Advertisement
১১ মে ২০২৪

রোনাল্ডোর আগুনে পুড়ছে প্রতিপক্ষ থেকে সমালোচক

প্রকৃতির বিস্ময়। সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।ছোটবেলা থেকেই সহপাঠীদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয়! হইচই, হুল্লোড়ে মাতিয়ে রাখতেন বন্ধুদের। কিন্তু সেই স্কুল থেকেই তাঁকে বের করে দেওয়া হয় একদিন। কারণ, শিক্ষকের দিকে সটান চেয়ার ছুড়ে মেরেছিলেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৬
Share: Save:

ছোটবেলা থেকেই সহপাঠীদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয়! হইচই, হুল্লোড়ে মাতিয়ে রাখতেন বন্ধুদের। কিন্তু সেই স্কুল থেকেই তাঁকে বের করে দেওয়া হয় একদিন। কারণ, শিক্ষকের দিকে সটান চেয়ার ছুড়ে মেরেছিলেন।

সেই আচরণের জন্য আজও কোনও অনুশোচনা নেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর। প্রসঙ্গটা উঠলে বলেন, “উনি আমাকে অসম্মান করেছিলেন সে দিন। এমন নয় যে খুব বোকা ছাত্র ছিলাম।” সিআর সেভেনের বন্ধুরা তাই ছোটবেলা থেকেই জানতেন আত্মসম্মানে ঘা পড়লে রোনাল্ডো কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন। মঙ্গলবার যেটা টের পেল ফুটবল বিশ্বও।

পর্তুগিজ মহাতারকার চার গোলের সুবাদে এলচেকে ৫-১ হারাল রিয়াল মাদ্রিদ। যার মধ্যে দুটো গোল এল পেনাল্টি থেকে। এই নিয়ে গত তিন ম্যাচে দুটো হ্যাটট্রিক সহ রোনাল্ডোর গোলসংখ্যা দাঁড়াল আট। মোট হ্যাটট্রিক ২৫। ব্রাজিল বিশ্বকাপে পর্তুগিজ অধিনায়কের টিমকে গ্রুপ পর্বও পার করাতে না পারার ব্যর্থতা নিয়ে কম কথা হয়নি। মরসুমের শুরুতেও ফিটনেস নিয়ে রোনাল্ডোকে শুনতে হয়েছে কটাক্ষ। চাপে পড়ে রিয়াল কোচ কার্লো আন্সেলোত্তি তিন সপ্তাহ বিশ্রামেও পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তাঁকে। ২৯ বছরের মহাতারকার ফর্ম নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। যার জবাবটা গত তিন ম্যাচে আট গোলের বিস্ফোরণে দিলেন সিআর সেভেন।

লুই এনরিকে বার্সেলোনার কোচ হওয়ার অনেক একটা কথা বলেছিলেন মেসিকে নিয়ে। বলেছিলেন, দুরন্ত ড্রিবল বা অসাধারণ ফিনিশিং করার ক্ষমতা বিশ্বের বহু প্লেয়ারের মধ্যেই রয়েছে। কিন্তু মেসির শ্রেষ্ঠত্ব অন্য জায়গায়। সেটা হল ধারাবাহিকতা। বড় ম্যাচে, কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেও মেসি গোল করার কাজটা ধারাবাহিক ভাবে করে আসছেন। দিনের পর দিন।

ঠিক এই কাজটাই তো করে চলেছেন রোনাল্ডোও। অসাধারণ গোলকিপার, দাপুটে সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারদের অসহায়, ফুল ব্যাকদের দর্শক করে দেন সিআর সেভেন গতিতে। একই সঙ্গে উইংগার আর সেন্টার ফরোয়ার্ডের ভূমিকায় এই মুহূর্তে তাঁর থেকে সেরা প্লেয়ার কোথায়! আর তার সঙ্গে আরও একটা বিষয় পর্তুগিজ তারকাকে একেবারে আলাদা করে দিয়েছে-- অসম্ভব গোলের খিদে। প্রত্যেক ম্যাচে যতগুলো সম্ভব গোল করার তীব্র প্রচেষ্টা রোনাল্ডোর সহজাত। এলচে ম্যাচেও তো পাঁচ নম্বর গোল করার সম্ভাবনা ফস্কে যাওয়ার পর নিজের উপরই রেগে গেলেন! অনেকে যদিও প্রশ্ন তুলেছেন ডিপোর্তিভো লা করুনা, এলচের মতো দুর্বল টিমের বিরুদ্ধে গোলের বন্যায় রোনাল্ডোর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ হয় কি? উত্তরটা গত ক’য়েক বছরে ইউরোপীয় ফুটবলে স্প্যানিশ দলগুলোর দাপটেই পরিষ্কার। তা সে আটলেটিকো মাদ্রিদ হোক বা সেভিয়া, ভ্যালেন্সিয়া, ভিয়ারিয়াল, আটলেটিক বিলবােওর মতো টিম। গত ১০ বছরে ছ’টা ইউরোপা লিগ জেতা দল কিন্তু স্পেনেরই। আর রোনাল্ডো এই সমস্ত দলের বিরুদ্ধে গোল করেছেন ধারাবাহিক ভাবে।

সিআর সেভেন নিজেই তো বলে দেন, “তিন-চার বার এর আগেও এক ম্যাচে চার গোল করেছি। টিমের জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে। সতীর্থদের ধন্যবাদ। ম্যাচ বলটা আমার ছেলের জন্য।” আগামী মরসুমে রোনাল্ডোর ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে যাওয়া নিয়ে জল্পনাতেও জল ঢেলে দেন তিনি, “আমার ভবিষ্যৎ মাদ্রিদই। আমি এখানে খুব খুশি। মরসুমও খুব ভাল কাটছে আমাদের। ভবিষ্যৎ নিয়ে আর কিছু বলব না। তার কোনও মানে হয় না।” যাঁরা তাঁর ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, গত তিন ম্যাচে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মাঠে থেকে মোক্ষম জবাবটাও দিয়েছেন সিআর সেভেন। রিয়াল কোচ আন্সেলোত্তিও তো বলে দেন, “এই মুহূর্তে রোনাল্ডো অসম্ভব তেতে রয়েছে, প্রচুর গোল করছে। ফিটনেসের দিক থেকেও দারুণ জায়গায় রয়েছে।” ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে তাঁর যাওয়ার জল্পনায় অনেকে ভ্রু কুঁচকেছিলেন। আগামী বছর রোনাল্ডোর বয়স হবে ৩০। এই বয়সে ম্যান ইউয়ে তাঁর আগুনে ফর্মটা টিকিয়ে রাখতে পারা নিয়েই সংশয় ছিল তাঁদের। কিন্তু পাঁচ বছর আগের রোনাল্ডোর সঙ্গে শারীরিক দক্ষতার দিক থেকে মঙ্গলবারের রোনাল্ডোর কোনও পার্থক্য আছে কি? তাই আগামী পাঁচ বছরও ফর্মের চূড়োয় থাকতে পারবেন না তিনি সেটাই বা কে বলতে পারে!

এ জন্যই হয়তো বের্নাবাওয়ে মাঝে মাঝেই এ দিন ‘ক্রিশ্চিয়ানো ব্যালন ডি’অর’ চিৎকারটা ভেসে উঠছিল। যেন এ বছরের বিশ্বসেরা ফুটবলার কে হবেন, সেটা মরসুম শুরু হতে না হতেই ঠিক হয়ে গিয়েছে দর্শকদের চোখে। এমনও বলা হচ্ছে প্রত্যেকটা গোলের সঙ্গে সঙ্গে বের্নাবাওয়ের বাইরে নিজের পাথরের মূর্তি বসাটা আরও নিশ্চিত করে দিচ্ছেন রোনাল্ডো। কেন না যে গতিতে তিনি এগোচ্ছেন তাতে রিয়ালের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা রাউলকে ধরে ফেলাটা শুধু সময়ের অপেক্ষা। ২৫৪ ম্যাচে লস ব্লাঙ্কোস জার্সিতে ২৬৪ গোল করে ফেলেছেন রোনাল্ডো। রাউলের রেকর্ড ৩২৩ গোল। তবে সেটা আসে ১৫টা মরসুমে ৭৪১ ম্যাচে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE