Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দ্রাবিড়-বাণী ভরসা করেই বিশ্বমঞ্চে ঝাঁপাচ্ছেন ঈশান

রাত তিনটের সময় ঘুম থেকে উঠে ছেলের জন্য রান্না করে তাঁকে নিয়মিত কলকাতায় অনুশীলন করাতে নিয়ে যেতেন ঈশানের মা রিতা পোড়েল। পরিবার কবাডির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটকেই বেছে নিয়েছিলেন ঈশান।

প্রত্যয়ী: আত্মবিশ্বাসী ঈশান। সামনে যুব বিশ্বকাপের চ্যালেঞ্জ। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

প্রত্যয়ী: আত্মবিশ্বাসী ঈশান। সামনে যুব বিশ্বকাপের চ্যালেঞ্জ। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:০৯
Share: Save:

যুব বিশ্বকাপে নজর কাড়ার স্বপ্ন নিয়ে নিউজিল্যান্ড গিয়েছেন তিনি। তিনি বাংলার তরুণ প্রতিশ্রুতিমান পেসার ঈশান পোড়েল।

চন্দননগরের ন্যাশনাল স্পোর্টিং ক্লাবে প্রদীপ মণ্ডলের কাছে তাঁর ক্রিকেটের হাতেখড়ি। ডেল স্টেন, ব্রেট লিকে দেখেই তিনি প্রথম পেসার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। ভিড় ট্রেনে চন্দননগর থেকে হাওড়া যাওয়ার পথে যে স্বপ্ন আস্তে আস্তে পূর্ণতা পায়। এখন বিশ্ব মঞ্চে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার লড়াইয়ে নামছেন ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দলে থাকা একমাত্র বাঙালি ক্রিকেটার।

রাত তিনটের সময় ঘুম থেকে উঠে ছেলের জন্য রান্না করে তাঁকে নিয়মিত কলকাতায় অনুশীলন করাতে নিয়ে যেতেন ঈশানের মা রিতা পোড়েল। পরিবার কবাডির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটকেই বেছে নিয়েছিলেন ঈশান। নিউজিল্যান্ড পাড়ি দেওয়ার আগে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ঈশান বলেন, ‘‘ভারতের জার্সি পরে খেলার জন্যই ছোটবেলা থেকে পরিশ্রম করছি। মা, বাবা (চন্দ্রনাথ পোড়েল) আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আশা করছি তাঁদের স্বপ্নপূরণ করতে পারব।’’

দিন চারেক আগেই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলতে নিউজিল্যান্ড উড়ে গিয়েছে ভারতীয় দল। তার আগে দলের কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের মন্ত্র বেশ মন কেড়েছে ঈশানের। মুম্বই থেকে ফোনে ঈশান বলেছেন, ‘‘নিউজিল্যান্ড যাওয়ার আগে রাহুল স্যার আমাদের বলেছিলেন, আগামী ছ’সপ্তাহ আমাদের জন্য জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময় হতে চলেছে। ভাল পারফর্ম করতে পারলে জীবনে আর কখনও পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না।’’ সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘‘বিশ্বের সামনে নিজেকে প্রমাণ করার এটাই বিশাল সুযোগ।’’

দশ বছর বয়সে মায়ের সঙ্গেই উৎপল চট্টোপাধ্যায় ক্রিকেট কোচিং ক্যাম্পে ক্রিকেট শিখতে যেতেন ঈশান। সেখানেই কোচ বিভাস দাসের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ। এর আগেও চন্দননগরের ক্যাম্প থেকে প্রচুর ছেলে বিভাসবাবুর কাছে প্রশিক্ষণ নিতে এসেছেন। কিন্তু প্রথম দিন থেকেই ঈশানের মধ্যে প্রতিভার খোঁজ পেয়েছিলেন বিভাসবাবু। ঈশানের খেলা দেখে তাঁর প্রথম কোচ প্রদীপবাবুকে একটি এসএমএস করেছিলেন বিভাসবাবু যা আজও তাঁর কাছে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ঈশানের খেলা দেখে আমি প্রদীপকে লিখেছিলাম ‘ছেলেটি অনেক দূর যাবে’। আজ সেই দিনটার কথা খুবই মনে পড়ছে।’’

প্রবল লড়াই করে শহরতলি থেকে কলকাতায় ক্রিকেটের প্রশিক্ষণ নিতে আসার চ্যালেঞ্জ ছিলই। তবে এই কঠিন চ্যালেঞ্জই ঈশানের লড়াকু মানসিকতা তৈরি করতে সাহায্য করেছে। চন্দননগর থেকে সকাল ৮টার মধ্যে ময়দানে খেলতে আসতেন তিনি। পরে সকালে ম্যাচ থাকলে বিভাস স্যারের কাছেই থাকতেন ঈশান। বাংলার উদীয়মান পেসার বলেন, ‘‘প্রথম কয়েক দিন ভিড় ট্রেনে উঠতে সমস্যা হতো। কিন্তু সেখান থেকেই আমি লড়াই করার প্রথম তাগিদ পেয়েছি। তাই মাঠে যত শক্তিশালী প্রতিপক্ষই থাকুক না কেন, আমি ভয় পাই না।’’

এর আগে বাংলা থেকে শ্রীবৎস গোস্বামী, সন্দীপন দাস, রবিকান্ত সিংহরাও অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলেছেন। অথচ বেশি দূর এগোতে পারেননি। ঈশান অবশ্য এই সব ভাবতে নারাজ। তিনি সামনে রাখছেন বিরাট কোহালি, রবীন্দ্র জাডেজাদের উদাহরণ। যাঁরা অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ থেকে উঠে এসেছেন।

সে প্রসঙ্গ তুলে ঈশান বলেন, ‘‘জাডেজা, কোহালিরা একই জায়গা থেকে উঠে নিয়মিত ভারতীয় দলের হয়ে খেলছে। এর চেয়ে বড় প্রেরণা আর কী হতে পারে? আমিও চাই এক দিন ভারতীয় দলে খেলতে।’’

কঠিন পথ পেরিয়ে নিজেকে প্রমাণ করার মঞ্চে পৌঁছনোর রাস্তাটা করে নিয়েছেন ঈশান। এ বার বিশ্বমঞ্চে তাঁর স্বপ্নপূরণ হয় কি না, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE