Advertisement
০২ মে ২০২৪
Manipur Violence

মণিপুরকে শান্ত করতে প্রশাসনের মুখ ১২ বছরের বক্সার, সাহসে মুগ্ধ সেনা আধিকারিকেরাও

দুই সম্প্রদায়ের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে অশান্তি ছড়ায় মণিপুরে। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় হিংসায় মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ৬০ জনের। আশ্রয়হীন প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ।

picture of L Mangminmgam

মণিপুরে শান্তি ফেরাতে ১২ বছরের মংমিনমগম-ই এখন ভরসা প্রশাসনের। ছবি: টুইটার।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২৩ ১৮:১৮
Share: Save:

মা কুকি সম্প্রদায়ের। বাবা মিইতেই সম্প্রদায়ের। এই দুই সম্প্রদায়ের সংঘাত ঘিরে উত্তপ্ত মণিপুর। পরিস্থিতি সামলাতে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় জারি করা হয়েছে কার্ফু। নামানো হয়েছে আধা সেনা। তবু ১৫ কিলোমিটার ছুটে প্রাণ বাঁচাতে হল ১২ বছরের এক বক্সারকে।

এল মংমিনমগম বক্সিং শেখার জন্য থাকে ইম্ফলের সাই হস্টেলে। গত ৪ মে সকালে উঠে মংমিনমগম দেখে হস্টেলে সে একাই রয়েছে। তার আগের দিন থেকে হিংসা শুরু হয় মণিপুরের চূড়াচাঁদপুরে। রাতেই যার আঁচ এসে পড়েছিল ইম্ফলে। আতঙ্কে মংমিনমগমের বাবা-মা চলে গিয়েছিলেন উত্তর ইম্ফলের কাঙ্গপোকপির সাইকুল গ্রামে। তাঁরা ভেবেছিলেন সাই হস্টেলে নিরাপদেই রয়েছে ছেলে। গ্রামের বাড়িতে চলে যাওয়ায় বাবা-মার সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেনি খুদে বক্সার। ভয়ে চার দিন হস্টেলে একাই ছিল মংমিনমগম। পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে বুঝতে পেরে বাড়ি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মংমিনমগম।

যেমন ভাবা তেমন কাজ। হস্টেল থেকে বাড়ি যাওয়ার সময় মংমিনমগম সঙ্গে নিয়েছিল শুধু প্রিয় বক্সিংয়ের দস্তানা। তা নিয়েই সাই হস্টেল থেকে বেরিয়ে ছুটতে শুরু করে সে। হিংসার ভয়ে সহজ রাস্তা না ধরে জঙ্গল এবং পাহাড়ের রাস্তা বেছে নেয়। বেশ কয়েক ঘণ্টা দৌড়ে ১৫ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে মংমিনমগম পৌঁছায় পশ্চিম ইম্ফলের মন্ত্রীপুখরির অসম রাইফেলসের ক্যাম্পে। অসম রাইফেলসের কর্তারা পরের দিন তাকে নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছে দেন। তার সাহস এবং মনোবল দেখে মুগ্ধ হন সেখানকার জওয়ানরাও।

প্রাণ হাতে করে সেই অভিযানের অভিজ্ঞতা বলেছে মংমিনমগম। সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া বলেছে, ‘‘কতটা রাস্তা দৌড়েছিলাম, জানি না। দিনের বেলা ছিল। শুধু নিরাপদ জায়গায় পৌঁছনোর জন্য দৌড়েছিলাম।’’ ছেলেকে পেয়ে খুশি মংমিনমগমের বাবা শ্যাম লাইরাকলাকথাম এবং মা হানতু। যদিও সেনা জওয়ানদের সঙ্গে ছেলেকে বাড়ি আসতে দেখে প্রথমে অবাক হয়ে যান তাঁরা।

মংমিনমগমের সাহসের কথা সমাজমাধ্যমে জানিয়েছে অসম রাইফেলস। মণিপুরের হিংসা থামাতেও এখন নিরাপত্তা আধিকারিকদের ভরসার মুখ মংমিনমগম। অসম রাইফেল সমাজমাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বার্তা দিয়ে লিখেছে, ‘‘কুকি মা এবং মিইতেই বাবার গর্বিত সন্তান মংমিনমগম। মণিপুরে সব সম্প্রদায়ের মানুষের সহাবস্থানের দারুণ উদাহরণ মংমিনমগম। কঠিন সময় বাবা-মায়ের কাছে ফিরতে মংমিনমগমের ১৫ কিলোমিটারের সাহসী দৌড় এক দুর্দান্ত উদাহরণ।’’ ১২ বছরের বক্সারের সাহসের প্রশংসা করেছেন সেনা আধিকারিকেরা। সমাজমাধ্যমে আরও একটি পোস্টে তাঁরা লিখেছেন, ‘‘ভয়, হতাশা এবং নেতিবাচকতাকে নকআউট করে দিয়েছে মংমিনমগম।’’

তাকে দেখে রাজ্যবাসীকে শান্তিপূর্ণ ভাবে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। অসম রাইফেলসের ক্যাম্পে মংমিনমগমের একটি হাসিমুখের ছবি দিয়ে প্রচার করছেন নিরাপত্তা আধিকারিকেরা। উত্তর-পূর্বের রাজ্যে শান্তি ফেরাতে মংমিনমগম-ই এখন প্রশাসনের মুখ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Manipur Violence boxer Assam Rifles
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE