Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Risabh Pant

ভারতীয় কিপারের খেলা সেরা ইনিংস

ধারাভাষ্যকাররা বলছিলেন, পুজারার শরীরে এ দিন ১১ বার অস্ট্রেলীয়দের বিষাক্ত বল ছোবল মেরেছে। কখনও বুকে, কখনও মাথায়, কখনও আঙুলে। কিন্তু টলাতে পারেনি।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৩২
Share: Save:

ব্রিসবেন দুর্গের পতন কি একটা অলৌকিক ঘটনা? ব্রিসবেন দুর্গের পতন কি নিছকই একটা অঘটন? না কি শুধুই একটা ফিরে আসার কাহিনি?

না। ব্রিসবেনে ভারতের অবিশ্বাস্য টেস্ট জয় এর থেকেও আরও বড় কিছু। এই জয়ের ব্যাপ্তি আরও বিশাল। যেখানে নবীন ব্রিগেডের লড়াইয়ে বিচ্ছুরিত হয়েছে এক নতুন ভারতের কাহিনি। যে কাহিনির অনামী নায়কেরা ভয় কাকে বলে জানে না। যারা প্রতিটা পদক্ষেপে বুঝিয়ে দেয়, মরার আগে এক ইঞ্চি জমি আমরা ছাড়ব না।

শেষ দিনে তখন ৫২ নম্বর ওভার চলছে। নেথান লায়নের দু’নম্বর বলটা অফস্টাম্পের হাতখানেক বাইরে পড়ে লেগস্টাম্পের বাইরে থাকা অজিঙ্ক রাহানের পায়ে এসে লাগে। ওই সময় বুকটা ধুক করে উঠেছিল। তখনও অনেক সময় বাকি। মনে হচ্ছিল, পঞ্চম দিনের ফাটল ধরা পিচে কি টিকে থাকতে পারবে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা? সত্যি কথা বলতে কী, ভারত যে ওই অবস্থা থেকে জেতার জন্য ঝাঁপাবে, তা অনেকের মতো আমিও ভাবতে পারিনি।

কিন্তু ঋষভ পন্থ আর ভারতের কয়েকটা অল্প বয়সি ছেলে অন্য রকম ভেবেছিল। বিপক্ষে প্যাট কামিন্স না কে বল করছে, ওরা দেখেনি। পরিসংখ্যান ওরা মাথায় রাখেনি। যার ফল, তিন উইকেটে ব্রিসবেন টেস্ট জয় আর ২-১ স্কোরে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি ঘরে আনা।

এই সিরিজে ঋষভের খেলা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছিল। তর্ক উঠেছিল, ব্যাটসম্যান-উইকেটকিপার না উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান, কাকে খেলানো উচিত? আমাদের সময়ে কিপিং দক্ষতার উপরেই জোর দেওয়া হত। কিন্তু গত কুড়ি বছরে এই ধারণাটা বদলে গিয়েছে। এখন কিপারদেরও অলরাউন্ডার হতে হয়। মানে ব্যাটিংটা মজবুত হতেই হবে।

ঋষভকে দেখে আমার ফারুক ইঞ্জিনিয়ারের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। কিপার যে ভাল ব্যাটসম্যান হতে পারে, সেটা ইঞ্জিনিয়ারই বুঝিয়েছিল। তাও আবার ও রকম আগ্রাসী ব্যাটসম্যান। ১৯৬৭ সালে তৎকালীন মাদ্রাজে ওপেন করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে লাঞ্চের আগেই প্রায় সেঞ্চুরি করে বসেছিল ইঞ্জিনিয়ার। এর পরে সৈয়দ কিরমানি থেকে নয়ন মোঙ্গিয়া— অনেক কিপার এসেছে যাদের ব্যাটের হাতটা খারাপ ছিল না। তার পরে শুরু হয় মহেন্দ্র সিংহ ধোনির যুগ। সেই ব্যাটসম্যান-কিপারের ব্যাটনটাই এখন হাত বদলে এসেছে ঋষভের কাছে।

ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে উইকেটকিপাররা অনেক ভাল এবং গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছে। ধোনির দুটো ইনিংস তো সবার আগে মনে পড়বে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ফৈজলাবাদে ১৪৮ আর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চেন্নাইয়ে ২২৪। কিন্তু সব কিছু মাথায় রেখেই বলব, এ দিন ব্রিসবেনে ঋষভ যে ইনিংসটা খেলল, তা ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে আমার দেখা কোনও কিপারের সেরা ইনিংস। ম্যাচের পরিস্থিতিতে ঋষভের ১৩৮ বলে অপরাজিত ৮৯ যে কোনও ডাবল সেঞ্চুরির চেয়ে দামি। ঋষভের ব্যাটিংয়ে এর আগে একটা খুঁত ছিল। দুম করে উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসত। এ দিন দেখলাম, চ্যালেঞ্জটা যত কঠিন হয়েছে, ততই নিজেকে সংযত রেখে ব্যাট করেছে। শুরুতে শুভমন গিলের জমাট ব্যাটিং। শেষ দিকে ওয়াশিংটন সুন্দরের গুরুত্বপূর্ণ ২২ রান। কিন্তু এর মাঝে এক জনের কথা ভুললে চলবে না। চেতেশ্বর পুজারা।

পুজারার ব্যাটিং দেখতে দেখতে ‘রকি’ সিনেমার একটা ডায়লগ মনে পড়ে যাচ্ছিল। কোচ যেখানে বক্সারকে বলছেন, ‘‘তুমি ক’টা ঘুষি প্রতিপক্ষকে মারতে পারলে, সেটা বড় কথা নয়। তুমি মার খেয়ে ক’বার উঠে দাঁড়ালে, সেটাই আসল কথা।’’ ধারাভাষ্যকাররা বলছিলেন, পুজারার শরীরে এ দিন ১১ বার অস্ট্রেলীয়দের বিষাক্ত বল ছোবল মেরেছে। কখনও বুকে, কখনও মাথায়, কখনও আঙুলে। কিন্তু টলাতে পারেনি।

পুজারার ২১১ বলে ৫৬ রানের ইনিংসটা কিন্তু ঋষভদের কাজটা সহজ করে দিয়েছে। অস্ট্রেলীয় আক্রমণের বিষটা শুষে নিতে পেরেছে পুজারা। হয়তো বা তাতিয়ে দিয়েছে ঋষভদেরও। দলের এক জন সিনিয়র ও রকম ভাবে আঘাত খেয়েও খেলে যাচ্ছে, এটা দেখে যে কোনও তরুণেরই রক্ত গরম হয়ে যাওয়ার কথা। আর ঋষভদের রক্ত গরম হয়ে গেলে কী হতে পারে, সেটা অস্ট্রেলীয়রা বোধ হয় কোনও দিনই ভুলবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Risabh Pant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE