Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
সিডনির পিচে স্পিন ধরতে পারে, নাটক অশ্বিনকে নিয়ে

আজ ফিটনেস পরীক্ষা, প্রায় ফিট হলেও খেলানোর চেষ্টা

সত্যিই যদি বৃহস্পতিবার থেকে শুরু টেস্টে নেমে পড়েন অশ্বিন, তা হলে অবাক করার মতোই ঘটনা ঘটবে। কারণ, চব্বিশ ঘণ্টা আগে প্র্যাক্টিস সেশনে দারুণ ছন্দে দেখা যায়নি তাঁকে। ট্রেনার শঙ্কর ভাসুর সঙ্গে বেশির ভাগ সময় কাটাতে দেখা যায়।

স্বপ্নপূরণ: সিডনিতে ভারতীয় দলের অনুশীলনের ফাঁকে ভক্তদের নিজস্বীর আবদার মেটাচ্ছেন অধিনায়ক বিরাট কোহালি। বুধবার। এপি

স্বপ্নপূরণ: সিডনিতে ভারতীয় দলের অনুশীলনের ফাঁকে ভক্তদের নিজস্বীর আবদার মেটাচ্ছেন অধিনায়ক বিরাট কোহালি। বুধবার। এপি

সুমিত ঘোষ 
সিডনি শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:২৭
Share: Save:

সিরিজের শেষ টেস্টে একটাও বল হওয়ার আগেই চূড়ান্ত নাটক উপস্থিত। ভারতীয় প্রথম একাদশে অশ্বিনকে রাখা নিয়ে। এবং, বুধবার রাতের দিকে যা ইঙ্গিত পাওয়া গেল, প্রায় ছিটকে যেতে যেতে সিডনি টেস্টে নাটকীয় ভাবে অশ্বিন প্রথম একাদশে ঢুকে পড়লে অবাক হওয়ার নেই।

সত্যিই যদি বৃহস্পতিবার থেকে শুরু টেস্টে নেমে পড়েন অশ্বিন, তা হলে অবাক করার মতোই ঘটনা ঘটবে। কারণ, চব্বিশ ঘণ্টা আগে প্র্যাক্টিস সেশনে দারুণ ছন্দে দেখা যায়নি তাঁকে। ট্রেনার শঙ্কর ভাসুর সঙ্গে বেশির ভাগ সময় কাটাতে দেখা যায়। এক প্রস্ত ফিটনেস টেস্ট এ দিন হয় এবং তাতে খুব ভাল ফল করতে পারেননি অশ্বিন। নেটেও খুব কম বোলিং করেন। এ সব দেখে অনেকেরই মনে হতে থাকে, তলপেটের বাঁ দিকে চোট পাওয়ার পরে তিনি এখনও একশো শতাংশ ফিটনেস ফিরে পাননি। মূল নেট— যেখানে ব্যাটিং-বোলিং চলছিল, সেখান থেকে বেশ খানিকটা আগে অশ্বিনকে বেরিয়েও যেতে দেখা যায়। সঙ্গে ট্রেনার ভাসু। এসসিজি-র মধ্যে নিয়ে গিয়ে তাঁর ফিটনেস যাচাই করার চেষ্টা করছিলেন ট্রেনার।

কিন্তু খুব আশাব্যঞ্জক ফল যে পাওয়া যায়নি, কিছুক্ষণের মধ্যেই তা পরিষ্কার হয়ে যায়। বিরাট কোহালি প্রাক-ম্যাচ সাংবাদিক সম্মেলনে করতে এলে প্রথমে ঘোষণা করে দেওয়া হয়, অশ্বিন এখনও একশো শতাংশ ফিট নন। তাই সিডনিতেও তিনি নামতে পারছেন না। ঘোষণা যখন করা হয়, তখন পাশেই বসা কোহালি। এর পরে সাংবাদিক সম্মেলন শুরু হলে একের পর এক প্রশ্ন হতে থাকে দলের প্রধান স্পিনারকে নিয়ে। কোহালি যে রকম উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলেন, তাতে মনেই হয়নি যে, অশ্বিনের খেলার আর কোনও সম্ভাবনা রয়েছে। অধিনায়ক বরং বলে যান, ‘‘অশ্বিনের না খেলতে পারাটা দলের জন্য বড় আঘাত তো বটেই, ও নিজেও খুব হতাশ।’’ ফের প্রশ্ন করা হয়, অশ্বিনের অভাব কতটা অনুভূত হবে? কোহালি বলেন, ‘‘ওর মতো বোলার না থাকাটা বড় ক্ষতি সন্দেহ নেই। তবে হনুমা বিহারী কাজ করে দিচ্ছে। দিনে ১২-১৩ ওভার করে দেওয়ার মতো দক্ষতা ওর রয়েছে। হনুমা অনেকটাই পরিস্থিতি সামলে দিতে পারবে বলে আমরা আশাবাদী।’’

তত ক্ষণে সকলে ধরে নিয়েছে, পার্‌থ, মেলবোর্নের মতো সিডনিতেও খেলা হচ্ছে না অশ্বিনের। ভারত অধিনায়কের পরে সাংবাদিক সম্মেলন করতে আসেন টিম পেন। অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকেরও প্রতিক্রিয়া চাওয়া হয় অশ্বিনের না-খেলা নিয়ে। কিন্তু এর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পরিস্থিতি ঘুরে যায়। ভারতীয় শিবির থেকে ফের সাংবাদিকদের জানানো হয় যে, অশ্বিনকে নিয়ে নতুন আপডেট আছে। তিনি পুরোপুরি সিডনি টেস্ট থেকে ছিটকে যাননি। তাঁকে তেরো জনের দলে রাখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে টেস্ট শুরুর সকালে।

ভারতীয় প্রথম একাদশে অশ্বিনকে রাখা নিয়ে চূড়ান্ত নাটক উপস্থিত।—ছবি এএফপি।

চলতি সিরিজে নতুন প্রথা চালু করেছে কোহালির দল। ম্যাচের আগের দিন বারো জনের দল জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মেলবোর্নে তো প্রথম একাদশই বলে দেওয়া হয়েছিল। এ দিন অশ্বিনকে নিয়ে দ্বিতীয় আপডেট দেওয়ার সময়ে জানানো হল, তেরো জনের দল ঘোষণা করা হবে দ্রুতই। যদিও ‘দ্রুত’ বলতে পরবর্তী বুলেটিন এল ঘণ্টা দু’য়েক পরে। তেরো জনের দলে নেই ইশান্ত শর্মা। তাঁর সামান্য চোট আছে বলে জানানো হল। কিন্তু মেলবোর্নে খেলা রবীন্দ্র জাডেজার সঙ্গে রাখা হয়েছে অশ্বিন এবং কুলদীপ যাদব দুই স্পিনারকে। আবার মহম্মদ শামি এবং যশপ্রীত বুমরার সঙ্গে অতিরিক্ত পেসার হিসেবে আছেন উমেশ যাদব। আনন্দবাজারে দেওয়া ইঙ্গিত মতো, কে এল রাহুল ফিরছেন ওপেনার হিসেবে। প্রিয় বন্ধু মায়াঙ্ক আগরওয়ালের সঙ্গে শুরুতে যাবেন তিনি। রোহিত শর্মা না থাকায় হনুমা বিহারী ফিরে যাচ্ছেন ছয় নম্বরে।

ভারতের ঘোষিত তেরো জনের দলটি এ রকম: কে এল রাহুল, মায়াঙ্ক আগরওয়াল, চেতেশ্বর পূজারা, বিরাট কোহালি (অধিনায়ক), অজিঙ্ক রাহানে (সহ-অধিনায়ক), হনুমা বিহারী, ঋষভ পন্থ, রবীন্দ্র জাডেজা, আর অশ্বিন, মহম্মদ শামি, যশপ্রীত বুমরা, উমেশ যাদব এবং কুলদীপ যাদব।

যা বোঝা যাচ্ছে, অশ্বিনকে নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলার পরেও মত পরিবর্তন করে ভারতীয় দল। সাংবাদিক সম্মেলনে আসার আগে হেড কোচ রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনায় মগ্ন থাকতে দেখা গিয়েছিল কোহালিকে। সেখানে তখন উপস্থিত ছিলেন আরও দুই মস্তিষ্ক— বোলিং কোচ বি অরুণ এবং ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার। দেখে মনে হচ্ছিল, অশ্বিন এবং সম্ভাব্য প্রথম একাদশ নিয়েই কথাবার্তা চলছে। এর পরে কোহালি সাংবাদিক সম্মেলনে আসেন। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে মিডিয়া ম্যানেজার ঘোষণা করেন, অশ্বিন খেলতে পারবেন না। মনে করা হচ্ছে, সাংবাদিক সম্মেলন সেরে ড্রেসিংরুমে ফেরার পরে কোহালির সম্ভবত মনে হয়, বড্ড তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছেন না তো তাঁরা? ম্যাচের দিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে ক্ষতি কী? বিশেষ করে সিডনিতে বল ঘুরবে বলেই বদ্ধমূল ধারণা ভারতীয় শিবিরের। এ দিন কিউরেটর পিচের উপর থেকে পর্দা সরিয়ে সাংবাদিকদের দেখালেন। বাইশ গজে হাল্কা সবুজ ভাব রয়েছে। কিউরেটর বোঝানোর চেষ্টা করলেন যে, সিডনিতে প্রথাগত ভাবে বল ঘুরলেও এ বার না কি শুরুর দিকে পেসাররাও সাহায্য পাবেন ঘাস থাকার জন্য। তাঁর এই ব্যাখ্যায় অবশ্য গলছে না ভারতীয় শিবির। তাদের মনে হচ্ছে, সিডনিতে তৃতীয় দিন থেকেই বল ঘুরবে এবং স্পিনের জোড়া ফলা নিয়ে আক্রমণে যাওয়াটা খারাপ সিদ্ধান্ত হবে না।

প্রশ্ন হচ্ছে, জাডেজা যদি প্রথম স্পিনার হন তা হলে তাঁর দোসর কে হবেন? অশ্বিন যদি নব্বই শতাংশ ফিটও হয়ে যেতে পারেন, তা হলে সিডনির বাইশ গজের কথা মাথায় রেখে তাঁকে খেলানোর ঝুঁকি নেওয়া হবে। তার জন্য আজ, বৃহস্পতিবার সকালে মাঠে গিয়ে আর এক প্রস্ত ফিটনেস টেস্ট হবে অশ্বিনের। তিনি যদি মোটামুটি আশি শতাংশ ফিটনেসও দেখাতে পারেন, খেলার সম্ভাবনা থাকবে। একান্তই যদি তিনি না পারেন, চায়নাম্যান কুলদীপ যাদবের জন্য দরজা খুলতে পারে।

লর্ডসে মেঘলা আবহাওয়ায় কুলদীপকে খেলিয়ে ভুল করেছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। তার পর থেকে চায়নাম্যান বোলার আর টেস্ট খেলেননি ভারতের হয়ে। তিনি অনেক দিন টেস্ট ম্যাচের বাইরে, সেটা তাঁর বিপক্ষে যেতে পারে। তার চেয়ে আশি শতাংশ ফিট অশ্বিনকে ঝুঁকি নিয়ে খেলানো বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে কারও কারও মনে হচ্ছে। আবার কেউ কেউ মনে রাখছেন সাউদাম্পটনের ঘটনা। আধা-ফিট অশ্বিনকে খেলিয়ে ডুবতে হয়েছিল দলকে। পিচে ক্ষত তৈরি হওয়া সত্ত্বেও সেটার ফায়দা তুলতে ব্যর্থ হন দলের প্রধান স্পিনার।

যদিও যত সময় এগোল বুধবার, তত মনে হতে থাকল সাউদাম্পটনের ভূত কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন কোহালিরা। এটা সিডনি এবং এখানে আশি শতাংশ ফিটনেস নিয়েও অশ্বিন বিধ্বংসী হয়ে উঠতে পারেন। কুলদীপের অনভিজ্ঞতা তাঁকে কিছুটা পিছিয়ে রাখছে। অশ্বিন যদি সম্পূর্ণ ভাবে ফিটনেস পরীক্ষায় ব্যর্থ হন, তা হলে দ্বিতীয় স্পিনার খেলালে নাইট রাইডার্সের চায়নাম্যান ছাড়া উপায় থাকবে না।

আবার এ-ও শোনা যাচ্ছে যে, অশ্বিন যদি ছিটকেই যান, তখন তিন পেসার-এক স্পিনারে নামা হবে কি না, সেই দরজাও খোলা রাখা হচ্ছে। কারণ, পিচে হাল্কা ঘাস থাকা। সিডনিতে মাঝেমধ্যেই ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে। মেঘলা হয়ে যাচ্ছে। সেই পরিবেশে বাড়তি পেসার কাজে লাগলেও লাগতে পারে। সেই কারণে উমেশ যাদবকে তেরো নম্বর সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।

সরকারি ভাবে টেস্ট শুরু সিডনির সময় সাড়ে দশটায়। ভারতের জন্য ‘ম্যাচ’ শুরু হয়ে যাচ্ছে তার অনেক আগে থেকেই। যখন ফিটনেস টেস্ট নেওয়া হবে দলের প্রধান স্পিনারের!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE