Advertisement
E-Paper

ক্ষেত্র পাল্টেই কলকাতার ঘাড়ে তাপপ্রবাহ

আবহাওয়ায় এ আর এক বদল! খর গ্রীষ্মে উত্তর-পশ্চিম ভারত তাপপ্রবাহে ভাজা-ভাজা হবে, আর ঘেমে-নেয়ে একশা হবে পূর্ব ভারত কুড়ি বছর আগে পর্যন্ত এ-ই ছিল দস্তুর। কিন্তু এখন ব্যাপারটা বদলে গিয়েছে, তার থাবার নাগালে পড়েছে পূর্ব উপকূল, মায় গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গও। জ্বালা ধরানো গরমে নাস্তানাবুদ খাস কলকাতা! যার পিছনে তাপপ্রবাহ ক্ষেত্রের স্থানবদলেরই ভূমিকা দেখছেন আবহবিদেরা। কী রকম?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৪ ০২:২৭
পিচ গলা রাস্তায়। সোমবার কলকাতায় সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।

পিচ গলা রাস্তায়। সোমবার কলকাতায় সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।

আবহাওয়ায় এ আর এক বদল!

খর গ্রীষ্মে উত্তর-পশ্চিম ভারত তাপপ্রবাহে ভাজা-ভাজা হবে, আর ঘেমে-নেয়ে একশা হবে পূর্ব ভারত কুড়ি বছর আগে পর্যন্ত এ-ই ছিল দস্তুর। কিন্তু এখন ব্যাপারটা বদলে গিয়েছে, তার থাবার নাগালে পড়েছে পূর্ব উপকূল, মায় গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গও। জ্বালা ধরানো গরমে নাস্তানাবুদ খাস কলকাতা! যার পিছনে তাপপ্রবাহ ক্ষেত্রের স্থানবদলেরই ভূমিকা দেখছেন আবহবিদেরা। কী রকম?

ওঁদের ব্যাখ্যা: বছর পনেরো আগে তাপপ্রবাহের ক্ষেত্রটি কিছুটা পূর্বে সরে এসে মূলত মধ্যপ্রদেশ-ছত্তীসগঢ়ে ঘাঁটি গাড়ে। নতুন শতাব্দীর গোড়ায় তা আর একটু সরে এসে ওড়িশাকে দখল করেছিল। আর এ বার গ্রাস করেছে তামাম দক্ষিণবঙ্গকে। ফলে মে মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার নিরিখে কলকাতা-বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার কাছে গো-হারা হারছে রাজস্থানের জৈসলমের, ছত্তীসগঢ়ের রায়পুর কিংবা ওড়িশার রায়গঢ়া। কলকাতায় তো গত আট দিনে ছ’দিনই তাপপ্রবাহ বয়েছে! সোমবারও তা জারি ছিল। এ দিন মহানগরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের পাঁচ ডিগ্রি বেশি। আলিপুরের পূর্বাভাস: আজ, মঙ্গলবারও শহরে তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। থার্মোমিটারের পারদ ছাড়িয়ে যেতে পারে ৪১ ডিগ্রির বেড়া।

এবং চলতি গ্রীষ্মে এটি কলকাতার বুকে তাপপ্রবাহের তৃতীয় দফার হামলা, যা শুরু হয়েছিল গত সোমবার। মঙ্গল ও শনিবার তাপমাত্রা সামান্য নামলেও জ্বালা-পোড়ায় নিস্তার মেলেনি। আলিপুর হাওয়া অফিসের দাবি: কলকাতায় চলতি বছরের তাপপ্রবাহের দাপট অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। “রাজস্থানের মরু অঞ্চল, মধ্যপ্রদেশের বেহর, বা বিহার-ঝাড়খণ্ডের মালভূমিতে এমন পরিস্থিতি অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু পলিমাটির গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে এ ধরনের শুকনো, জ্বালা ধরানো গরম সত্যিই বিরল।” মন্তব্য এক আবহবিদের। কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (জলবায়ুবিদ্যা) বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “বছর দশেক ধরে ওড়িশায় তাপপ্রবাহের মাত্রা বেড়েছিল। এ বার একই চরিত্র দক্ষিণবঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।” প্রসঙ্গত, ওড়িশার বহু জায়গা এ মুহূর্তে ৪২-৪৩ ডিগ্রিতে পুড়ছে।

পাশাপাশি এ বার কালবৈশাখীর গরহাজিরার জন্যও তাপপ্রবাহ-ক্ষেত্রের স্থানবদলের দিকে আঙুল তুলছেন আবহবিজ্ঞানীদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, ছোটনাগপুর মালভূমির তাপমাত্রা অত্যধিক বাড়লে পশ্চিমী ঝড় তৈরির অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ওই তল্লাটের গরম বাতাস উপরে উঠে নীচের স্তরে শূন্যস্থান তৈরি করে, যা পূরণ করতে ধেয়ে যায় বঙ্গোসাগরের জোলো বাতাস। ঠান্ডা ও গরম হাওয়া পরস্পরের সংস্পর্শে এসে উল্লম্ব মেঘপুঞ্জ তৈরি করে। এরই পরিণতি পশ্চিমী ঝড় কিংবা কালবৈশাখী।

কিন্তু এ বছর মার্চ-এপ্রিলে কলকাতার তুলনায় রাঁচি-জামশেদপুর বরং শীতল ছিল। মে মাসেও তা-ই। ফলে পুরো প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াটি ব্যাহত হয়েছে। কালবৈশাখীর কার্যত দেখা মেলেনি। কালবৈশাখীর অভাবে পরিমণ্ডলের তাপমাত্রাও তেমন কমতে পারেনি।

অচেনা গরমে পূর্ব ভারত যখন জ্বলে-পুড়ে মরছে, তখন রাজস্থান-হরিয়ানাবাসী উপভোগ করছেন মোলায়েম গ্রীষ্ম, যা কিনা তাঁদের কাছেও নতুন! সেখানে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের উপরেই উঠছে না। মৌসম ভবনের ব্যাখ্যা, উত্তর ভারতে একের পর এক পশ্চিমী ঝঞ্ঝা, আর পশ্চিম ভারতে লাগাতার ঘূর্ণাবর্তের জেরে গত তিন মাসে উত্তর-পশ্চিমের প্রায় সব রাজ্যে নাগাড়ে ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। তাই সেখানে এ বার তাপপ্রবাহ চড়াও হতে পারেনি।

heat wave
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy