Advertisement
E-Paper

সুইস ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে মাঝমাঠের খোঁজে মেসি

নিজের বাড়ির সুইমিং পুলের ধারে বন্ধুদের সঙ্গে দিব্য তাস খেলছেন। পিছনে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে তাঁর অভিনেত্রী বান্ধবী। নেইমার দ্য সিলভার ফুলে থাকা থাই নয়। বরং রোববার দুপুরে রিল্যাক্স করার এই ছবিটাই আজ ব্রাজিলীয় দৈনিকে বেরিয়েছে। ছবিটা দেখে মনে হল, বার্সায় সে দিন এ রকম ছুটির মেজাজেই নিশ্চয়ই লিওনেল মেসিকে বলেছিলেন নেইমার, “রিও-র ফাইনালে মনে হয় আমাদেরই দেখা হবে।” মেসি কিছু বলেননি। প্রশ্রয়ের হাসি হাসেন।

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৪ ০৩:১২

নিজের বাড়ির সুইমিং পুলের ধারে বন্ধুদের সঙ্গে দিব্য তাস খেলছেন। পিছনে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে তাঁর অভিনেত্রী বান্ধবী।

নেইমার দ্য সিলভার ফুলে থাকা থাই নয়। বরং রোববার দুপুরে রিল্যাক্স করার এই ছবিটাই আজ ব্রাজিলীয় দৈনিকে বেরিয়েছে। ছবিটা দেখে মনে হল, বার্সায় সে দিন এ রকম ছুটির মেজাজেই নিশ্চয়ই লিওনেল মেসিকে বলেছিলেন নেইমার, “রিও-র ফাইনালে মনে হয় আমাদেরই দেখা হবে।” মেসি কিছু বলেননি। প্রশ্রয়ের হাসি হাসেন।

বেশ কিছু দিন আগের কথা। মাসখানেক তো হবেই। বিশ্বকাপই পড়ে গেল উনিশতম দিনে। এই সাও পাওলোর মাঠে উদ্বোধনের সময়ই তো পশ্চিম ভারতের অন্যতম সেরা অহঙ্কার রত্নগিরির আলফন্সো আমের মরসুম শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ব্রাজিলের আমের মরসুম শুরু। তখন ব্যাপক টক ছিল। জুনের শেষে এসে বেশ মিষ্টি।

ব্রাজিলের ফলের বাজারে এত উল্লেখযোগ্য রূপান্তর হয়ে গেল। কিন্তু নেইমার-মেসির মিডফিল্ড যেমন টক ছিল, তেমনই থেকে গেল। যেটার কথা স্মরণ করলেই এই দু’দেশের সমর্থকরা এমন হতাশ হয়ে পড়ছেন যেন গলায় চোঁয়া ঢেকুর উঠল! সকালে এখান থেকে নব্বই মাইল দূরের ক্যাম্পিনাস বিমানবন্দরের ফিফা কাউন্টারে ব্রাজিল সমর্থক উত্তেজিত ভাবে বলছিল, অস্কারকে কি কোনও জ্যোতিষী ট্যাকল করতে বারণ করে দিয়েছে? এরিনা সাও পাওলো পৌঁছে দেখলাম আর্জেন্তাইন সাংবাদিকরা তেমনই খাপ্পা মাসচেরানো আর দি’মারিয়ার ওপর। রোজ বিবৃতি আর ইন্টারভিউ। একটা লোককে মাঝমাঠে আটকানোর নাম নেই!

দুপুরে আলেজান্দ্রো সাবেয়ার প্রেস কনফারেন্স কভার করতে গিয়ে মনে হচ্ছিল, কী করুণ অবস্থা তাঁর। ফুটবল-দুনিয়ায় কোচই সর্বেসর্বা, কোচই মালিক, কোচই ম্যানেজিং ডিরেক্টর। কিন্তু আর্জেন্তিনা ফুটবল টিমে পুরো একচেটিয়া মেসি! সাবেয়ার একমাত্র কাজ হল মেসি সম্পর্কে দেশ-বিদেশের সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাওয়া। আর বারবার বলা, “মেসির সঙ্গে আমার কোনও মনোমালিন্য নেই। ও একজন স্পেশ্যাল মানুষ।”

একটা টিম তিনটে টানা ম্যাচ জিতে কোয়ার্টার ফাইনালের পা-দানিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর তা-ও প্রতিপক্ষ কাকে পেয়েছে, না যারা জন্মদিনে সুইস চকোলেট বা সুইস ঘড়ির মতোই লোভনীয় উপহারসুইৎজারল্যান্ড! কোথায় টগবগ করবে আর্জেন্তিনীয়রা! তা নয়, বরং কেমন একটা ঝিমিয়ে পড়া, চিন্তাক্লিষ্ট পরিবেশ দেখলাম।

সে দিন নেইমারদের যখন সেই সরবিট্রেটওয়ালা টাইব্রেকার চলছিল, তখন মেসিরা কিন্তু পাশের পাড়াতেই ছিলেন। আর্জেন্তিনা বেসক্যাম্প তো বেলোর পাশেই। নেইমারের পেনাল্টি যদি বাগবাজারে হয়ে থাকে, মেসিরা তা হলে ছিলেন বৈষ্ণবঘাটা! কিন্তু বিশ্বকাপে একটা টিম আর একটার খেলা দেখতে আসার চল নেই। টিভিতে দেখেছেন। ফুটবল টিভিতে দেখে ঠিক মাঝমাঠের অবস্থাটা বোঝা যায় না। কে বল ছাড়া জায়গা নিচ্ছে, কে ট্যাকলের জন্য আগাম লোক ধরছে, এগুলো টিভিতে আসে না। একে অপরের খেলা মাঠে বসে দেখলে বুঝতেন, কারওরই যে মাঝমাঠ বলে কিছু নেই। এবং নিজেরা যদি পুরো দায়িত্ব না নেন, বার্সার সে দিনের ধারণাটা ধারণাই থেকে যাবে!

রোববার নেইমার যখন বন্ধুদের সঙ্গে ফুর্তির তাস খেলছেন, বেলোয় তখন মেসি কিন্তু মাঠে। তাঁদের বেসক্যাম্পের বাইরে বেশ কিছু আর্জেন্টাইন সাংবাদিক জড়ো হয়েছিলেন। তাঁদেরও বলে দেওয়া হয়, আজ বিশেষ গোপন প্র্যাকটিস। কারও ঢোকার অনুমতি নেই। “কীসের আবার এত গোপনীয়তা! জেতালে মেসি, হারালে মেসি। এই তো টিম,” বলে গজগজ করতে করতে তাঁরা বেরিয়ে আসেন।

আসলে টিমের প্রতিযোগিতায় করা ছ’টা গোলের মধ্যে চারটেই তো মেসির। আর একটা তিনি করিয়েছেন। নামটা আর্জেন্তিনা। জার্সি আর্জেন্তিনা। কিন্তু ভারসাম্যই তো তৈরি হয়নি। সেই জন্যই হয়তো সুইস চকোলেট হিসেবে না ধরে জার্মান কোচ অটমার হিৎজফেল্ডের টিমকে মেসির সতীর্থরা ধরছেন অন্য ভাবে। যেন সুইস ব্যাঙ্কে কারও গোপন অ্যাকাউন্ট নম্বর বার করাটাই হল সাও পাওলো মাঠে মঙ্গলবারের পরীক্ষা।

আর্জেন্তিনীয় ডিফেন্সের হাই-প্রেশার এখন থেকেই যাঁকে নিয়ে হয়ে রয়েছে তিনিও মেসি! মেসি-টু। মেসি-ওয়ান তিন ম্যাচে চার গোল করেছেন, আর ইনি মেসি-টু জারদান শাকিরি এক ম্যাচেই হ্যাটট্রিক! তা-ও মানাউসের ওই সেঁকে দেওয়া গরমের মধ্যে। তাঁকে এমনিতেই নিজের দেশের লোক আল্পসের মেসি বলে ডাকত। হন্ডুরাস-হ্যাটট্রিকোত্তর ডাকটা আরও প্রসিদ্ধ হচ্ছে!

বয়সে মেসি-টু পাঁচ বছরের ছোট। বায়ার্নে খেলেন। কিন্তু হাইটে এক। মেসি যেমন স্পেন চলে যান ছোটবেলায় আর্জেন্তিনা ছেড়ে, ইনি শাকিরিও তেমনই কসোভো ছেড়ে আল্পসের ধারে চলে এসেছিলেন। কৌলিন্যে দু’জনের তুলনাই হয় না। তবু আল্পসের মেসি নামটা বাজারে হিট করায় তুলনা হচ্ছে।

দেখা যাচ্ছে, নিজের নিজের দেশজ ম্যাচে পাসিং আর ড্রিবলে মেসি ওয়ান আগে থাকলেও গড়পড়তা গোলের সুযোগ তৈরিতে দু’জনেই এক বিন্দুতে। প্রতি চব্বিশ মিনিট পিছু এঁরা গোলের সুযোগ তৈরি করেন। শু্যটিংয়ের জোরে কাছাকাছি। আর মেসি-টু মানে, শাকিরির বৈশিষ্ট্য আরও একটা কারণে। যেটা মেসি কেন, নেইমার, রোনাল্ডো কারও নেই।

তাঁর সুডৌল থাই। শাকিরির থাইয়ের মাপ হল ২৭ ইঞ্চি। ওই মজবুত থাই থেকে কাল না রকেটের মতো শট বেরোয়, এই ভাবনাতেই বোধহয় আর্জেন্তিনার এত গোপন প্র্যাকটিস। মাসচেরানো তো বলেওছেন, শাকিরিকে তীক্ষ্ন নজরে রাখতে হবে। ব্রাজিল বিশ্বকাপ এমনিতেই আন্ডারডগদের প্রিয় টুর্নামেন্ট হয়ে গিয়েছে। কে বলতে পারে একটা মুহূর্তের অসতর্কতা চিলি-আতঙ্ক ফিরিয়ে দেবে না!

ঐতিহাসিক ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সুইসরা কখনও ব্রাজিলের ‘চিলি’ হতে পারেনি। ছ’টা ম্যাচে চারটে হেরেছে। দু’টো ড্র করেছে। শেষ যে ফ্রেন্ডলি হয় তাতে তো ১-৩ হেরেছে। আর্জেন্তিনার তিনটে গোলের তিনটেই করেছিলেন কে আবার, মেসি-ওয়ান।

মঙ্গলবার তাই ফিফার ফিক্সচার যা-ই দেখাক, দু’টো টিম হল সুইস ব্যাঙ্ক আর লিও মেসি! একটা টিমের নাম অবশ্য খেলার পর শুদ্ধ হয়ে সুইস চকোলেট হয়ে যেতে পারে। যদি তিনি, এলএম তেমনই ইচ্ছে করেন!

fifaworldcup gautam bhattacharya messi switzerland argentina prequaterfinal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy