জিরুঁর স্করপিয়ন কিক।
এই মরসুমে প্রিমিয়ার লিগ মানে সোনার মগজের লড়াই।
এমন একটা মঞ্চ যেখানে মাঠের থেকেও লড়াইটা মাঠের বাইরে। মাঠের এগারোর থেকেও চোখ ডাগআউটের সামনে বিশেষ একের উপর।
মাঠে ফুটবলারদের স্কিলের থেকেও আগ্রহ বেশি কোচেদের নোটপ্যাডে। যেখানে অভিনব সমস্ত ছকের ব্লু প্রিন্ট তৈরি করছেন মহাতারকা কোচেরা।
গত কয়েক সপ্তাহে মোরিনহো- কন্তেতেই আর শুধুমাত্র সীমাবদ্ধ নেই বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় লিগ। হয়ে উঠেছে বিস্ময় গোলের মঞ্চ। মাখিতারিয়ান ও জিরুঁর অভিনব স্করপিয়ন কিক। জর্ডন হেন্ডারসনের তিরিশ গজের ইনস্টেপে লব। পেদ্রোর নিঁখুত কার্ল। টিভি চালিয়ে এখন প্রিমিয়ার লিগ দেখা মানেই নব্বই মিনিট শেষে মনোরঞ্জনের প্যাকেজ ছাড়া অবিশ্বাস্য কোনও গোল হয়তো দেখতে পাবেন ফুটবলভক্তরা। প্রশ্নটা হচ্ছে, যে লিগের দলেরা ইউরোপে কিছু করতে পারে না, যাদের না আছে কোনও মেসি বা রোনাল্ডো, নেইমার বা লেভানডস্কি, যে লিগ গত ন’বছরে কোনও ব্যালন ডি’অর জয়ী ফুটবলার দিতে পারেনি, সেখানে প্রতি সপ্তাহ অন্তর এত ভাল গোল হচ্ছে কী করে? তা হলে কি সত্যিই ইপিএলের প্রতিভারা ন্যায্য প্রচার পান না? ভারতের অন্যতম সেরা সাইডব্যাক অলোক মুখোপাধ্যায় এর পিছনে আরও কিছু কারণ দেখছেন। ভারতীয় ফুটবলে এমনই এক বিস্ময় গোলের মালিক অলোক মুখোপাধ্যায়। পেনারলের বিরুদ্ধে যাঁর গোল আজও চোখে লেগে আছে ভক্তদের। অলোকের দাবি, টেকনিক যেমন আছে, আবার সঙ্গে ডিফেন্সের গলদও আছে। ‘‘এ সমস্ত গোল করতে গেলে টেকনিকের প্রয়োজন হয়। ইপিএলে এমন অনেক ফুটবলার আছে যারা সত্যিই খুব প্রতিভাবান। স্করপিয়ন কিক টাইমিংয়ের উপর নির্ভর করে। বলটা যখন তোমার পিছনে পড়ছে তখন অনুমানক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ঠিক সময় শটটা মারতে হবে। কিন্তু এটাও স্কীকার করতে হবে বিপক্ষ রক্ষণেও গলদ থাকে,’’ বলছেন অলোক। দুর্বল ডিফেন্সের কথাটা অবশ্য ভুল কিছু নয়। বহু দিন ধরেই তর্ক জারি আছে ইপিএল বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় লিগ হতে পারে, কিন্তু ডিফেন্ডারদের মান খুব খারাপ। প্রতিটা বিস্ময় গোলের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে একটা করে ডিফেন্সের ভুল। অলোক বললেন, ‘‘স্করপিয়ন কিকের সময় ডিফেন্স ঠিক করে মার্ক করেনি। মাখিতারিয়ানের গোলে ইব্রাহিমোভিচের ক্রসের আউটলেট বন্ধ করে দেওয়া উচিত ছিল। জিরুঁর সময়ও ভিড়ের মধ্যে কেউ মার্ক করেনি। এগুলো বেসিক ডিফেন্ডিং।’’
ইপিএলের গ্ল্যামার বা প্যাকেজে অনেক সময় ঢেকে যায় লিগের দুর্বলতাগুলো। সবচেয়ে উঁচুতে রাখাই যায় খারাপ ডিফেন্সকে। ইংলিশ ক্লাব মানেই এখন দাঁড়িয়ে গিয়েছে খারাপ ডিফেন্স। যারা ঘরের মাঠে দুর্দান্ত খেলবে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ইউরোপের হেভিওয়েটদের সামনে পড়লে আর উত্তর খুঁজে পায় না। শেষ কয়েক বছর পাওলো মালদিনি থেকে জেইমি ক্যারাঘার, সবাই আঙুল তুলেছেন ইপিএলে ডিফেন্সের মান নিয়ে। পঞ্চাশ মিলিয়নের জন স্টোন্স থেকে গ্যারি ক্যাহিল। ক্রিস স্মলিং থেকে গ্যাব্রিয়েল। ইংলিশ ক্লাবের ডিফেন্স মানেই নড়বড়ে। কিন্তু এটা তো গেল একটা দিক। প্রযুক্তির যুগে আজ বলেরও ভূমিকা পাল্টেছে। যার ভূমিকা প্রচুর এই বিস্ময় গোলের পিছনে।
বর্তমানে প্রতিটা বড় লিগে ব্যবহৃত ফুটবল আগেভাগে পরীক্ষা করে দেখা হয়। উইকিপিডিয়া ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, চলতি মরসুমে প্রিমিয়ার লিগের বল অনেক বেশি হাল্কা। অল ওয়েদার প্রযুক্তি থাকায় বর্ষাতেও কোনও সমস্যা হয় না। আবার ফ্লো মোশন রয়েছে। অর্থাৎ ঘন কুয়াশার মধ্যে বল দেখতে সমস্যা হবে না কোনও ফুটবলারের। সমস্যা বলতে একটাই, বলের সুইং। যা আয়ত্তে থাকছে না গোলকিপারের।
আইএসএলে দিল্লি ডায়নামোস এ বার ইংল্যান্ডে প্রাক্ মরসুম সেরেছিল। প্রিমিয়ার লিগে খেলা বল দিয়েই তারা অনুশীলন করেছে। ওয়েস্ট ব্রমের বিরুদ্ধেও খেলেছিল। দিল্লিতে নজর কাড়া পারফরম্যান্স দেওয়া সৌভিক চক্রবর্তী বললেন, ‘‘বলগুলো আগের তুলনায় খুব হাল্কা। ভাল শট মারা যায়। হাওয়ায় সুইং খায়। সোয়ার্ভও হয়। তাই ফ্রি-কিক বা দূরপাল্লার শট মারা যায়।’’
বিস্ময় গোলের পিছনে তাই বলের অবদানও অনেক। গোলকিপাররা কোনও জবাব খুঁজে পাচ্ছে না যার বিরুদ্ধে। অলোক বললেন, ‘‘হ্যাঁ, বলটা তো অবশ্যই ফ্যাক্টর। বলগুলো যে রকম ভাবে সোয়ার্ভ করছে গোলকিপারের কিছু করার থাকছে না। অবিশ্বাস্য অ্যাঙ্গল থেকে ঢুকছে।’’
প্রিমিয়ার লিগ মানে তাই এখন গোলের মনোরঞ্জনে ভরপুর। আরও কয়েকটা বিস্ময় গোল দেখতে পেলেও তাই অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
ইপিএলে বিস্ময় গোলের কোলাজ
হেনরিক মাখিতারিয়ান- স্করপিয়ন কিক বনাম সান্ডারল্যান্ড
অলিভিয়ার জিরুঁ- স্করপিয়ন কিক বনাম ক্রিস্টাল প্যালেস
পেদ্রো- কার্লার বনাম টটেনহ্যাম হটস্পার
জেফ হেনড্রিক- ভলি বনাম বোর্নমাউথ
জর্ডন হেন্ডারসন- ইনস্টেপে ৩০ গজের লব বনাম চেলসি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy