Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ফেডেরার ২০, নাদাল ১৯, জোকোভিচ ১৬

রুদ্ধশ্বাস জয়ে বাঁধ মানল না চোখের জল

‘‘জীবনে কিছু কিছু সময় আসে যখন আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয় না। এ দিনটাও সে রকমই ছিল,’’ ধরে আসা গলায় বলতে থাকলেন আধুনিক টেনিসের সব চেয়ে লড়াকু তারকা।

আবেগরুদ্ধ: ফাইনালে জেতার পরে কান্না নাদালের। এপি

আবেগরুদ্ধ: ফাইনালে জেতার পরে কান্না নাদালের। এপি

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:১৭
Share: Save:

নিজের চেয়ারে এসে বসলেন তিনি। পরিচিত সেই ভঙ্গিতে হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে থাকলেন। আর তখনই ফের উঠে দাঁড়িয়ে হাততালিতে ভরিয়ে দিল আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়াম।

রাফায়েল নাদালের জীবনে মোটেও আর একটা দিনের মতো ছিল না রবিবার। ফ্লাশিং মেডোজে তো তিনি আগেও তিন বার বিজয়ীর ট্রফি হাতে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু এতটা আবেগের স্রোতে তাঁকে কখনও ভাসিয়ে যেতে পারেননি দর্শকেরা। পুরস্কার বিতরণীর লগ্নে তাঁর বর্ণময় কেরিয়ারের হাইলাইটস দেখানো শুরু হল। যা দেখতে দেখতে আরও যেন গলা বুজে এল নাদালের। উনিশটি গ্র্যান্ড স্ল্যামের প্রত্যেকটি মুহূর্ত তখন ভেসে উঠছে পর্দায়। আর চোখের জল সামলাতে পারলেন না রাফা।

‘‘জীবনে কিছু কিছু সময় আসে যখন আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয় না। এ দিনটাও সে রকমই ছিল,’’ ধরে আসা গলায় বলতে থাকলেন আধুনিক টেনিসের সব চেয়ে লড়াকু তারকা। যোগ করলেন, ‘‘সকলে যে ভাবে আমাকে সমর্থন করেছেন, আমার কাছে চিরস্মরণীয় একটা দিন হয়ে থাকল।’’

তাঁর পাশে দাঁড়ানো দানিয়েল মেদভেদেভ। মহাতারকাকে নিয়ে ভিডিয়ো দেখানোর পরে রসিকতা করে যিনি বলে ফেললেন, ‘‘আচ্ছা, আমি জিতলে সংগঠকেরা কী দেখাতেন?’’ কে বলবে, এটাই তাঁর প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল ছিল। দুই সেটে পিছিয়ে পড়েও দুর্দান্ত ভাবে রণনীতি পাল্টে নাদালের মুখের গ্রাসই প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ১৯৪৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে দু’ সেটে পিছিয়ে পড়েও খেতাব জিতেছিলেন কিংবদন্তি পাঞ্চো গনজালভেস। সত্তর বছর পরে সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চলেছিলেন রুশ তরুণ। শেষ পর্যন্ত নাদাল জিতলেন ৭-৫, ৬-৩, ৫-৭, ৪-৬, ৬-৪ ফলে।

এ বারের যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে প্রথম থেকে যিনি ছিলেন জনতার কাছে খলনায়ক। প্রথমে বলবয়ের কাছ থেকে দৃষ্টিকটূ ভাবে তোয়ালে নেওয়া, তার পর দর্শকদের উদ্দেশে কটাক্ষ তাঁকে টেনিসের নতুন বখাটে ছেলে আখ্যা পাইয়ে দিয়েছিল। নাদালের স্মরণীয় রাতে মেদভেদেভও জয় করে নিলেন হারানো হৃদয়। নাদালের জয়ের দিনে তিনিও হারলেন না। ৩৩ বছরের নাদাল একটা সময় দুই সেটে এগিয়ে যাওয়ার পরে তৃতীয় সেটে ব্রেক পয়েন্টে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেখান থেকে অবিশ্বাস্য ভঙ্গিতে ম্যাচে ফিরে আসেন ২৩ বছরের রুশ তরুণ। কিন্তু মেয়েদের টেনিস যেখানে কিংবদন্তি সেরিনা উইলিয়ামসকে ছাপিয়ে বিয়াঙ্কা আন্দ্রেস্কু নামক ১৯ বছরের নতুন চ্যাম্পিয়ন পেল, পুরুষদের বিভাগে তা দেখা গেল না। সেখানে এখনও শাসন চলছে ‘বিগ থ্রি’ অর্থাৎ রজার ফেডেরার, রাফায়েল নাদাল এবং নোভাক জোকোভিচের। ২০০৯-এর শেষে টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রথম তিন খেলোয়াড় ছিলেন মহাত্রয়ী। ২০১৯-এও তাই। শেষ ১২টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের প্রত্যেকটিই জিতেছেন এই তিন জনের কেউ। যা আবারও প্রমাণ করে দিচ্ছে টেনিসে তিন মহারথির আধিপত্য।

বিজয়ী নাদাল যদিও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে গেলেন প্রতিপক্ষের। বললেন, ‘‘মেদভেদেভ এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। দুর্ধর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী।’’ যোগ করলেন, ‘‘এই ট্রফি আমার কাছে অনেক কিছু। মেদভেদেভ অসাধারণ লড়াই করেছে। আমি খুশি যে, ম্যাচের শেষ তিন ঘণ্টা নিজের খেলা ধরে রাখতে পেরেছি।’’ ধন্যবাদ দিলেন, তাঁর পরিবার এবং কোচিং টিমকে। চোট-আঘাতে জর্জরিত হয়ে একটা সময় বড়সড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল, তাঁকে আর কোর্টেই দেখা যাবে কি না, তা নিয়ে। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তিনি যে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতছেন, সেটাই একটা বিস্ময়কর কাহিনি। অসাধারণ প্রত্যাবর্তনের একটা কারণ নাদালের লড়াকু মানসিকতা। সিংহহৃদয় বলা হয় তাঁকে। পাশাপাশি, ট্রেনার-ফিজিয়ো এবং পুরো কোচিং টিমের অবদানও অনস্বীকার্য।

এই নিয়ে ৮৩তম এটিপি ট্রফি জয়। সামনে ফেডেরারকে টপকে যাওয়ার হাতছানি। কিন্তু নাদাল বলে দিচ্ছেন, তিনি সে সব রেকর্ড নিয়ে ভাবছেন না। ‘‘আমি ও ভাবে দেখিই না। আগেও বলেছি, নিশ্চয়ই চাইব সব চেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে। কিন্তু সেটাই সারাক্ষণ আমার মাথার মধ্যে ঘুরছে, এমন নয়।’’

টেনিস দুনিয়ায় যদিও কে সব চেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্ল্যামের অধিকারী হতে পারে সেই অঙ্ক কষাকষি আরও জোর কদমে শুরু হয়ে গিয়েছে। ফ্লাশিং মেডোজে রবিবার নাদাল জেতার পরে তাঁর হল ১৯টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম। ফেডেরারের আছে ২০টি, জোকোভিচের ১৬টি। নাদাল যদিও বলে দিচ্ছেন, ‘‘সারাক্ষণ গ্র্যান্ড স্ল্যামের কথা ভাবতে রাজি নই আমি। এর বাইরেও অনেক কিছু আছে। আমি ওদের দু’জনের সঙ্গে (ফেডেরার এবং জোকোভিচ) খেলতে পেরেই যেমন খুব গর্বিত, তৃপ্ত। এবং, আমার বিশ্বাস সব চেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্ল্যাম না জিতলেও আমি অখুশি হয়ে পড়ব না।’’

বললেই কি শুনছে দুনিয়া!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rafael Nadal US Open 2019 Tennis Daniil Medvedev
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE