Advertisement
E-Paper

ক্লাব কর্তাদের দোষে ডুবছে বাংলার ফুটবল

ফুটবল মক্কার সব ঐতিহ্য এবং গৌরবকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ট দেখিয়ে দেশের  সেরা তিনটি ট্রফি এ বার নিয়ে গিয়েছে পঞ্জাব, চেন্নাই এবং বেঙ্গালুরু।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:০৬
Share
Save

এ রকম অন্ধকার মরসুম কখনও এসেছে বাংলার ফুটবলে?

ফুটবল মক্কার সব ঐতিহ্য এবং গৌরবকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ট দেখিয়ে দেশের সেরা তিনটি ট্রফি এ বার নিয়ে গিয়েছে পঞ্জাব, চেন্নাই এবং বেঙ্গালুরু। অতীতে কখনও এ রকম হয়েছে বলে মনে করা যাচ্ছে না। পরপর দু’ম্যাচে পাঁচ বছর বয়সী একটা চূড়ান্ত পেশাদার দল ঐতিহ্যের মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলকে গুণে গুণে চার গোল করে আট গোল দিয়েছে, এ রকমও তো হয়নি কখনও। তাতে অবশ্য লাল-হলুদ বা সবুজ-মেরুন কর্তাদের কোনও হেলদোল আছে বলে মনে হয় না। বেঙ্গালুরুতে আলবের্তো রোকার দল সুনীল ছেত্রীর নেতৃত্বে শনিবার সন্ধ্যায় কেক কেটে উৎসব করছে। নীল সৈন্যরা ট্রফি নিয়ে রাস্তায় মিছিল করেছেন। তখন দমদম বিমানবন্দরে নেমে ইস্টবেঙ্গল টিডি, কোচ, ফুটবলাররা একে অন্যকে সাপ বা বেজি বলে সম্বোধন করছেন। কেউ কেউ আবার সাংবাদিকদের ডেকে জানিয়ে দিয়েছেন ‘আর এই ক্লাবে পরের মরসুমে খেলব না।’

অন্যদিকে, সেমিফাইনালে বিশ্রী হেরে ফেরা মোহনবাগানের অবস্থা আরও করুণ। কর্তাদের মধ্যে রাজনীতি চলছে জোর কদমে। কবে নির্বাচন হবে, ক্ষমতা কার হাতে থাকবে তা নিয়েই ব্যস্ত কর্তারা। অনেক ফুটবলারের মাইনে বাকি দু’তিন মাস করে। কে দেবে টাকা কেউ জানে না? দুই প্রধানের অন্তত পঁচিশ জন ফুটবলার তাদের এজেন্টদের ধরেছিলেন যে করেই হোক আইএসএলের ক্লাব খুঁজে দিতে। এটিকের দল গঠনের দায়িত্বে থাকা সঞ্জয় সেনের মোবাইলে অনুরোধের পর অনুরোধ এসেছে সুযোগ দেওয়ার জন্য। বিদেশিরাও তাতে সামিল।

বাংলার ফুটবলের এই দৈন্যদশা কেন? কেন হঠাৎ এ রকম অন্ধকার?

নানা কারণ উঠে আসছে এ জন্য। চরম অপেশাদারিত্ব, অর্থের অভাব, ভুল বিদেশি নির্বাচন এবং ভুমিপুত্র ফুটবলারদের উপর আস্থা না রাখাকেই দায়ী করছেন অনেকেই। এর টাটকা উদাহরণ হতে পারে সুপার কাপ। এই টুর্নামেন্ট খেলতে যাওয়ার আগে দুই প্রধান ও এটিকের অবস্থা কেমন ছিল? কেমন ছিল চ্যাম্পিয়ন বেঙ্গালুরুর অবস্থা দেখে নেওয়া যাক।

ইস্টবেঙ্গল—কোচের মাথায় হঠাৎ বসিয়ে দেওয়া হল টেকনিক্যাল ডিরেক্টর। যে দিন থেকে বসানো হল সে দিন থেকে সুভাষ ভৌমিক আর খালিদ জামিলের মধ্যে হাতাহাতিটা ছাড়া সবই হল। কর্তাদের ঘনিষ্ঠ এক প্রাক্তন ফুটবল রিক্রুটার রীতিমতো বিবৃতি দিয়ে জানালেন, আল আমনা আর ইউসা কাতসুমির সঙ্গে পরের মরসুমের চুক্তি পাকা। এর পর বাকি বিদেশিরা বা অন্যরা কী করতে পারেন? তাঁরা মন দিয়েই বা খেলবেন কেন? ডুডু ওমাগবেমিদের তো পেশির চোটের চেয়ে ‘বুকের চোট’ বেশি হবেই।

মোহনবাগান— ভুবনেশ্বর খেলতে যাওয়ার আগে হঠাৎ পদত্যাগ করে বসলেন দায়িত্বে থাকা দুই শীর্ষ কর্তা। শুরু হল চাপান উতোর। সচিবের সঙ্গে ঝামেলায় উত্তাল ক্লাবের অন্দর। প্রতিদিন বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতি। এ দিকে ফুটবলারদের মাইনে বাকি। তারা বুঝতে পারছেন না কী হবে? এই অবস্থায় খোলা মনে খেলা সম্ভব? দলে এর প্রভাব তো পড়বেই। তার উপর এমন কোচকে দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হল, যিনি হাতে ছয় বিদেশি থাকা সত্ত্বেও দল দশ জন হয়ে যাওয়ার পর দু’জন বিদেশি তুলে নিয়ে ডুবিয়ে দেন মোহনবাগানকে।

এটিকে—কোচ তাড়িয়ে, টিডিকে কোচ করার পর চূড়ান্ত ডামাডোল চলছিলই। এর উপর জোড়াতালি দিয়ে ফুটবলার রবি কিনকে কোচ করে ভুবনেশ্বর গিয়েছিল দল। ভাল কিছু আশা কেউ করেননি। হয়ওনি।

এদের পাশে বেঙ্গালুরুর অবস্থাটা দেখা যাক। আইএসএলের ফাইনালের ধারাভাষ্য দিতে গিয়েছিলেন সঞ্জয় সেন। বলছিলেন, ‘‘চেন্নাইয়িনের কাছে হারের পরও সুনীলদের উৎসাহ দিতে পুরো স্টেডিয়াম দাঁড়িয়ে উঠে হাততালি দিচ্ছিল। কখনও এ রকম দৃশ্য দেখিনি। বাংলায় তো ৩৩ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর একটা দল হারলে তার কোচকে থুতু দেওয়া হয়। ঢিল, হাওয়াই চপ্পল উড়ে আসে। এক জন কোচকে শিক্ষা দিতে তার মাথার উপর বসানো হয় টিডি।’’ সমর্থকদের এই ‘সাহায্য’ সুপার কাপ জিতে ফিরিয়ে দিয়েছে বেঙ্গালুরু। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে গ্যালারিতে উপস্থিত নীল সৈন্যদের হাতে ট্রফি তুলে দিয়ে এসেছিলেন জন জনসনরা। আইএসএল হারের যন্ত্রণা মুছতে নতুন টুর্নামেন্ট জেতার সংকল্প নিয়ে এসেছিলেন মিকু, উদান্তরা। তারা সফল। কোচ পুরো টিমকে এমন এককাট্টা করে রেখেছিলেন যে কোথাও কোনও সমস্যা ছিল না। সফল কোচ অ্যাশলে ওয়েস্টউডকে সরিয়ে আলবের্তো রোকাকে নিঃশব্দে কোচ করে এনেছিলেন ‘দ্য ব্লুজ’ এর কর্তারা। কোচ বদলালেও প্রায় পুরো দল ধরে রাখার পাশাপাশি ভাল বিদেশি নির্বাচন করেছেন ওরা। কর্তারা দল নিয়ে মাথা ঘামাননি। কোচ ও ফুটবলারদের উপর আস্থা রেখেছেন। পেশাদারিত্বের এই মনোভাবই কয়েক মাইল এগিয়ে দিয়েছিল বেঙ্গালুরুকে।

আই লিগ জেতা মিনার্ভা প়ঞ্জাব আবার অ্যাকাডেমির মাধ্যমে ভূমিপুত্রদের তুলে এনে সফল হয়েছে। গিলসেন চেঞ্চোর মত কম টাকার বিদেশি এনে চমকে দিয়েছেন রঞ্জিত বাজাজরা। চেন্নাইয়িনও আইএসএল জিতেছে পেশাদারিত্ব দেখিয়ে। একই দল ধরে রেখে সফল তারা।

বাংলার তিন দলের ক্ষেত্রেই এই পেশাদারিত্ব চোখে পড়েনি। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। কর্তাদের দোষেই যে অন্ধকারে যাচ্ছে বাংলার ফুটবল।

Football Club officials Bengal Football Club

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}