Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Tokyo Olympics 2020

Tokyo Olympics 2020: অতনুর রুদ্ধশ্বাস জয়ের সেই মুহূর্তটা ভুলতে পারছি না

ঘটনাচক্রে এই দীপিকা আর অতনু এখন সুখী দম্পতিও। ওরাই ঠিক করবে, অলিম্পিক্সের ইতিহাসে ভারত তিরন্দাজির প্রথম পদকটা পাবে কি না।

শেষ ষোলোয় উঠে উচ্ছ্বাস অতনুর।

শেষ ষোলোয় উঠে উচ্ছ্বাস অতনুর। ছবি পিটিআই।

দোলা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২১ ০৫:৩৮
Share: Save:

বৃষ্টি পড়ছিল অঝোরে। চারদিকে একটা গুমোট ভাব। ভাবিইনি তার মধ্যে বৃহস্পতিবার ভোরে বাড়ির ড্রয়িংরুম এতটা উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। আর সেটা করবে আমাদের বরাহনগরেরই ছেলে অতনু দাস।

অথচ ২৪ ঘণ্টা আগেই মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল রাঁচীর সেই ছোট্ট মেয়েটা। যে কিনা বেশির ভাগ সময় টাটার অ্যাকাডেমিতেই কাটাত। জাতীয় শিবিরে আসত ট্রায়ালের সময়, শেষের দু’তিন মাস আমাদের সঙ্গে এসে প্র্যাক্টিস করে যেত। কী যে ভাল মেয়েটা, বলে বোঝাতে পারব না।

মনে আছে বছর কয়েক আগে একবার কোমর নিয়ে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিলাম। তখন আমাকে নিজের ব্যাগটাও বইতে হয়নি। ওই মেয়েটাই সে সব নিয়ে আমার সঙ্গে সঙ্গে ঘুরত। এমনকি টার্গেট বোর্ড থেকে আমার মারা তিরগুলোও তুলে আনত। এবং কী অসম্ভব লাজুক ছিল মেয়েটা। কোথাও ভাল স্কোর করলে সাংবাদিকরা তো ওকে খুঁজবেই। ও কিন্তু পালিয়ে বেড়াত। আমার কাছে এসে শুধু বলত, ‘‘দিদি তুমি চলো, তুমি কথা বলবে।’’ ভাবলে অবাক লাগে সেই মেয়েই আজকের দীপিকা কুমারী। যে কি না বিশ্বের এক নম্বরও। এবং টোকিয়োয় পদকের স্বপ্ন দেখাচ্ছে দেশের কোটি কোটি মানুষকে।

ঘটনাচক্রে এই দীপিকা আর অতনু এখন সুখী দম্পতিও। ওরাই ঠিক করবে, অলিম্পিক্সের ইতিহাসে ভারত তিরন্দাজির প্রথম পদকটা পাবে কি না। এখন ঘটনা হচ্ছে, আমাদের খেলার টেকনিক্যাল পরিপ্রেক্ষিতে সেটা কতটা সম্ভব? বিশ্বকাপ তিরন্দাজির একজন প্রাক্তন সোনাজয়ী হিসেবে আমার বিশ্লেষণ কিন্তু খুব সরল। যারা র‌্যাঙ্কিং রাউন্ড ও নকআউট পর্বে দুরন্ত পারফরম্যান্স দেখাতে পারে, তারা অবশ্যই দেশকেও পদক দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। শুধু ২৯-এর কাছাকাছি স্কোর করে যেতে হবে। দরকার ধারাবাহিকতা। চাপে ভেঙে পড়লে চলবে না। সঙ্গে দেখার, এই সময় টোকিয়োয় হাওয়ার দাপট না আমাদের সব স্বপ্ন এলেমেলো করে দেয়।

ইউমেনোশিমা পার্কে বৃহস্পতিবার অতনুকে তো আমার অসাধারণ লাগল। ভাবুন, দ্বিতীয় ম্যাচটা কার সঙ্গে ওকে লড়তে হল! ওহ জিন হায়েক লন্ডন অলিম্পিক্সের ব্যক্তিগত সোনাজয়ী। বলা যায় অভিজ্ঞতার শিখরে বসে লড়তে নেমেছিল। এই বয়সেও দক্ষিণ কোরিয়ার সোনাজয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। মজা হচ্ছে, ম্যাচ শুট আউটে যেতে এই হায়েক-কেই চাপে ফেলে দিল আমাদের বরাহনগরের ছেলে। একেবারে চোখে চোখ রেখে লড়ে গেল। তাও কোনওরকম স্নায়ুর চাপ ছাড়া। প্রথম সেটে ২৫-২৬ হেরেও দমেনি। পরপর দু’টি সেটে ফল সমান সমান থেকে গেল।

তখন তো রীতিমতো উত্তেজনায় কাঁপছি আমরা। চার নম্বর সেট ২৭-২২ অতনু জিততেই পরিষ্কার হয়ে গেল, ও লড়াই ছাড়বে না। বুঝলাম, এত বড় তিরন্দাজ হয়ে হায়েকও চাপে পড়ে যাবে! তবু শুটআউটে কোরীয় তারকা ৯ মেরে দেওয়ার পরে একটু চিন্তা হচ্ছিল। কারণ ম্যাচ বার করতে অতনুকে ১০ স্কোর করতেই হত। যে কাজটা বেশ কঠিন। তার উপরে চিন্তা বেড়ে গেল, শেষ শট নেওয়ার মুহূর্তে ও একটু বেশি সময় নেওয়ায়। তার পরেই সেই অবিশ্বাস্য দশ স্কোর! যা সত্যিই কলকাতার মেঘলা সকালটা উজ্জ্বল করে দিল। বিশেষ করে আমার।

দারুণ লাগছিল আর্চারি পার্কের গ্যালারিতে অতনুর জন্য দীপিকাকে গলা ফাটাতে দেখে। আমার তো মনে হচ্ছে, অতনুর এই অসাধারণ জয় ওকেও পরের রাউন্ডে দারুণ কিছু করতে অনুপ্রাণিত করবে। আত্মবিশ্বাসটা কিন্তু বড় একটা ব্যাপার। যেটা আমি অতনুর মধ্যে দেখেছি প্রথম রাউন্ডে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে তাইপেইয়ের য়ু ডংকে হারানোর সময়ও। প্রি-কোয়ার্টারেও কিন্তু ওকে আর এক অলিম্পিক্স পদকজয়ী জাপানের তাকাহারু ফুরুকাওয়ার বিরুদ্ধে লড়তে হবে। এখানে আমার একটাই কথা, যে হায়েক-কে হারিয়েছে, সে কেন তাকাহারুর বিরুদ্ধে পারবে না?

পাশাপাশি প্রি-কোয়ার্টারে দীপিকা পড়ল বিশ্বের আট নম্বর রুশ মেয়ে কেসিনা পেরোভার সামনে। আমার প্রার্থনা একটাই। প্রতিযোগিতার সময় হাওয়ার দাপট যেন কম থাকে। এ বার পদক প্রত্যাশী অনেকেই সম্ভবত এই একটা কারণে হেরে গিয়েছে। যদি এই জায়গাটায় ভাগ্য আমাদের সঙ্গে থাকে, তা হলে ভারতের সেরা তিরন্দাজ-দম্পতির কেউ এক জন অন্তত নিশ্চিত ভাবেই শুক্র আর শনিবারের সকালটা আরও উজ্জ্বল করে তুলবে। দীপিকা নামছে আজ, শুক্রবারই। অতনুর পদকের লড়াই শনিবার। ওদের জন্য রইল অনেক শুভেচ্ছা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE