প্রত্যয়ী: ডোপের অভিযোগেও বিশ্বাস হারাননি সুব্রত। ফাইল চিত্র
প্রশ্ন: আপনি যে ডোপ কলঙ্কিত নন সেটা তা হলে প্রমাণ করেই ছাড়লেন? কিন্তু এত বড় একটা ঘটনার পরও উচ্ছ্বাস না দেখিয়ে দশ দিন ফোন বন্ধ!
সুব্রত: ডোপ টেস্ট পজিটিভ হওয়ার পর যে যা পারে লিখেছে। কেউ সারা জীবনের জন্য নির্বাসনে পাঠিয়েছে। কেউ ফুটবলার জীবন শেষ হয়ে গিয়েছে বলে রায় দিয়ে দিয়েছে। মিডিয়া তার কাজ করেছে। তাতে আমার কোনও রাগ নেই। আর আমি বরাবরই মিডিয়া এড়িয়ে চলি। আমি জানতাম আমি সৎ। আমার কোনও দোষ নেই। চিঠি আসার পর খোঁজ নিয়ে যখন জানতে পারলাম কী হয়েছে, নিশ্চিত ছিলাম মাঠে ফিরবই।
প্র: কিন্তু প্রায় তিন মাস ধরে ডোপ-কলঙ্ক নিয়ে ঘোরাফেরা, সেটা তো বিরাট যন্ত্রণার?
সুব্রত: কষ্ট পেতাম স্বীকার করছি। তবে ভেঙে পড়িনি। যখন চিঠিটা হাতে পেলাম তখন ভাবছিলাম ফুটবলার জীবনের শেষ দিকে এসে এ রকম একটা ধাক্কা এল? কিন্তু আমার খারাপ লাগার চেয়েও বেশি যন্ত্রণা হচ্ছিল পরিবারের কথা ভেবে। আমার স্ত্রী, কোচ ও মেন্টর দেবাশিস মুখোপাধ্যায় (সম্পর্কে যিনি শ্বশুর), বাবা-মা-দাদা ওদের কথা ভেবেই খারাপ লাগত। ওঁরা রাস্তায় বেরোলেই সবাই অস্বস্তিকর নানা প্রশ্ন করত আমাকে নিয়ে! ভাবতাম, আমার জন্য কেন ওঁরা কষ্ট পাবেন? কী যে খারাপ লাগত!
প্র: যন্ত্রণার দিনগুলোতে মানসিক শান্তির জন্য কোনও মনোবিদের সাহায্য নিয়েছিলেন?
সুব্রত: দেখুন, আমি সময় পেলেই স্বামী বিবেকানন্দর বই পড়ি। এতে মানসিক স্বস্তি এবং শান্তি দুই পাই। সেটা তো পড়তামই। আর মনোবিদ, মেন্টর যাই বলুন, সে তো আমার দেবাশিসস্যার। উনিই আমার সব। প্রতিদিন উনি আমাকে মোটিভেট করে গিয়েছেন। সঙ্গে বাড়ির অন্যরা।
প্র: সতেরো বছর দেশের জার্সিতে খেলছেন। এক নম্বর গোলকিপার। কোন ওষুধ ডোপের তালিকায় পড়ে, জানেন না? এটা বিশ্বাসযোগ্য?
সুব্রত: জানব না কেন? এ ব্যাপারে আমি সচেতন। পড়াশুনা করি। কিন্তু শিবিরে থাকার সময় আমি কেন সবাই টিম ডাক্তারকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে। আমিও করেছিলাম। কাউকে দোষারোপ করব না। তবে এটা বলছি আমাদের জাতীয় টিমের ডাক্তার শ্রীজিৎ কামাল অসাবধানে ভুল করে ফেলেছে। কাশির জন্য ‘অ্যাসকোরিল’ সিরাপ দিয়েছিলেন উনি। ওই ওষুধটা নানা রকম হয়। বাইরের কোনও ডাক্তার ওই ওষুধটা লিখলে আমি ভাল করে পড়ে দেখতাম। কিন্তু কামাল দিচ্ছেন তাই খেয়ে নিয়েছি। ওতে সামান্য টারবুলিন ছিল। তবে ওটা কোনও শক্তিবর্ধক ওষুধ ছিল না। নাডা সেটা তদন্তের সময় বুঝেছিল। আমি জানতাম আমার কিছু হবে না।
প্রশ্ন: তার মানে টিম ডাক্তারের জন্যই আপনার এই হেনস্থা?
সুব্রত: ডাক্তারকে দোষ দেব না। ভুল তো কারও হতেই পারে। বরং ওঁর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কারণ নাডার জেরার সামনে উনি স্বীকার করেছেন, আমাকে ওষুধটা উনিই দিয়েছিলেন শিবিরে থাকার সময়। যা কেউ করে না।
আরও পড়ুন:
‘কোচ’ নাটকে যবনিকা, রবির উদয় যে পথে
প্র: ওই ডাক্তারের তো শাস্তি হচ্ছে। নাডার নির্দেশে ফেডারেশন ওকে কালো তালিকাভুক্ত করছে, জানেন?
সুব্রত: জানিনা ফেডারেশন কী করবে। তবে একটা ভুলের জন্য কেউ শাস্তি পেলে আমার ভাল লাগবে না।
প্র: আপনি ডোপ-কলঙ্ক থেকে মুক্তি পাবেনই, নিশ্চিত ছিলেন বলছেন। তা হলে নিজে থেকেই নাডার কাছে ‘সাময়িক সাসপেনশন’ চেয়ে নিয়েছিলেন কেন? কোথাও কি কোনও ভয় কাজ করছিল?
সুব্রত: আইনজীবীর পরামর্শে শাস্তি চেয়ে নিয়েছিলাম। ডোপে অভিযুক্ত বিশ্বের সব অ্যাথলিটই এটা করে। কারণ যদি কারও টোকেন তিন বা ছয় মাসের সাসপেনশন হয় তা হলে তাড়াতাড়ি মাঠে ফেরা যায় এটা করে রাখলে। আমার অপরাধ খুব কম ছিল। সেটা ভেবেই… এগিয়েছি।
প্র: ক্রিশ্চিয়ানো জুনিয়রের মৃত্যু বিতর্ক। তার পর আরও দু’তিনটে ঝামেলা। এ বার ডোপ? বিতর্কের দিনগুলিতে হার না মানার প্রেরণা পান কাদের থেকে?
সুব্রত: মিশায়েল শুমাখার আর রাফায়েল নাদাল। ওদের কাছ থেকে শিখেছি কীভাবে চোট বা বিতর্ক সরিয়ে মাঠে ফিরতে হয়। ফেডেরারকে ভাল লাগে, কিন্তু নাদালের লড়াই, পরিশ্রম, চোটের জন্য ছিটকে গিয়েও ফিরে আসাটা আমাকে প্রেরণা যোগায়।
প্র: কিন্তু জাতীয় দলে কি ফের ফিরতে পারবেন?
সুব্রত: কেন পারব না? আমি তো চোটের জন্য বাদ পড়েছিলাম। শিবিরে চোট পাওয়ার পর স্টিভন কনস্ট্যান্টাইন আমার সঙ্গে আলোচনা করেই বাদ দিয়েছিলেন সুস্থ হওয়ার জন্য। ডোপের অভিযোগ থেকে মুক্ত হওয়ার পর কোচের সঙ্গে কথা হয়েছে।
প্র: আইএসএল না আই লিগ, কোথায় খেলবেন সামনের মরসুমে?
সুব্রত: গতবার নর্থ ইস্টে ছিলাম। এ বার আইএসএল খেলব। নিলামে যাচ্ছি। ফুটবলারদের জীবনে আলো, অন্ধকার দুই থাকে। আবার আলোয় ফিরেছি। অনুশীলনে ডুবিয়ে দিয়েছি নিজেকে। ফুটবল আমার জীবন। ভাল খেলতে হবে। ফুটবলের সঙ্গে কোনও দিন প্রতারণা করিনি। করবও না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy