Advertisement
E-Paper

সরকারের কাছে চান ১.৫ কোটি টাকা চান এশিয়াডে রুপো জয়ী অ্যাথলিট, কী করবেন?

সরকারের কাছ থেকে টাকা পেলে স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে লেখা প্রচুর বই কিনতে চান। রয়েছে আরও কিছু ইচ্ছা। জাতীয় দলের বিদেশি কোচের প্রিয় ‘দ্য সাইলেন্ট মঙ্ক’ তাকিয়ে রাজ্য সরকারের দিকে।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:০৩
picture of Atheletics

—প্রতীকী চিত্র।

এশিয়ান গেমসের রুপোর পদক কি ধার মেটাতে পারবে? আশায় রয়েছেন অজয় সরোজ। উত্তরপ্রদেশের অ্যাথলিট ১৫০০ মিটার দৌড়ে রুপো জিতেছেন এশিয়ান গেমসে। তাঁর আশা, রাজ্য সরকার তাঁকে অন্তত দেড় কোটি টাকা পুরস্কার দেবে।

অ্যাথলেটিক্সের বিভিন্ন ইভেন্টের জন্য বিদেশি কোচ দেখা গেলেও মাঝারি পাল্লার দৌড়ে ভরসা ছিলেন দেশের কোচেরাই। গত কয়েক বছর প্রত্যাশিত ফল না হওয়ায় অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া মাঝারি পাল্লার দৌড়বিদদের প্রশিক্ষণের জন্য নিয়ে এসেছে স্কট সিমন্সকে। বেঙ্গালুরুর প্রস্তুতি শিবিরে সরোজকে প্রথম দেখেছিলেন সিমন্স। তখনও সরোজের তেমন উল্লেখযোগ্য সাফল্য ছিল না। তবু অনুশীলনে সিমন্সের চোখে পড়ে যান উত্তরপ্রদেশের অ্যাথলিট। সিমন্স তাঁর মধ্যে সম্ভাবনা দেখেছিলেন। বুঝতে পেরেছিলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায় সাফল্য পাওয়ার মতো প্রতিভা রয়েছে সরোজের। দরকার শুধু দক্ষতার ধার বৃদ্ধি।

সিমন্সের হাতে পড়ে বদলে গিয়েছেন সরোজ। বিদেশি কোচের কাছে কয়েক মাস অনুশীলন করার সুফল পেয়েছেন এশিয়ান গেমসে। ১৫০০ মিটার দৌড়ে সোনা ফলাতে না পারলেও রুপো নিয়ে এসেছেন দেশের জন্য। কোচের ডায়েরিতে সরোজের অন্য একটি নাম রয়েছে। ‘দ্য সাইলেন্ট মঙ্ক’। মুখ বন্ধ করে কোচের নির্দেশ পালন করাই সরোজের এক মাত্র কাজ। নিঃশব্দে সাধনা করে যান। যে সাধনায় ধারাবাহিক ভাবে বেড়েছে দৌড়ের গতি। কমেছে দৌড় শেষ করার সময়। সিমন্স বলেছেন, ‘‘সরোজের প্রতিভা নিয়ে প্রশ্ন ছিল না। দরকার ছিল কিছু ট্যাকটিক্যাল পরিবর্তন। আমি শুধু সেটুকু করেছি। ওর সব থেকে বড় গুণ, যে কোনও পরিবেশের সঙ্গে খুব দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে।’’

সরোজের দৌড়ের সময় যত কমেছে, তত বেড়েছে দেনা। ২৬ বছরের অ্যাথলিটের বাবা ধর্মরাজ পেশায় কল মিস্ত্রি। নেশা অ্যাথলেটিক্স। শুধু সরোজকে নয়, নিজের সব সন্তানকেই তিনি মাঠে পাঠিয়েছেন। এলাহাবাদের কাছে কাজিয়ানি গ্রামের বাসিন্দা স্বপ্ন দেখেছেন, তাঁর সন্তানেরা রাজ্য, দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। সন্তানদের খেলার খরচ জোগাতে পারতেন না কল মিস্ত্রির কাজ করে। তাই একের পর এক দেনা করেছেন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে সরোজ সব থেকে ছোট। তাঁর বড় দাদা অজিত জাতীয় স্তরের অ্যাথলিট ছিলেন। ৮০০ এবং ১৫০০ মিটার দৌড়তেন। দুই দিদি শশী এবং শাস্ত্রীও জাতীয় পর্যায়ের অ্যাথলিট ছিলেন। দৌড়তেন ৫০০০ এবং ১০০০০ মিটার। ভাইবোনদের মধ্যে একমাত্র সরোজই পৌঁছতে পেরেছেন আন্তর্জাতিক স্তরে।

এশিয়ান গেমসে সাফল্যের পর সরোজ বলেছেন, ‘‘কাজ শেষ করে বাবা আমাকে প্রতি দিন গ্রামের মাঠে নিয়ে যেতেন। গ্রামের অন্য অ্যাথলিটেরা কত পরিশ্রম করে দেখাতেন। তাদের মধ্যে আমার দাদা, দিদিরাও ছিল। ওরা জাতীয় স্তরের অ্যাথলিট ছিল। বাবা চেয়েছিলেন, আমিও যেন ওদের মতোই হই। কিন্তু সমস্যা ছিল টাকা। ৩০০ টাকার জুতোও কিনতে পারতাম না। তবু বাবা আমাকে দৌড় থামাতে দেননি। আমিও থামাইনি। পরে এলাহাবাদের মদন মোহন মালব্য স্টেডিয়ামে অনুশীলন করার সুযোগ পাই। আমার অনুশীলন, সরঞ্জামের খরচ সামলাতে পারতেন না। দাদাদের আয়ও যথেষ্ট ছিল না। তাই বাবা আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে দিনের পর দিন ধার করে গিয়েছেন। অনেক ধার হয়ে গিয়েছে আমাদের।’’

সরোজের আশা, উত্তরপ্রদেশ সরকার তাঁকে অন্তত ১ কোটি ৫০ লাখ আর্থিক পুরস্কার দেবে। কী করবেন এত টাকা নিয়ে? সরোজ বলেছেন, ‘‘বাবার ধার মেটাতে হবে। ১০ লাখ টাকার উপর ধার রয়েছে বাবার। বাবা-মা এবং পরিবারের সকলের জন্য একটা বাড়ি তৈরি করতে চাই। আমি এখন রেলে চাকরি করি। মাইনের প্রায় সব টাকা ধার শোধ করতেই চলে যায়। সরকার টাকা দিলে একসঙ্গে সবার সব ধার মিটিয়ে দেব। আর স্বামী বিবেকানন্দের উপর লেখা বেশ কিছু বই কেনার ইচ্ছে আছে আমার।’’

স্বামী বিবেকানন্দের ভক্ত সরোজ। পরিবারের সবাইকে ভাল রাখার পাশাপাশি দেশের জন্য আরও পদক জেতাই লক্ষ্য ২৬ বছরের অ্যাথলিট। তাঁর লক্ষ্য ২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিক্স। কোচ সিমন্স জানেন লড়াই অনেক কঠিন। অনেক উন্নতি করতে হবে। সময় বেশি নেই। তবু প্রিয় ‘দ্য সাইলেন্ট মঙ্ক’-এর সাধনায় আস্থা রাখতে চান।

Athlete UP Govt
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy