Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
ICC World Cup 2019

কেন দেখা হবে না উইকেট সংখ্যা, ফাইনালে কিউয়িদের হারের পর প্রশ্ন ক্রিকেট মহলের

নিউজিল্যান্ডের হারের কারণ নিয়ে হতাশা ক্রিকেট মহলে। ছবি: পিটিআই

নিউজিল্যান্ডের হারের কারণ নিয়ে হতাশা ক্রিকেট মহলে। ছবি: পিটিআই

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৯ ১৭:৩৬
Share: Save:

এর আগেও লর্ডসের মাঠ একাধিক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী থেকেছে। সেই লর্ডসেই ছিল ২০১৯-এর ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল। পঞ্চম বারের জন্য বিশ্বকাপ ফাইনাল অনুষ্ঠিত হল লর্ডসে। তবে এ বারের বিশ্বকাপের ফাইনালের মতো টানটান উত্তেজনার আর কখনও দেখেনি ক্রিকেট বিশ্ব। যে ম্যাচে ক্রিকেট-জনতা দেখল এক অদ্ভুত জয়। সাধারণ দর্শকের সময়ও লাগল কোন নিয়মে জয়, তা বুঝতে। অনেকে ভাবলেন লিগ টেবিলে নিউজিল্যান্ডের চেয়ে ওপরে থাকার জন্য কাপ জিতল ইংল্যান্ড। বিষয়টি বোধগম্য হয় কিছু ক্ষণ পরে। জানা যায়, ম্যাচে কিউয়িদের চেয়ে বেশি বাউন্ডারি মারায় জিতেছে ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপ জয়ের এক আলাদা তৃপ্তি আছে। কিন্তু প্রথম বার বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদে একটু হলেও যেন চোনা পড়ে গেল ইংল্যান্ডের। ১০০ ওভারের ম্যাচ শেষ হয় সমান সমান অবস্থায়। সুপার ওভারও শেষ হয় অমীমাংসিত ভাবে। এই অবস্থায় কী করে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে শুধুমাত্র বাউন্ডারি মারার সংখ্যা? এই প্রশ্নই ঘুরছে ফ্যান থেকে নেটিজেনদের মধ্যে।

চার বছরের অপেক্ষা। ১০ দলের লড়াই। ৪৪ দিন ধরে চলা মেগা টুর্নামেন্ট। একাধিক টানটান ম্যাচ। সেই টুর্নামেন্টের মীমাংসা হল কি না দু’ দলের মধ্যে কে বেশি চার মেরেছে তাই দিয়ে! ক্রিকেটে কি তা হলে শুধু বেশি বাউন্ডারি মারাই প্রধান লক্ষ্য? 'জেন্টলম্যানস গেম' বলা হয় ক্রিকেটকে। বোলার বুদ্ধি খাটিয়ে বল করে উইকেট নেন। ধীরে ধীরে সিঙ্গলস নিয়ে ইনিংস গড়েন ব্যাটসম্যান। কত রকমের মাইন্ড গেম চলে, তার ইয়ত্তা নেই। একের পর এক উইকেট হারানোর পরে ব্যাটসম্যান দাঁত কামড়ে পড়ে থেকে ইনিংস গড়েন, বোলারের মারাত্মক বাউন্সারের ছোবল সহ্য করেও ব্যাট করে চলার তো তা হলে কোনও মূল্য রইল না! বিশ্বকাপ ফাইনালের পরে এ সব প্রশ্ন উঠছে। একটা ফাইনাল কত বিতর্ক তৈরি করে দিয়ে গেল! লর্ডসের হার নিউজিল্যান্ড শিবিরকে ক্ষতবিক্ষত করে দেওয়ার কথা। গত বারের হারের থেকেও এই হার যে বেশি যন্ত্রণার। কেন উইলিয়ামসন কি কোনও দিন ভুলতে পারবেন এই হার?

৫০ ওভারে ২৪১ রান করে দু’ দলই। কিন্তু সেই রান তুলতে নিউজিল্যান্ডের থেকে বেশি উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। কিউয়ি ফ্যান তো বটেই, ক্রিকেটবিশ্বের একটা বড় অংশের দাবি, কেন সেই বিষয়টা গ্রাহ্য করা হবে না? অনেকে আবার মনে করেন, এই অবস্থায় যুগ্ম বিজয়ী ঘোষণা করাই যেত। ১০০ ওভারের শেষে দুটো দেশেরই রান সংখ্যা সমান। সুপার ওভারেও রান সমান সমান। অর্থাৎ চ্যাম্পিয়ন দল ইংল্যান্ড ক্রিকেটীয় বিচারে কোনও অবস্থাতেই ফাইনালে হারাতে পারেনি কিউয়িদের। অগত্যা আর কী! যে বেশি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছে, সেই দলকেই চ্যাম্পিয়ন করে দেওয়া হোক।বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো মহা মঞ্চে এ ভাবে হারটা মেনে নিতে পারছেন না কেউই। উইলিয়ামসনদের সমবেদনা জানাচ্ছেন প্রাক্তনরাও। ভারতের প্রাক্তন কিংবদন্তি সচিন তেন্ডুলকর টুইট করে বলেন, ‘প্রথম বল থেকে ৬১২ বল অবধি টানটান উত্তেজনার খেলা, খারাপ লাগছে নিউজিল্যান্ডের জন্য। ওরা সবই করেছে ইংল্যান্ড যা করেছে, কিন্তু বিশ্বকাপ জেতার জন্য সেটাও যথেষ্ট হল না।’

আরও পড়ুন: পাঁচ না ছয়, কত রান হওয়া উচিত ছিল ফাইনালের ওই বলে? জেনে নিন নিয়ম কী বলছে

এই রকম নিয়মের বেড়াজালে হেরে যাওয়া সত্যিই দুঃখের। ২০১৮-র সেপ্টেম্বর থেকে ধার্য হওয়া আইসিসি-র নতুন নিয়ম অনুযায়ী সুপার ওভার ড্র হলে বাউন্ডারি যে দল বেশি মেরেছে তাদের জয়ী ঘোষণা করা হবে। কথা উঠেছে গাপ্তিলের থ্রো স্টোকসের ব্যাটে লেগে হওয়া চারে ছয় রান দেওয়া নিয়েও। কারও মতে, এটা পাঁচ রান হওয়ার কথা ছিল। আইসিসি-র নিয়মও সে রকমই বলছে। যদিও বিসিসিআই-এর আম্পায়ার অভিজিত ভট্টাচার্য বলছেন, "আমি সাইমন টফালের সঙ্গে একমত। আমারও মনে হয় ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা ক্রস করার আগেই বল ছুঁড়েছেন গাপ্তিল। তবে আম্পায়াররা ৬০০ বল মাঠে দাঁড়িয়ে কাজ করছেন, তার মধ্যে ৪-৫টা বলে খারাপ ডিসিশন হলে সেই নিয়েই কথা হয়। বাকি এতগুলো বলে যে তাঁরা নিপুন ভাবে কাজ করছেন তার কৃতিত্ব কিন্তু কখনোই দেওয়া হয়না।"

২০১৯ ক্রিকেট বিজয়ী ইংল্যান্ড। ছবি: পিটিআই

অনেক সময়ে প্রশ্ন ওঠে ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। ক্রিকেটের বিভিন্ন নিয়ম সেই দিকে ইঙ্গিতও করে। কিন্তু, গতকাল ফাইনালে এই বাউন্ডারি বেশি মারার জন্য জয়, সেই ইঙ্গিতকে আরও স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিল। ব্যাটসম্যানদের কৃতিত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হল, বোলারদের উইকেট নেওয়ার জায়গায়। তা হলে কি বোলাররা ক্রিকেটে ‘দুয়োরানি’? কলকাতায় হওয়া প্রথম 'পিঙ্ক বল' ম্যাচের আম্পায়ার অভিজিত ভট্টাচার্য বলছেন, "আইসিসি-র এই নিয়ম কিন্তু হঠাৎ ফাইনালে ঠিক করা হয়েনি। খেলোয়াড়রা এই নিয়ম জেনেই খেলতে নেমে ছিলেন। তাই এখন এই নিয়ে কথা বাড়িয়ে খুব বেশি লাভ নেই।"

অভিজিতবাবুর মতে, আম্পায়ারদের ভুলগুলো এখন অনেক বেশি মাত্রায় মানুষের কাছে মেলে ধরছে টেকনোলজি। আমাদের মনে রাখা উচিত তাঁরা কিন্তু নিজেদের খালি চোখে মাঠে দাঁড়িয়ে কাজ করছেন। সেখানে মানুষের ভুল হওয়াই স্বাভাবিক। তিনি আরও বলেন, আইসিসি-র নিয়মও বার বার বদল হয়েছে সময়ের সঙ্গে। সেই পরিবর্তন ক্রিকেট খেলাটাকে আরও ত্রুটিমুক্ত করার জন্য। কিন্তু নিয়মের কার্যকারিতা তখনই বোঝা যায় যখন সেই নিয়মের প্রয়োগ হয়। হয়তো এরপর আবারও পাল্টে যাবে ক্রিকেটের নিয়ম।

আলোচনা, যুক্তি পাল্টা যুক্তি চলতেই থাকবে। পাল্টানো যাবে না মহাম্যাচের ফলাফল। ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরুর ৪৪ বছর পর জিতল ক্রিকেট আবিষ্কারের দেশ। কিন্তু সেই জয় মসৃণ হল না, রয়ে গেল বেশ কিছু প্রশ্ন ও দ্বন্দ্ব। অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট, কোন বলে কী ঘটে যাবে আগে থেকে বলা মুশকিল। সেখানে এই ভাবে একটি ম্যাচের ফল নির্ধারণে খুশি নন ক্রিকেটপ্রেমীরা।

আরও পড়ুন: আল্লা সঙ্গে ছিলেন, বিশ্বকাপ জিতে বললেন অইন মর্গ্যান

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE