Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
কঠোর ফিটনেস পরীক্ষায় পাশ করলে তবেই ছাড়
Cricket

রোহিত-ইশান্তের অস্ট্রেলিয়া ভাগ্য দ্রাবিড়দের হাতে

ভারতীয় ক্রিকেটের অন্দরমহলে খোঁজ নিতে গিয়ে কিন্তু মনে হচ্ছে, রোহিতদের অস্ট্রেলিয়া সফরে যাওয়া এখনও একশো ভাগ নিশ্চিত নয়।

সংশয়: রোহিত শর্মা ও ইশান্ত শর্মাকে (ডান দিকে) নিয়ে অনিশ্চয়তার মেঘ যেন কাটছেই না। জাতীয় অ্যাকাডেমিতে ফিট হওয়ার পরীক্ষা চলছে তাঁদের। ফাইল চিত্র

সংশয়: রোহিত শর্মা ও ইশান্ত শর্মাকে (ডান দিকে) নিয়ে অনিশ্চয়তার মেঘ যেন কাটছেই না। জাতীয় অ্যাকাডেমিতে ফিট হওয়ার পরীক্ষা চলছে তাঁদের। ফাইল চিত্র

সুমিত ঘোষ 
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২০ ০৫:৩৩
Share: Save:

রোহিত-রহস্যের কিনারা হওয়া দূরে থাক, ক্রমশ আরও জটিল হচ্ছে। তা সে যতই মুম্বই ইন্ডিয়ান্স অধিনায়ক নিজে দাবি করুন যে, তিনি হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট থেকে অনেকটাই সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। এই মুহূর্তে বেঙ্গালুরুর জাতীয় অ্যাকাডেমিতে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠার জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন রোহিত। তাঁর সঙ্গে ইশান্ত শর্মাও রয়েছেন। বোর্ড জানিয়েছে, দু’জনেই টেস্ট দলে যোগ দেবেন যদি ফিট ঘোষিত হন।

ভারতীয় ক্রিকেটের অন্দরমহলে খোঁজ নিতে গিয়ে কিন্তু মনে হচ্ছে, রোহিতদের অস্ট্রেলিয়া সফরে যাওয়া এখনও একশো ভাগ নিশ্চিত নয়। বরং তা অনেকটাই নির্ভর করছে ধাপে-ধাপে তিনি কতটা ফিটনেস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেন, তার উপরে। রোহিতকে প্রথমে জাতীয় অ্যাকাডেমিতে ফিটনেস পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। সেখানে তাঁর পরীক্ষকের নাম রাহুল দ্রাবিড়। জাতীয় অ্যাকাডেমির প্রধান এখন দ্রাবিড়-ই। তাঁর সামনে, অ্যাকাডেমির ফিজিয়ো, ট্রেনারদের কড়া নজরদারিতে রোহিতের ফিটনেস যাচাই করা হবে। দ্রাবিড় একা নিজের কোর্টে বল রাখেননি। জাতীয় নির্বাচকমণ্ডলীর প্রধান সুনীল জোশীকে হাজির রাখছেন রোহিতের ফিটনেস যাচাইয়ের প্রক্রিয়ায়। ঘটনা হচ্ছে, এই জোশীর নেতৃত্বে জাতীয় নির্বাচক কমিটিই প্রথমে রোহিতকে অস্ট্রেলিয়াগামী তিনটি দলের কোনওটিতেই রাখেনি। এখন একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে জোশীদের রোহিতকে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট উড়ানে ওঠাতে গেলে একশো শতাংশ নিশ্চিত হতে হবে ফিটনেস নিয়ে।

ভারতীয় ক্রিকেটের প্রভাবশালী এক জন সোমবার বললেন, ‘‘কোনও কারণে যদি অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট খেলতে নেমে ফের হ্যামস্ট্রিং সমস্যায় আক্রান্ত হয় রোহিত, তা হলে রাহুল দ্রাবিড় পরিচালিত জাতীয় অ্যাকাডেমি এবং নির্বাচক কমিটির প্রধানের দিকেই আঙুল উঠবে। দ্রাবিড়ও নিশ্চয়ই একশো শতাংশ নিশ্চিত হয়ে তবেই সবুজ সংকেত দেবে।’’ কারও কারও সত্যিই বিস্ময়কর লাগছে যে, আইপিএল শেষ হয়েছে ১০ নভেম্বর। ১৩ দিন পেরিয়ে গেল। রোহিত বেশ কয়েক দিন ধরে জাতীয় অ্যাকাডেমিতে পড়ে আছেন। তা হলে ফিট ঘোষণা হতে এত সময়ই বা লাগছে কেন? প্রথা অনুযায়ী, জাতীয় অ্যাকাডেমি থেকে ফিট সার্টিফিকেট না পাওয়া পর্যন্ত রোহিতের অস্ট্রেলিয়া উড়ানের সিট বুক হওয়া সম্ভব নয়।

যে-হেতু রোহিতকে টেস্ট দলের জন্য পাঠানো হবে, তাঁর ফিটনেস পরীক্ষাও হবে টেস্ট-কেন্দ্রিক। যা অবশ্যই ওয়ান ডে বা আইপিএল টি-টোয়েন্টির চেয়ে অনেক কঠিন। ক্রিকেটের মতো ফিটনেস পরীক্ষাতেও নানা বিবর্তন ঘটেছে। আগের মতো আর আধ ঘণ্টার দৌড়াদৌড়ি করেই মুক্তি পাওয়া যায় না। ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রে সারা দিন ধরে অন্তত দু’বার নেটে ব্যাট করিয়ে, ফিল্ডিং করিয়ে সে দিনের মতো ফেরত পাঠিয়ে বলে দেওয়া হয়, পরের দিন সকাল ন’টায় হাজির হতে হবে। তখন আবার এসে ফিল্ডিং করো, ক্যাচ নাও। এক-আধ দিন নয়, এ ভাবে অন্তত টানা তিন-চার দিন নিংড়ে নেওয়া পরিশ্রম করানোর পরে পাশ করলে তবেই ‘ফিট সার্টিফিকেট’ দেওয়া হয়। ইশান্ত শর্মা বোলার, তাঁর ফিটনেস পরীক্ষা হচ্ছে, পনেরো-কুড়ি ওভার বল করিয়ে পরের সকালে আবার এসে বোলিং করো। টেস্ট ক্রিকেটে এমনই তো ধকল নিতে হবে!

এখানেই শেষ নয়। জাতীয় অ্যাকাডেমির পরীক্ষায় পাশ করে রোহিতরা অস্ট্রেলিয়া পৌঁছলে টিম ম্যানেজমেন্ট ফের ফিটনেস পরীক্ষা নেবে তাঁদের। সেখানে তাঁদের জন্য অপেক্ষা করবেন ভারতীয় দলের ফিজিয়ো, ট্রেনার। এঁদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই রোহিত প্রথমে অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য বিবেচিত হননি। অস্বস্তিকর প্রশ্ন উঠছে, তখন তা হলে কোন রিপোর্টের ভিত্তিতে রোহিতকে পুরো সফর থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হল? দলের মধ্যেও কি খুব সৌহার্দের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে রোহিতের মতো সিনিয়রের ফিটনেস নিয়ে চলতে থাকা সিরিয়ালে? মনে তো হয় না।

ভারতীয় দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রী রবিবার বলেছেন, তিন-চার দিনের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার উড়ান না ধরতে পারলে রোহিত-ইশান্তদের পক্ষে টেস্টে খেলা কঠিন হয়ে যাবে। বোঝাই যাচ্ছে, রোহিত-ইশান্তের ফিটনেস নিয়ে এসপার-ওসপার করার চাপ বাড়ছে বোর্ডের উপরে। অস্ট্রেলিয়ায় কোভিড স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে খুবই কড়াকড়ি। স্টিভ স্মিথদের দেশে পৌঁছে ১৪ দিনের নিভৃতবাস সারতেই হবে। জৈব সুরক্ষা বলয় নিয়ে এতই কড়াকড়ি যে, পিতৃবিয়োগের পরে মহম্মদ সিরাজ পর্যন্ত দেশে ফিরতে পারলেন না। দেশে ফিরে আবার অস্ট্রেলিয়া গিয়ে ১৪ দিনের নিভৃতবাস সেরে টেস্ট খেলতে নামা কার্যত অসম্ভবই হত তাঁর পক্ষে। সিরাজ ঠিক করলেন, সুযোগ পেলে অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় টেস্ট ক্যাপ পরে সেরা শ্রদ্ধাঞ্জলি দেবেন প্রয়াত বাবাকে। হায়দরাবাদের রাস্তায় অটোচালক পিতা ভাবতেন, আরও দু’টো অতিরিক্ত ট্রিপ করি। ফাস্ট বোলার হতে চাওয়া ছেলের বোলিং শু-টা যদি তাতে কিনে ফেলা যায়!

চোখে জল এনে দেওয়া এই সিরাজ-কাহিনির আবেগের পাশেই চলছে রোহিতদের নিয়ে নাটক। আদৌ কি রোহিত-ইশান্ত ফিটনেস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবেন? কবে টেক-অফ করবেন তাঁরা? কোন শহরে ল্যান্ডিং? কোথায় নিভৃতবাস পর্ব? অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্টে নামতে পারবেন?

ধোঁয়াশা আর ধোঁয়াশা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE