গাফিলতি কার? প্রশাসনের? না ইচ্ছা করে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে ছয় ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়ের? এই প্রশ্নগুলোই ঘুরছে ভারতের ব্যাডমিন্টনে। ভারত থেকে জার্মানিতে ‘ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি গেমস’ খেলতে গিয়েছিলেন ১২ জন। কিন্তু ছ’জনের নামই জমা পড়ল না। এই ঘটনায় বিতর্ক শুরু ভারতীয় ব্যাডমিন্টনে।
ট্রায়ালের পর ২১০ জনের মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া হয়েছিল ১২ জনকে। তাঁরা হলেন সানিথ দয়ানন্দ, সতীশ কুমার, দেবিকা সিহাগ, তাসনিম মীর, বর্ষিনী বিশ্বনাথ, বৈষ্ণবী খাড়েকর, রোহন কুমার, দর্শন পুজারি, অদিতি ভাট, অবিনাশ মোহান্তি, বিরাজ কুভালে ও আলিশা খান। তাঁদের মধ্যে সানিথ, সতীশ, দেবিকা, তাসনিম, বর্ষিনী ও বৈষ্ণবীর নাম জমা পড়েছে। বাকি ছ’জনের নাম জমাই দেননি প্রশাসকেরা। ফলে তাঁরা সেখানে গিয়েও কোর্টে নামতে পারেননি।
প্রতিযোগিতার আগে ১৬ জুলাই ছিল ম্যানেজারদের বৈঠক। সেখানেই খেলোয়াড়দের নামের তালিকা জমা দিতে হত। ভারতের দলের ম্যানেজার হিসাবে গিয়েছেন বিভি রাও ও অজিত মোহন। অভিযোগ, তাঁরা নাকি বৈঠকে ছ’জনের নাম বলেন। আলিশা সমাজমাধ্যমে এই বিষয়ে সুর চড়িয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “এটা কোনও ভুল নয়। আমাদের কেরিয়ার নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা ম্যাচ হারিনি। আমরা খেলার সুযোগই পাইনি। ওখানে আমাদের নাম বলাই হল না। যাদের নাম বলা হয়েছে তাদের মধ্যে কে সিঙ্গলস, কে ডাবলস, কে মিক্সড ডাবলস খেলবে, সেটাও বলা হয়নি। আমরা ন্যায়বিচার চাই।”
যে ছ’জন খেলেছেন, তাঁরা দেশকে আশাহত করেননি। গ্রুপ পর্বে ম্যাকাউ, আমেরিকাকে হারিয়েছে ভারত। হেরেছে হংকংয়ের কাছে। কোয়ার্টার ফাইনালে মালয়েশিয়াকে হারানোর পর সেমিফাইনালে চাইনিজ় তাইপেইয়ের কাছে হেরেছে তারা। ব্রোঞ্জ জিতেছে ভারত। তাতে অবশ্য বিতর্ক কমছে না।
আলিশাদের অভিযোগ, দল ব্রোঞ্জ জিতেছে। কিন্তু সেটা যে ছ’জন খেলেছেন, তাঁদের কৃতিত্ব হিসাবেই দেখা হবে। তাঁরাই পদক পাবেন। ২১০ জনের মধ্যে লড়ে তাঁরা যে সুযোগ পেলেন, তাতে কী লাভ হল। তাঁরা তো আর পদক পাবেন না। শংসাপত্রেও তাঁদের নাম থাকবে না। তা হলে তাঁদের কেরিয়ারের কী হবে? আলিশাদের দাবি, ভারতীয় ব্যাডমিন্টন সংস্থার উচিত, এই ঘটনার তদন্ত শুরু করা। যাঁদের গাফিলতিতে এটা হল তাঁদের শাস্তি দেওয়া। এমনকি, অন্তত শংসাপত্রে তাঁদের নাম রাখার দাবি করেছেন তাঁরা।
ভারতে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে খেলোধুলোর দিকে নজর রাখার দায়িত্ব ‘অল ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি’ বা এআইইউ-র। এই সংস্থার বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠছে। সংস্থার সচিব পঙ্কজ মিত্তল সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, “আমরা খবর পেয়েছি। ঘটনার তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” দর্শন নামের এক খেলোয়াড়ের অভিযোগ, যে জার্সি তাঁদের দেওয়া হয়েছিল তাতেও ভুল ছিল। জার্সিতে শুধুমাত্র পদবি থাকে। তার বদলে পুরো নাম লেখা ছিল। পাশাপাশি দেশের নামও খুব ছোট হরফে লেখা ছিল। ফলে প্রতি রাউন্ডে ১০ লক্ষ টাকা করে জরিমানা দিতে হয়েছে। সেমিফাইনালের আগে সঠিক জার্সি পেয়েছেন খেলোয়াড়েরা।
আরও পড়ুন:
এই বিতর্ক আরও বাড়িয়েছেন ভারতের প্রতিনিধি দলের প্রধান বলজিৎ সিংহ। তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, “এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক যে ঐতিহাসিক এই জয় উপভোগ করার বদলে আমরা বিতর্কে জড়াচ্ছি। আমাদের লিখিত আকারে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের সঙ্গে আমরা কথা বলব।” পাশাপাশি তিনি এ-ও জানিয়েছেন যে, শক্তিশালী দল নামানোর জন্য ইচ্ছা করেই নাকি ছ’জনের নাম জমা দেওয়া হয়েছিল। তাতে আরও ক্ষুব্ধ বাদ পড়া খেলোয়াড়েরা।
বলজিতের বিরুদ্ধে দু’রকমের কথা বলার অভিযোগ করেছেন আলিশা। তিনি সমাজমাধ্যমে লেখেন, “বলজিৎ সিংহ যে ভাবে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছেন তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। উনি বলছেন, আগে থেকেই কোচেরা ঠিক করে নিয়েছিল যে ছ’জনকেই খেলানো হবে। তাই যদি হবে তা হলে কয়েক ঘণ্টা আগে বলজিৎ সিংহ আমাদের সামনে কান্নাকাটি করলেন কেন? আমাদের কাছে ক্ষমা চাইলেন কেন? উনি কেন বললেন যে ওঁর চাকরি চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে? কেন বললেন সব সত্যি সামনে আসবে?” এই বিষয়ে ভারতীয় ব্যাডমিন্টন সংস্থা এখনও পর্যন্ত কিছু বলেনি। কিন্তু যে ভাবে বিতর্ক বেড়ে চলেছে তাতে না শিঘ্রই আসরে নামতে হয় তাদের।