Advertisement
E-Paper

এত রাশি রাশি সোনা কে আনল এখানে? কী ভাবে এল এত এত গুপ্তধন?

কী ভাবে এল এই রাশি রাশি গুপ্তধন? কে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেল এত এত সোনাদানা, মণিমুক্তো, রত্ন, মাণিক্য? কোথা থেকে এল? কার ভাঁড়ারে ছিল ওই রাশি রাশি সোনাদানা, মণি-মাণিক্য, গুপ্তধন?

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৬ ১৪:৩৯

কী ভাবে এল এই রাশি রাশি গুপ্তধন?

কে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেল এত এত সোনাদানা, মণিমুক্তো, রত্ন, মাণিক্য?

কোথা থেকে এল? কার ভাঁড়ারে ছিল ওই রাশি রাশি সোনাদানা, মণি-মাণিক্য, গুপ্তধন?

এই ধরিত্রীর বুক ভরিয়ে দেওয়া সোনাদানা, মণি-মাণিক্য, গুপ্তধন এসেছিল ব্রহ্মাণ্ডের কোন মুলুক থেকে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যেই চলছিল চাপান-উতোর। কেউ বলছিলেন, তা নিয়ে এসেছিল বিশাল বিশাল গ্রহাণু (অ্যাস্টারয়েড)। কোটি কোটি বছর আগে। তারাই আমাদের এই গ্রহটিকে সজোরে ধাক্কা মেরে তাদের শরীর থেকে ঝরিয়ে দিয়ে গিয়েছিল ওই সব রত্ন-মাণিক্য। আবার কেউ কেউ বলছিলেন, তা নিয়ে এসেছিল বড় বড় উল্কারা (মেটিওরাইট)। অতীতে সেই একের পর এক উল্কাপাতের ঘটনাই নাকি আমাদের পক্ষে ‘শাপে বর’ হয়েছিল। ওই উল্কারাই ধরিত্রীর গা আর বুক ভরিয়ে দিয়েছিল সোনাদানা, নানা রত্ন আর মণি-মাণিক্যে।


গ্রহাণুর আঘাতে যে ভাবে সোনাদানা এসেছিল ধরায়। শিল্পীর কল্পনায়।

এই প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে জানা গেল, কল্কে জুগিয়েছে উল্কারাই! এই পৃথিবীর গা ভরিয়ে দেওয়ার জন্য যত রাশি রাশি সোনাদানা, রত্ন, মণি-মাণিক্য, গুপ্তধন রয়েছে এখন আমাদের এই বাসযোগ্য গ্রহে, তার বেশির ভাগটাই নিয়ে এসেছিল বড় বড় উল্কারা। ব্রহ্মাণ্ডের কোন সে সুদূর মুলুক থেকে। গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছে খ্যাতনামা বিজ্ঞান জার্নাল ‘নেচার’-এর সাম্প্রতিক সংখ্যায়। ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ আর্থ সায়েন্সেসের তিন অধ্যাপক ম্যাথিয়াস উইলবোল্ড, টিম এলিয়ট আর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিফেন মুরবাথের লেখা ওই গবেষণাপত্রটির নাম- ‘দ্য টাংস্টেন আইসোটপিক কম্পোজিশন অফ দ্য আর্থস্‌’ ম্যান্ট্‌ল বিফোর দ্য টার্মিনাল বোম্বার্ডমেন্ট’।

আরও পড়ুন- নাচতে নাচতে চাঁদ, সূর্যের ছবি তোলে গুবরে পোকা, দেখুন ভিডিও

ওই সব গুপ্তধন এসেছিল ঠিক কত দিন আগে?

এই প্রথম হাতে-কলমে পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেল, পৃথিবীর জন্মের (প্রায় ৪০০ কোটি বছর আগে) কুড়ি কোটি বছর পরেই ওই বড় বড় উল্কারা সজোরে ছুটে এসে ধাক্কা মেরেছিল পৃথিবীকে। ওই সজোর, সবল ধাক্কায় উল্কাগুলোর শরীর থেকে ঝরে পড়েছিল রাশি রাশি সোনাদানা, রত্ন, মণি-মাণিক্য।

ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ আর্থ সায়েন্সেসের আইসোটোপ গ্রুপের দুই অধ্যাপক ও অক্সফোর্ডের অধ্যাপক মুরবাথ ওই গবেষণাটি চালিয়েছিলেন গ্রিনল্যান্ড থেকে হদিশ মেলা সুপ্রাচীন শিলা-পাথরের (রক্‌স) ওপর। যে ‘রক’গুলোর বয়স প্রায় ৪০০ কোটি বছর। মানে, যখন এই সৌরমণ্ডলে পৃথিবীর মতো ছোট ছোট পাথুরে গুহগুলো জন্মাচ্ছে (ভারী গ্রহ বৃহস্পতি, শনির জন্মের অনেক পরে), সূর্যের কাছাকাছি এলাকাগুলোতে জমাট বাঁধা ঘন, অগ্নিগর্ভ গ্যাসের মেঘ (যে গ্যাসের মেঘ থেকে সূর্য়েরও জন্ম হয়েছিল) থেকে, গ্রিনল্যান্ডে হদিশ মেলা ওই ‘রক’গুলো তখনই জন্মেছিল।


সেই উল্কা-বৃষ্টি। যা এনেছিল সোনাদানা, মণি-মাণিক্য পৃথিবীতে।

কী দেখেছেন গবেষকরা?

তাঁরা ওই ‘রক’গুলোতে কতটা টাংস্টেন রয়েছে, তা পরীক্ষা করে দেখেছিলেন। টাংস্টেন অত্যন্ত বিরল আর বহু মূল্যবান মৌলিক পদার্থ। কতটা বিরল টাংস্টেন? এক গ্রাম ওজনের ‘রক’-এ এক গ্রামের দশ লক্ষ ভাগের মধ্যে মাত্র এক ভাগ থাকে টাংস্টেন। এই মৌল এতটাই বিরল। ফলে, বহু মূল্যবানও। তাঁরা ওই টাংস্টেনের একটি বিশেষ আইসোটোপ নিয়ে পরীক্ষা করছিলেন। তাতে তাঁরা দেখেন, এই পৃথিবীতে পাওয়া আধুনিক পাথরগুলোতে (রক্‌স) যতটা টাংস্টেন পাওয়া যায়, তার দশ লক্ষ ভাগের মধ্যে ১৫ শতাংশ করে টাংস্টেনের পরিমাণ কম থেকে যাচ্ছে গ্রিনল্যান্ড থেকে হদিশ মেলা ‘রক’গুলোতে।

কী ভাবে পৃথিবীতে এল সোনাদানা, দেখুন ভিডিও।

কেন এই পরিমাণ কম হচ্ছে? কীসের জন্য হচ্ছে?

কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স’-এর অধিকর্তা, বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘৪০০ কোটি বছর আগে যখন পৃথিবীর জন্ম হচ্ছে অগ্নিগর্ভ, জমাট বাঁধা ঘন গ্যাসের মেঘ থেকে, তখন ওই প্রচণ্ড তাপে লোহা গলে যায়। তার তরল স্রোত চলে যায় পঋথিবীর একেবারে অন্দরে। যাকে বলে, ‘আর্থস’ কোর’। তারই সঙ্গে পৃথিবীর অন্দরে (কোর) ঢুকে যায় সুপ্রচুর পরিমাণে সোনাদানা, প্ল্যাটিনাম, টাংস্টেন, নানা রকমের রত্ন, মণি-মাণিক্য। গুপ্তধন। বস্তুত পক্ষে, পৃথিবীর অন্দরে ওই সব গুপ্তধন এখনও যে পরিমাণে জমা রয়েছে, তার পুরোটা তুলে আনা সম্ভব হলে, গোটা পৃথিবীর গা’টাকে (আর্থ-সারফেস বা ভূ-পৃষ্ঠ) ৪ মিটার পুরু সোনাদানা, রত্ন, মণি-মাণিক্য, গুপ্তধন দিয়ে ঢেকে ফেলা যেত। তা হলে, পুরো গুপ্তধনটাই যদি ঢুকে যায় পৃথিবীর অন্দরে, সে ক্ষেত্রে তার উপরিভাগে এত রাশি রাশি সোনাদানা, মণি-মাণিক্য, গুপ্তধন এল কোথা থেকে? কে নিয়ে এল? কে এসে ভরিয়ে দিয়ে গেল ধরিত্রীর গা? দেখা গিয়েছে, যতটা ভাবা হয়েছিল, মূলত সিলিকেটে গড়া পৃথিবীর ‘ম্যান্ট্‌লে’, ওই সব গুপ্তধন রয়েছে তার কয়েক লক্ষ গুন বেশি। তার মানে, সেই সব গুপ্তধন পৃথিবীর অন্দরে (কোর) ঢুকে যেতে পারেনি। কারণ, পৃথিবীর অন্দরটা (কোর) তখন তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাই উল্কার ধাক্কায় যে রাশি রাশি গুপ্তধন, মণি-মাণিক্য, রত্ন, সোনাদানা আছড়ে পড়েছিল এই ধরিত্রীর বুকে, তা ‘ম্যান্ট্‌ল’-এই থেকে গিয়েছে। যা আমরা তুলে নিচ্ছি। নিতে পারছি। নিয়ে যাচ্ছি।’’

মুম্বইয়ের ‘টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ’ (টিআইএফআর)-এর পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক শুভব্রত মজুমদার বলছেন, ‘‘সেই জন্যই যে ‘রক’টা (গ্রিনল্যান্ডে হদিশ মেলা)-য় টাংস্টেন কম পাওয়া গিয়েছে, তা জন্মেছিল পৃথিবীর জন্মের সময়। তাই তখনও তার ওপর উল্কা এসে আছড়ে পড়েনি। ফলে, তার ওপর সোনাদানা, টাংস্টেনের মতো বিরল, বহু মূল্যবান রত্ন, মণি-মাণিক্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়নি উল্কারা। কিন্তু এই পৃথিবার আধুনিক ‘রক’গুলোর ওপর সেই মূল্যবান রত্নগুলোকে পাওয়া গিয়েছে আর তা অনেক বেশি পরিমাণে পাওয়া গিয়েছে। তার কারণ একটাই। তা হল, ওই ‘রক’গুলোর উল্কাপাত হয়েছিল একাধিক বার। আর প্রত্যেক বারই সেই উল্কাপাত থেকে সোনাদানা, মণি-মাণিক্য ঝরে পড়েছিল পৃথিবীর বুকে। শুধু তাই নয়, প্রায় ২০০০ কোটি টন ওজনের বেশ কিছু গ্রহাণুও অতীতে এই পৃথিবীকে সজোরে ধাক্কা মেরে প্রচুর সোনাদানা, রত্ন, মণি-মাণিক্য ঝরিয়ে গিয়েছে আমাদের এই বাসযোগ্য গ্রহটির বুকে।’’

where does all earth's gold come from Precious metals the result of meteorite bombardment, rock analysis finds
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy