দাঁতে নয়, এক সময় ‘এনামেল’ ছিল আমাদের গায়ে! আমাদের গা থেকেও সোনা ঝরত!
এর মানে, সূর্যের আলো পড়লে যেমন মাছের গায়ের ‘আঁশ’ থেকে তা ঠিকরে বেরয় আর তাতে মাছকে ঝকঝকে দেখায়, এক সময় আমাদের গায়েও সেই রকম ‘এনামেল’-এর ‘আঁশ’ ছিল! মাছের মতোই ঝকঝকে ছিলাম আমরা!
‘ঋণ’ আমাদের কিছু কম নয়! মাছ আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে! আমাদের দাঁতের ‘এনামেল’টা তো বটেই। কালে-কালে যা আমরা পেয়েছি প্রাগৈতিহাসিক মাছের আঁশ বা ছাল থেকে। কিন্তু, ওই ‘এনামেল’টাও আগে আমাদের দাঁতে ছিল না। ছিল আমাদের গায়ে! হালের একটি গবেষণা এই চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। ‘প্যালিওন্টোলজি’ আর ‘জেনোমিক্স’ নিয়ে দীর্ঘ গবেষণার পর এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয় ও চিনের ‘ইন্সটিটিউট অফ ভার্টিব্রেট প্যালিওন্টোলজি অ্যান্ড প্যালিও-অ্যানথ্রোপলজি’ (আইভিপিপি)-র গবেষকরা। গবেষণার ফলাফল বলছে, প্রাগৈতিহাসিক মাছের গায়ের ‘আঁশে’ই প্রথম ‘এনামেল’-এর জন্ম হয়। সেই ‘এনামেল’, যা না-থাকলে কোনও স্থলচর মেরুদন্ডী প্রাণীরই ‘দাঁত’ থাকত না। তারা চিবিয়ে কিছু খেতে পারতো না। দাঁতে কিছু কাটতেও পারতো না! আমাদের শরীর সবচেয়ে কঠিন যে-পদার্থটি তৈরি করে, তার নাম-‘এনামেল’। প্রোটিনের তিন রকমের মিশ্রণ থেকে যে যৌগটি নীচে থিতিয়ে পড়ে, তার নাম-‘ক্যালসিয়াম ফসফেট’। এই ‘ক্যালসিয়াম ফসফেট’ শরীরে তৈরি না-হলে কখনওই ‘এনামেল’-এর জন্ম হত না। স্থলচর সব মেরুদন্ডী প্রাণীরই দাঁত থাকে মুখের ভিতরে। আমাদের, বাঁদরের, শিম্পাঞ্জি, গরিলার। কিন্তু, হাঙরের মতো কিছু কিছু মাছের ‘দাঁত’ থাকে দেহের বাইরেও। সেগুলি অবশ্য আদতে হাঙরের গায়ের ‘আঁশ’। তবে সেগুলিকে অনেক সময় ‘দাঁতের’ মতো কাজে লাগায় হাঙরেরা। ওই ‘আঁশ’ বা, ‘দাঁত’গুলিকে বলা হয়-‘ডার্মাল ডেন্টিকল্স’। আবার অতীতে মাছের এমন কিছু প্রজাতি ছিল, যারা এখন হারিয়ে গিয়েছে, তাদের গায়ের ‘আঁশ’-কে পুরোপুরি ঢেকে রেখেছে ‘এনামেল’-এর মতো দেখতে কিছু কলা। যাদের নাম-‘গ্যানোইন’। উত্তর আমেরিকায় এখনও ‘গার’ নামে এক ধরনের মাছ (বৈজ্ঞানিক নাম-‘লেপিসোস্টিয়াস’) পাওয়া যায়, যাদের এই ‘গ্যানোইন’ রয়েছে।