Advertisement
E-Paper

‘বিরতিতে বলেছিলাম, ধরে নাও ম্যাচ ০-০’

ফুটবলার জীবনটা দীর্ঘায়িত হয়নি। তার পরই ভেবে নিয়েছিলেন কোচিং করাবেন। যখন তাঁর সব সতীর্থরা দাপিয়ে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহমেডানে খেলছেন তখন তিনি হাতে তুলে নিয়েছিলেন কোনও দলের কোচের দায়িত্ব। এতদিনে হয়তো তার ফল পেলেন ডার্বি জিতে।

সুচরিতা সেন চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৮ ১৬:২৬
মোহনবাগানের হেডকোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী। ছবি ফেসবুকের সৌজন্যে।

মোহনবাগানের হেডকোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী। ছবি ফেসবুকের সৌজন্যে।

রবিবারের ডার্বি তাঁর জীবনে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। হেরে গেলে হেড কোচের চাকরিটা আর থাকতই না হয়তো। কারণ, তাঁর পূর্বসূরি সঞ্জয় সেনকে আই লিগ-ডার্বি দেওয়ার পরেও দল ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। এমন চাপের মুখেই ডার্বিতে দল নিয়ে নেমেছিলেন তিনি। জয় এসেছে। কিন্তু, সেই জয় নিয়ে আবেগে ভেসে যেতে রাজি নন এখনই। বরং, আইজলে অ্যাওয়ে ম্যাচ নিয়েই বেশি ব্যস্ত শঙ্করলাল চক্রবর্তী। ডার্বি জেতানো সেই মোহনবাগান কোচের সঙ্গে আনন্দবাজার ডিজিটাল, একান্ত আলাপচারিতায়।

আনন্দবাজার: অনেক শুভেচ্ছা।
শঙ্করলাল: ধন্যবাদ (হাসি)।

আনন্দবাজার: এ যাত্রায় চাকরিটা বেঁচে গেল আপনার?
শঙ্করলাল: আমি চাকরির নিশ্চয়তা-অনিশ্চয়তা নিয়ে কিছুই ভাবছিলাম না। আর অনিশ্চয়তা যে ছিল, এটাই বা কে বলল!

আরও পড়ুন
রবিবারের ডার্বিতে ঝুলছে দুই কোচের ভাগ্য

আনন্দবাজার: বাংলার ফুটবলে একটা কথা আছে, ডার্বি দিয়েই জাত চেনা যায়। আপনিও কি সেটা চিনিয়ে দিলেন?
শঙ্করলাল: এটা নিয়ে তো কোনও সন্দেহ নেই, ভারতীয় ফুটবলের সেরা প্ল্যাটফর্ম এই ডার্বি। টিম যে খেলাটা খেলছে, তার দায় কোচেরই। আসলে আত্মবিশ্বাসটা অনেকটাই বেড়ে যায় তখন, যখন শুধু জয় নয়, আপনার অধীনে থাকা একটা টিম ভাল ফুটবল খেলে সমর্থকদের আনন্দ দেয়।

আনন্দবাজার: মাঠে নামার আগে পর্যন্ত কী মনে হচ্ছিল, ম্যাচের ফল কী হতে পারে?
শঙ্করলাল: জেতা ছাড়া আমাদের কাছে কোনও বিকল্পই ছিল না। সবার কাছে একটাই বার্তা দেওয়া হয়েছিল, ন’টা ম্যাচ হাতে রয়েছে। সবগুলোই আমাদের জিততে হবে। সেই শুরুটা ডার্বি দিয়েই হল। এ বার এটাই ধরে রাখতে হবে। ১০০ শতাংশ তো বটেই, তার বেশি যদি কিছু হয়, তো সেটাই দিতে হবে।

আনন্দবাজার: যে ডিকাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল, সে এই পারফরম্যান্সটা দিল কী করে?
শঙ্করলাল: আমার মনে হয়, যখন কাউকে এ রকম একটা পরিস্থিতির সামনে দাঁড়াতে হয়, তখন তাঁর নিজের ভিতর থেকে সেরাটা দেওয়ার তাগিদ চলে আসে। দ্বিতীয়ত, আমরা চেষ্টা করেছি, ওঁকে দলের সকলের মধ্যে আরও বেশি করে মিশিয়ে দিতে। পাশাপাশি, আক্রমের মতো এক জন স্ট্রাইকারকে পাশে পেয়ে যাওয়াটা ওকে উদ্বুদ্ধ করেছে।

আনন্দবাজার: বিরতিতে ড্রেসিং রুমে ফিরে দলকে কী বলেছিলেন?
শঙ্করলাল: দলকে বলেছিলাম, ধরে নাও ম্যাচটা এখনও ০-০।

আনন্দবাজার: কিন্তু প্রথমার্ধে জোড়া গোলের পর দ্বিতীয়র্ধে একটাও গোল না পাওয়া এবং প্রচুর গোলের সুযোগ নষ্ট, এমনটা কেন হল?শঙ্করলাল: মিস হয়েছে তার মানেই তো আমরা গোলের জন্য ঝাঁপিয়েছিলাম। প্রথমে দু’গোল করে ফেলে আমরা কিন্তু রক্ষণাত্মক হয়ে যাইনি। পজিটিভ ফুটবলটাই খেলেছিলাম। যে কারণে এত গোল মিস হয়েছে।

আনন্দবাজার: গোলের জন্য দ্বিতীয়ার্ধে তাড়াহুড়ো হয়ে যাচ্ছিল কি?
শঙ্করলাল: একটুও না। আমরা একদম পারফেক্ট ফুটবল খেলেছিলাম। আক্রমণে যে ভাবে লোক বাড়ানো হয়েছিল, ঠিক সে ভাবেই বলটা মিস করার পর প্লেয়াররা দ্রুত নেমে এসে রক্ষণটাও সামলে দিয়েছে। তাই, আমরা গোল হজম করিনি।

আনন্দবাজার: আপনার জীবনে কি এটাই সেরা জয়?
শঙ্করলাল: সে দিক থেকে দেখতে গেলে অবশ্যই। ডার্বি জয় আসলে একটা আলাদা তৃপ্তি। তার পরে যখন সবাই বলে, আমার দল ভাল ফুটবল খেলেছে, তখন তো সেটাকে এগিয়ে রাখতেই হবে। কিন্তু, গত মিনার্ভা ম্যাচে শেষ ৪৫ মিনিট আমরা দারুণ ফুটবল খেলেছিলাম। কেউ মনে রাখেনি। কারণ, ম্যাচটা আমরা হেরে গিয়েছিলাম। এই ম্যাচেও ৪৫ মিনিট আমরা ভাল খেলেছি। সবাই মনে রাখবে। কারণ, ম্যাচটা আমরা জিতেছি।

আরও পড়ুন
‘এই মোহনবাগানকেও যদি হারাতে না পারে...’

আনন্দবাজার: একটা বড় দলের হেড কোচ হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ডার্বি জয়। নিজেকে কী ভাবে তৈরি করেছিলেন?
শঙ্করলাল: চ্যালেঞ্জিং তো ছিলই। সব কোচই এই চ্যালেঞ্জটা নিতে ভালবাসে। এখানেই কিছু প্রমাণ করার আছে। আমার চ্যালেঞ্জটা শুরু হয়েছিল, আইজল ম্যাচ থেকে। ওটা আমরা জিতেছিলাম। মিনার্ভা ম্যাচে হারের পর, ডার্বি জয়টা আমার কাছে বড় প্রাপ্তি।

আনন্দবাজার: এই জয় কাকে উৎসর্গ করবেন?
শঙ্করলাল: পুরো দল মিলেই তো এটা সনি নর্দিকে উৎসর্গ করেছি।

আনন্দবাজার: সঞ্জয় সেন আই লিগ দিয়েছেন। ডার্বি জিতিয়েছেন। তার পরেও সরে যেতে হয়েছে। আপনি নিশ্চিত, আপনি টিকে গেলেন?
শঙ্করলাল: সত্যি বলছি কিছু ভাবিনি। এই ভাবনাটা এখন মাথায় ঢুকে গেলে, খেলার উপরে খারাপ প্রভাব পড়বে। ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলব। তাই, যত ক্ষণ আছি নিজের সেরাটা দিয়ে যেতে চাই।

আনন্দবাজার: জয়ের পর সঞ্জয় সেনের সঙ্গে কথা হল?
শঙ্করলাল: হ্যাঁ। আমি-ই ফোন করেছিলাম। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আমাকে। শুধু সঞ্জয়দা নন, সুভাষদা, ভাস্করদা, মিহিরদা— সকলে আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন
ডার্বিতে সনি-ইউটাকে মিস করব: কিংগসলে ওবুমনেমে

আনন্দবাজার: সঞ্জয় সেন নাকি আপনাকেই দায়ী করেছেন তাঁর চাকরি যাওয়ার জন্য? এ রকম একটা রটনা শোনা গিয়েছিল কিন্তু...
শঙ্করলাল: আমিও শুনেছি। রবিবারও বলেছি। আবারও বলছি। আমি নিশ্চিত, সঞ্জয়দা এ রকম কথা বলতেই পারেন না।

আনন্দবাজার: এখন কী পরিকল্পনা?
শঙ্করলাল: এই মুহূর্তে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে আমি আইজলে আছি। খুব কঠিন ম্যাচ। ডার্বি জয়ের পরে ম্যাচটা আরও বেশি কঠিন হয়ে গিয়েছে। এই আইজলকেই ঘরের মাঠে হারিয়ে আমার এই পর্বের কোচিংটা শুরু হয়েছিল। আবারও সেই আইজলের সামনে, তাদের ঘরের মাঠে। এই ম্যাচটাও জিততে হবে।

Mohun Bagan Football Coach Sankar Lal Chakraborty শঙ্কর লাল চক্রবর্তী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy