Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

অমিত বিক্রমে ইতিহাসের স্বপ্ন

উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া দূরে থাক, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেমে সোনা জিততে মরিয়া অমিত পাঙ্ঘাল একটা লড়াই শেষ করেই যে ফের নেমে পড়েছিলেন অনুশীলনে।

প্রত্যয়ী: সোনা জিতবেনই, বিশ্বাস পঙ্ঘালের। ফাইল চিত্র

প্রত্যয়ী: সোনা জিতবেনই, বিশ্বাস পঙ্ঘালের। ফাইল চিত্র

রতন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৬:১০
Share: Save:

ভারতীয় বক্সিংয়ে নতুন ইতিহাস তৈরির পরে রাশিয়ার একতারিনবুর্গে তাঁকে ফোনে ধরতে লেগে গেল প্রায় তিন ঘণ্টা। উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া দূরে থাক, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেমে সোনা জিততে মরিয়া অমিত পাঙ্ঘাল একটা লড়াই শেষ করেই যে ফের নেমে পড়েছিলেন অনুশীলনে।

‘‘আমি তো জওয়ান। একটা যুদ্ধে জেতার পরে প্রস্তুতি নিই পরের যুদ্ধ জেতার জন্য। সেটাই করছিলাম। ইতিহাস গড়েছি, রুপো জিতেছি, ভাল লাগছে। দুর্দান্ত অনুভূতি। কিন্তু আমার স্বপ্ন তো ফাইনাল জিতে সোনা জয়,’’ শুক্রবার সন্ধ্যায় কথা বলার সময় ভারতীয় বক্সিংয়ের বিস্ময় প্রতিভার গলায় ধরা পড়ে জেদ। যার সঙ্গে মিশে থাকে রুক্ষতা এবং একাগ্রতা। সেনা জওয়ানদের যা মজ্জাগত। যাঁর ফোনে অমিতকে ধরা গেল, তিনি ভারতীয় দলের চিফ কোচ সি এ কুটাপ্পা। ছাত্রকে পাটিয়ালার শিবিরে দিনের পর দিন আরও আগ্রাসী করে তুলেছেন যিনি, সেই কুটাপ্পা বলছিলেন, ‘‘বক্সিং রিং-এ অমিত প্রচণ্ড চতুর। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে লড়তে চায় না। রুপো নিশ্চিত করার পরে আমাকে বলল, চলুন কালকের ফাইনালের প্রতিদ্বন্দ্বীকে কোথায় মারতে হবে, তা দেখিয়ে দেবেন।’’ কোচের কাছ থেকে ফোন নিয়ে এ বার আরও আগ্রাসী হরিয়ানার ছেলে। ‘‘কাল ফাইনালে সামনে রিয়ো অলিম্পিক্সের চ্যাম্পিয়ন। তাতে ভয় পাচ্ছি না। সোনা জিতব এবং স্যারের গলায় তা পরিয়ে দেব।’’

অমিত শুক্রবার দুপুরে রাশিয়ার মাটিতে যেটা করলেন, তা ভারতীয় বক্সিং কখনও দেখেনি। জাকার্তা এশিয়াডে তিনি সোনা জিতেছিলেন ৪৯ কেজি বিভাগে। টোকিয়ো অলিম্পিক্সের কথা ভেবে তা বদলে ৫২ কেজি বিভাগে নেমেছেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে। নেমেই ইতিহাস। সেমিফাইনালে তীব্র লড়াইয়ের পরে অমিত ৩-২ হারিয়ে দেন কাজ়াখস্তানের সাকেন বিবোসিনভকে। আজ, শনিবার ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বী উজ়বেকিস্তানের সাখোবিদিন জোরভ। অলিম্পিক্সের সোনাজয়ী প্রতিদ্বন্দ্বী সামনে। তাতেও ঘাবড়াচ্ছেন না অমিত। বললেন, ‘‘আমাদের রণণীতি তৈরি।’’

হরিয়ানার রোহতক জেলার মায়ানা গ্রামের কৃষক পরিবারে জন্ম অমিতের। চৌধরি বিজেন্দ্র সিংহ পাঙ্ঘালের দুই ছেলের মধ্যে ছোট অমিত। দাদা অজয় বক্সার ছিলেন। তিনিই অমিতকে নিয়ে আসেন নিজের খেলায়। ২০০৭ সালে ছোট্টুরাম বক্সিং অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করে দেন বারো বছরের অমিতকে। জাতীয় প্রতিযোগিতায় প্রথমবার নেমেই চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় প্রথম পদক ২০১৭ এশীয় চ্যাম্পিয়নশিপে। ব্রোঞ্জ জেতেন। ২০১৮ সালে জোড়া পদক। জাকার্তা এশিয়াডে সোনা এবং কমনওয়েলথ গেমসে রুপো। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের পরে নিজের লক্ষ্যও ঠিক করে ফেলেছেন অমিত। বলে দেন, ‘‘সামনের বছর এপ্রিল ও মে-মাসে অলিম্পিক্স বাছাই পর্ব আছে। এশীয় অঞ্চলে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নেই। সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে।’’ বোঝা গেল, জওয়ানের মনোভাব নিয়ে বক্সিং রিং-এ সোনা ফলাতে অমিত কতটা মরিয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

World Boxing Championships Amit Panghal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE