Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Corona

কলকাতায় করোনা নিয়ে উদ্বেগ অতনু, দীপিকার

আমাদের বাংলার করোনা পরিস্থিতি কেমন? সোশ্যাল মিডিয়ায় যা খবর পাচ্ছি, তা ভয়াবহ লাগছে। আমার বাড়িতে বাবা-মা বয়স্ক।

জুটি: অলিম্পিক্সে দেশের অন্যতম ভরসা অতনু-দীপিকা।

জুটি: অলিম্পিক্সে দেশের অন্যতম ভরসা অতনু-দীপিকা। ফাইল চিত্র।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৫৪
Share: Save:

তিরন্দাজি বিশ্বকাপ থেকে ব্যক্তিগত রিকার্ভ ইভেন্টে স্ত্রী দীপিকা কুমারির সঙ্গে তিনিও সোনা জিতেছেন। বঙ্গসন্তান অতনু দাসের বিশ্বকাপ থেকে এটিই প্রথম পদক। সব মিলিয়ে ভারতীয় তিরন্দাজিতে নজির গড়েছেন এই তারকা তিরন্দাজ দম্পতি। কিন্তু তার পরেও আনন্দ করতে পারছেন না দীপিকা বা অতনু কেউই।

মঙ্গলবার রাতে গুয়াতেমালা সিটিতে যখন এই দম্পতিকে ফোনে যোগাযোগ করা হয়, তখন অতনু ও দীপিকা হোটেল ছেড়ে বেরোচ্ছেন। গন্তব্য বিমানবন্দর। তখনও জানেন না, আকাশপথে ১৬,৬৬৭ কিমি পাড়ি দিয়ে ভারতে আসতে পারবেন কি না।

দীপিকা বললেন, ‍‘‍‘কলকাতা থেকে খারাপ খবর পাচ্ছি। করোনা সংক্রমণে পরিচিত অনেকেরই আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়েছি। পদক জয়ের আনন্দ এখন মাথায় নেই। কলকাতার কথা ভাবলেই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।’’

অতনু বলেন, ‍‘‍‘হোটেল থেকে বের হলাম। কিন্তু জানি না শেষ পর্যন্ত কোথায় আটকে যাব। আমাদের কাগজপত্র সব ঠিক আছে। প্রথমে গুয়াতেমালা সিটি থেকে যেতে হবে পানামা। সেখান থেকে আবার উড়ান পরিবর্তন করে যেতে হবে প্যারিস। সেখান থেকে ফের উড়ান বদলে যাব বেঙ্গালুরু। সেখান থেকে শুক্রবার রাতে পুণেয় শিবিরে ফিরব।’’ তিরন্দাজির বিশ্বজয়ী বঙ্গসন্তান এ বার জানতে চান, ‍‘‍‘আমাদের বাংলার করোনা পরিস্থিতি কেমন? সোশ্যাল মিডিয়ায় যা খবর পাচ্ছি, তা ভয়াবহ লাগছে। আমার বাড়িতে বাবা-মা বয়স্ক। তাঁরা এখনও পর্যন্ত সুস্থই রয়েছেন। কিন্তু এই বিপদে কলকাতার বাড়িতেই যেতে পারব না। তাই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে বিশ্বকাপ থেকে সোনা নিয়ে ফিরেও।’’

সোমবার যখন ব্যক্তিগত রিকার্ভ বিভাগের ফাইনালে ৬-৪ ফলে স্পেনের তিরন্দাজ ড্যানিয়েল কাস্ত্রোকে হারিযে তিরন্দাজির বিশ্বকাপ থেকে সোনার পদক জিতলেন, তখনকার অনুভূতি কেমন ছিল? এ বার আবেগে ভেসে যান অতনু। বলেন, ‍‘‍‘সে দিন সকালেই দীপিকাদের মহিলা ভারতীয় তিরন্দাজ দল রিকার্ভ ইভেন্টে সোনা জিতেছিল। তার কিছু পরেই দীপিকা রিকার্ভে ব্যক্তিগত ইভেন্টের সেমিফাইনালেও জিতে যায়। আমার মনের ভিতর তখন উথাল-পাতাল চলছিল। মনে হচ্ছিল, সব কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। সেই অবস্থা থেকে আমাকে মানসিক চাপমুক্ত করে দীপিকাই। ও আমাকে বলে, এত দিন পরিশ্রম করেছ। আজ তার ফল তোলার পালা। চাপমুক্ত হও। ফাইনালে তুমিই জিতবে।’’ অতনু যোগ করেন, ‍‘‍‘এতেই আমি মানসিক ভাবে চাঙ্গা হয়ে যাই। তার পরে নিজের সেরা ছন্দে তির ছুড়েছি। বাকিটা ইতিহাস।’’

এর আগে বিশ্বকাপে অতনুর সেরা পারফরম্যান্স ছিল ২০১৬ সালে অ্যান্টালিয়ায় ব্রোঞ্জ প্লে-অফে চতুর্থ হওয়া। এ বারের ফাইনালে কাস্ত্রোর বিরুদ্ধে প্রথম তিন সেটে পিছিয়ে থাকার পরে পরের দুই সেটে বিপক্ষকে পিছিয়ে দেন তিনি। অতনুর কথায়, ‍‘‍‘অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা। স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। বিশ্বকাপ থেকে প্রথম সোনার পদকের জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেছি। এ বার তার মূল্য পেলাম। দারুণ লাগছে। কারণ, বিশ্বকাপ থেকে প্রথম ব্যক্তিগত সোনা জিতলাম।’’ যোগ করেছেন, ‍‘‍‘শেষের দিকে, তির ছোড়ার সময়ে অতীত বা ভবিষ্যতের কথা মাথায় রাখিনি। বাস্তবে পা রেখেই এগিয়েছিলাম।’’

আপনি তো সাংবাদিক বৈঠকেও বলেছেন, দীপিকার বড় অবদান রয়েছে আপনার এই সাফল্যে। এ বার স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই হেসে ওঠেন। তিন বছর সম্পর্কের পরে ঝাড়খণ্ডের মেয়ে দীপিকা গত জুনেই বিয়ে করেছেন অতনুকে। হাসি থামিয়ে এ বার অতনু বলেন, ‍‘‍‘দীপিকার জন্যই আজ আমি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। ও আমাকে প্রেরণা না দিলে এই জায়গায় আসতে পারতাম না। তাই আমার প্রথম বিশ্বকাপ থেকে জেতা এই সোনাটা ওকেই দিয়ে দিয়েছি। স্বপ্ন দেখতাম বিশ্বকাপে আমি আর দীপিকা ব্যক্তিগত সোনার পদক জিতছি। তা সফল করতে পারলাম। আর এর পিছনে দীপিকার অবদান ৮০ শতাংশ।’’

পরবর্তী লক্ষ্য কী? অতনু বলে চলেন, ‍‘‍‘পুণেয় পৌঁছে নিভৃতবাসে চলে যেতে হবে। তবে আমাদের শরীর পুণেতে থাকলেও মন থাকবে কলকাতায়। বাড়ির সবার জন্য চিন্তা রয়েছে।’’ যোগ করেন, ‍‘‍‘তার পরে প্যারিসে স্টেজ থ্রি বিশ্বকাপ রয়েছে জুন মাসে। ভিসা রয়েছে। যদি সরকার ফ্রান্সে ওই প্রতিযোগিতায় যেতে অনুমতি দেয় ও ফরাসি সরকারেরর থেকেও অনুমতি পাওয়া যায়, তা হলে পরের বিশ্বকাপে আরও ভাল ফল করতে চাই। নিভৃতবাস সেরেই তার জন্য প্রস্তুতি নেব।’’

আর অলিম্পিক্স? এ বার অতনু বলেন, ‍‘‍‘আমি যোগ্যতা অর্জন করেছ, দীপিকাও। তবে সেটা ব্যক্তিগত ভাবে। যদি প্যারিসে ওই বিশ্বকাপে ভারতীয় মহিলা রিকার্ভ দল এ বারের মতো ছন্দে থাকে, তা হলে ওরাও অলিম্পিক্সের ছাড়পত্র অর্জন করে নেবে। সেই দলেও তো রয়েছে দীপিকা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE