Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ব্যকরণ না জানলে বিপদে লুকিয়ে গোলাপি বলে

গোলাপি বলের হাই-প্রোফাইল টেস্ট আড়াই দিনও স্থায়ী হয়নি। এই বলের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কী ভাবছেন জেলার প্রশিক্ষকেরা। খোঁজ নিলেন সৌমেশ্বর মণ্ডলএতদিন লাল বলে খেলা হলেও গোলাপি বলে টেস্ট ম্যাচের প্রয়োজনীয়তা দেখা গেল কেন? গোলাপি বল কি আদৌও ভাল ক্রিকেটের জন্য উপযুক্ত? আড়ম্বর ও উন্মাদনার বাইরে গিয়ে ইডেন টেস্টে ক্রিকেট কী পেল? এই প্রশ্নই ঘুরছে শহর থেকে জেলায়।

পরীক্ষামূলক: ফিটনেস না থাকলে বিপজ্জনক হতে পারে ফিল্ডিংও। ইডেন টেস্টে। ফাইল চিত্র

পরীক্ষামূলক: ফিটনেস না থাকলে বিপজ্জনক হতে পারে ফিল্ডিংও। ইডেন টেস্টে। ফাইল চিত্র

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৬
Share: Save:

মাঠে গোলাপি আলোর ছটা, মাঠভর্তি দর্শক, আতসবাজির রোশনাই, গান-বাজনা, উত্তেজনা, টিকিটের আকাশছোঁয়া চাহিদা। দেশের প্রথম গোলাপি বলে টেস্টের আগে ইডেন তথা কলকাতা শহরের ছবি ছিল এমনই। তবে ভারত-বাংলাদেশের সেই হাইভোল্টেজ টেস্ট শেষ হয়েছে আড়াই দিনেরও কম সময়ে। তারপরেই গোলাপি বলের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে।

এতদিন লাল বলে খেলা হলেও গোলাপি বলে টেস্ট ম্যাচের প্রয়োজনীয়তা দেখা গেল কেন? গোলাপি বল কি আদৌও ভাল ক্রিকেটের জন্য উপযুক্ত? আড়ম্বর ও উন্মাদনার বাইরে গিয়ে ইডেন টেস্টে ক্রিকেট কী পেল? এই প্রশ্নই ঘুরছে শহর থেকে জেলায়।

বিশ্বে প্রথম গোলাপি বলের টেস্ট খেলা হয়েছিল ২০১৫ সালের নভেম্বরে। অ্যাডিলেডের মাঠে সেই খেলায় অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয় নিউজিল্যান্ড। ভারতে গোলাপি বলে খেলা প্রথম হয়েছিল ২০১৬ সালের দলীপ ট্রফির একটি ম্যাচে। সিএবি-ও স্থানীয় সুপার লিগের একটি ফাইনাল গোলাপি বলে করেছিল। সেই ম্যাচে খেলেছিল মোহনাবাগান ও কালীঘাট। এ বার দেশের প্রথম গোলাপি বলের টেস্টের সাক্ষী হল কলকাতার ইডেন উদ্যান।

টেস্টকে আকর্ষণীয় করতে ও টেস্ট মাঠে দর্শক উপস্থিতি বাড়ানোর জন্যই এই বিশেষ বলে খেলা শুরু হয়েছিল। একই কারণে ঘরোয়া ক্রিকেটেও এই বলের নিয়মিত ব্যবহার শুরু হতে পারে। সেই সম্ভাবনা মাথায় রেখে এখন থেকেই গোলাপি বলে অনুশীলন শুরু করে দিতে চাইছে জেলার ক্রিকেট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলি। কয়েকটি জায়গায় সেই অনুশীলন শুরুও হয়েছে।

একুশ শতকের শুরু থেকে একদিনের ক্রিকেটের রমরমা শুরু হওয়ার পরে টেস্টের জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে কমছিল। তারপরে আসে কুড়ি ওভারের ক্রিকেট। টেস্ট নিয়ে আগ্রহ আরও কমে যায়। সেই জন্যই বিকল্প ভাবা শুরু হয়েছিল। তখনই দিন-রাতের টেস্টের ভাবনা মাথায় এসেছিল ক্রিকেট সংগঠকদের। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, লাল বলের দৃশ্যমানতা কম। তাই ওই বলে নৈশালোকে খেলা সম্ভব নয়। এরপরেই তৈরি হয় গোলাপি বল। এই বলের পালিশ লাল বলের থেকে অনেক বেশি স্থায়ী হয়। বলের চকচকে ভাব যাতে অনেকক্ষণ থাকে তার জন্য এই বলে লাক্ষার অতিরিক্ত আস্তরণ দেওয়া হয়। স্পিনারদের থেকে পেসারদের বেশি সাহায্য করে এই বল। সদ্যসমাপ্ত ইডেন টেস্টেও বাংলাদেশের ইনিংসের সব কটি উইকেটই গিয়েছে ভারতীয় পেসারদের ঝুলিতে।

মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও খড়্গপুর সাউথ স্টার ক্রিকেট অ্যাকাডেমির প্রশিক্ষক পার্থ দাশগুপ্তের মতে, লাল বলের তুলনায় এই বল বেশি সুইং করে। গতিও বেশি। তাই এই বল শেষ পর্যন্ত দেখে তবেই স্ট্রোক খেলা উচিত। বুঝতে হবে বলের গতিও। সেটা না করার জন্যই ইডেন টেস্টে বাংলাদেশের কয়েকজন ব্যাটসম্যান আউট হয়েছিলেন। দু’জন চোটও পান। পার্থ বলেন, ‘‘মাঠে শিশির পড়লে গোলাপি বল বেশি সুইং করে। তখন উইকেটরক্ষকদের বল গ্রিপ করতে অসুবিধা হয়। মাঠে আলো জ্বলার পরে কিছু সময় পর্যন্ত গোলাপি বল দেখতেও সমস্যা হয়।’’

খড়্গপুর ব্লুজ ক্রিকেট অ্যাকাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকেই কলকাতার মাঠে খেলছেন। এই অ্যাকাডেমিরই ছাত্র করণলাল এখন অনূর্ধ্ব ১৯ জাতীয় দলের সদস্য। এর প্রশিক্ষক সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গোলাপি বলে খেলার আগে ক্রিকেটের ব্যকরণ অবশ্যই জানতে হবে। আনাড়ির মতো ব্যাটিং বা বোলিং করতে এই বলে খেলা মুশকিল। এরসঙ্গে প্রয়োজন ভাল ফিটনেস। না হলে এই বলে ফিল্ডিং করতেও সমস্যা হবে।’’ তিনি জানান, তাঁদের অ্যাকাডেমিতে কয়েক মাস আগে কলকাতা থেকে একটি গোলাপি বল আনা হয়েছিল। তবে সেই বলের মান তেমন ভাল ছিল না। কলকাতার বাজারে ভাল মানের গোলাপি বল এলে আবার কেনা হবে।

মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার আরেক প্রশিক্ষক সুমিত দাস ইডেন টেস্টে মাঠে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘ইডেনের আলো জ্বলার পরে স্টেডিয়াম থেকে বল দেখতে পাচ্ছিলাম না। তবে আস্তে আস্তে চোখ মানিয়ে নেয়। স্টেডিয়াম থেকে দেখে মনে হল সাদা বলের থেকে এই বলের গতি বেশি। তাই স্পিনারদের কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে।’’ সুমিতও কলকাতা থেকে গোলাপি বল এনে অনুশীলন করিয়েছেন।

ঝাড়গ্রাম আর এম এস ক্রিকেট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষক নিলয় বেরার পরামর্শ, গোলাপি বল পেসারদের জন্য ভাল। তবে সুইং নিয়ন্ত্রণ করাটা খুব জরুরি। পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া মহকুমা ক্রিকেট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষক বিপ্লব চক্রবর্তীও ইডেন টেস্টে মাঠে ছিলেন। তাঁর মতে, গোলাপি বলে দিন-রাতের টেস্ট ক্রিকেটের গুণগত মান বাড়াতে পারেনি। তবে মাঠে দর্শক আনতে পারছে। তিনি বলেন, ‘‘আমার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কয়েকজন শিক্ষার্থীও ইডেনে খেলা দেখতে গিয়েছিল। তাঁরা এই বলে খেলার জন্য মুখিয়ে আছেন।’’

হলদিয়া টিউলিপ ক্রিকেট অ্যাকাডেমির প্রশিক্ষক পিনাকি মাঝি অবশ্য এখনই এই বল নিয়ে আশাবাদী হতে রাজি নন। তাঁর দাবি, ‘‘এই বলের কোটিং দ্রুত উঠে যাচ্ছে। ভাল ভাবে দেখাও যাচ্ছে না। স্পিনাররাও খুশি নয়। আগে সমস্যা মিটুক। তারপরে এই বলে খেলার কথা ভাবা যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Pink Ball Test Eden Gardens
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE