছারপোকাদের মতো নাছোড়বান্দা প্রেমিকের হাত থেকে মানুষের মুক্তি নেই। আড়াই লক্ষ বছরের সম্পর্ক বলে কথা!

Bed Bug Bug Neanderthal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy