Advertisement
E-Paper

৭৩-এ শুরু, ১০০-এ শেষ! ৫০-এও একই রকম বিস্ময় সচিন

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করেছিলেন ‘বিস্ময় বালক’ হিসাবে। খেলা ছাড়ার এক দশক পরেও তিনি ক্রিকেট বিশ্বের বিস্ময়। তিনি সচিন। তিনি ১০০, ২০০-র পর ৫০!

picture of Sachin Tendulkar

জীবনের হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ফেললেন সচিন। —ফাইল ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:১৬
Share
Save

বিশ্ব ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন ১৯৮৯ সালের ১৫ নভেম্বর। বয়স তখন ১৬ বছর ২০৫ দিন। এই বয়সে একটা ছেলে বা মেয়ে স্কুল ফাইনাল দেয়। সেই বয়সে সচিন রমেশ তেন্ডুলকর মুখোমুখি হয়েছিলেন ওয়াসিম আক্রম, ওয়াকার ইউনিস, ইমরান খান, আব্দুল কাদিরদের। যাঁদের নামে তখন বিশ্ব ক্রিকেটের বাঘা বাঘা ব্যাটাররাও দু’ঢোঁক বেশি জল খেতেন!

বিস্ময়ের শুরু তখন থেকেই। ভারতীয় ক্রিকেটের ‘বিস্ময় বালক’ খেলা ছেড়েছেন ১০ বছর আগে। ২০১৩ সালের নভেম্বরে ঘরের মাঠ ওয়াংখেড়েতে শেষ টেস্ট খেলেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে। তার পর আর দেশের জার্সিতে দেখা যায়নি সচিনকে। দেখতে দেখতে হয়ে গেল এক দশক!

তাঁর ভক্তকূল এখনও চোখ বন্ধ করলে দেখতে পান নিখুঁত অফ ড্রাইভ, স্কোয়ার কাট বা লেট কাট। ১০ বছর ব্যাট ধরেন না সচিন। তবু ক্রিকেটপ্রেমীদের মনের ব্যাট এখনও ধরে রয়েছেন! সেই চেনা গ্রিপ। একটু ভারী ব্যাট। আর ৫ ফুট ৫ ইঞ্চির দাপট। হেলমেটে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের লোগোর উপর জাতীয় পতাকা নিয়ে প্রথম খেলতে নামা মানুষটিকে নিয়ে ঘোর কাটেনি এখনও। বিস্ময়ের ঘোরে আচ্ছন্ন ভক্তরা।

কেমন খেলতেন সচিন? ডন ব্র্যাডম্যান এক বার বলেছিলেন, ‘‘ছেলেটা অনেকটা আমার মতো খেলে।’’ তাঁর পরবর্তী সময়ের অসংখ্য ক্রিকেটারকে দেখার পর এক মাত্র সচিন সম্পর্কেই এই উক্তি করেছিলেন ব্র্যাডম্যান। তাঁর এই বক্তব্যেই লুকিয়ে রয়েছে প্রশ্নের উত্তর। আরও পরিষ্কার করে বোঝাতে হলে ভিভিয়ান রিচার্ডসের সেই উক্তির কথা বলতে হয়। তিনি বলেছিলেন, ‘‘সচিন অসাধারণ। আমার মতে, এত দিন যে ক্রিকেট খেলা হয়েছে এবং পরে খেলা হবে, তার যে কোনও পর্যায়ে প্রথম থেকে শেষ বল পর্যন্ত মানিয়ে নিতে পারে সচিন। ৯৯.৫ শতাংশ নিখুঁত এক জন ব্যাটার।’’

Picture of Sachin Tendulkar

প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে আন্তর্জাতিক স্তরে ১০০টি শতরান করেন সচিন। —ফাইল ছবি।

টেস্টজীবনের মতো এক দিনের ক্রিকেটও সচিন শুরু করেছিলেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সীমান্তের ওপারে। এক দিনের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচেও তিনি সামলেছেন মহম্মদ হাফিজ, উমর গুল, শাহিদ আফ্রিদিদের। করাচির প্রথম টেস্টে কিশোর সচিনকে নিয়ে হাসাহাসি করেছিলেন আক্রমরা। ফৈজলাবাদের দ্বিতীয় টেস্টেই জবাব দিয়েছিলেন ৫৯ রানের ইনিংসে। ক্রিকেট জনতার বিস্ময়ের ঘোর শুরু তখন থেকে। প্রথম টেস্ট শতরান এসেছিল ন’মাস পর নবম টেস্টে ম্যাঞ্চেস্টারে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। তার পর শুধুই এগিয়েছেন। সমকালীন অন্য ব্যাটারদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছেন। বোলারদের নিয়ে ইচ্ছা মতো খেলেছেন।

এক দিনের ক্রিকেটের শুরুটা সচিনসুলভ ছিল না। প্রথম দু’টি ম্যাচেই শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন। প্রথম শতরান এসেছিল ৭৯তম ম্যাচে, ৭৬তম ইনিংস! প্রথম শতরানের পরের তিনটি ইনিংসে আবার টানা শূন্য! তত দিন পাঁচ দিনের ক্রিকেটে সচিনের সাতটি শতরান হয়ে গিয়েছিল। এক দিনের ক্রিকেটে কাঙ্খিত সাফল্য পেতে তাঁর দীর্ঘ সময় লাগাও ক্রিকেট বিশ্বের আর এক বিস্ময়।

আলোচনা, সমালোচনা, কাটাছেঁড়া, বিশ্লেষণ কম হয়নি তাঁকে নিয়ে। ভারতীয় ক্রিকেটে মুম্বই লবির প্রভাবের কথাও বলেছেন অনেক সমালোচক। তবু সচিন এগিয়েছেন। শুধুই এগিয়েছেন। থেমেছেন ১০০টি শতরান করে! দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন জোরে বোলার অ্যালান ডোনাল্ড এক বার বলেছিলেন, ‘‘সচিনকে দেখে আমার এক জন অভিজ্ঞ সেনা আধিকারিকের মতো মনে হয়। যাঁর বুকে অনেক পদক রয়েছে। যিনি সারা বিশ্বের বোলারদের জয় করেছেন।’’ বিশ্বের সেই সেরা বোলারদের অন্যতম শেন ওয়ার্ন। যাঁর সঙ্গে সচিনের দ্বৈরথ ক্রিকেট ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন লেগ স্পিনারও বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, ‘‘এক মাত্র সচিন ছাড়া আর কেউই ব্র্যাডম্যানের মানের নয়।’’

সচিন সম্পর্কে ক্রিকেটবিশ্বের শ্রদ্ধা, সম্ভ্রম এমনই।

ভারতে ক্রিকেট ধর্ম হলে, সচিন ঈশ্বর। তিনি খেলা মানেই গ্যালারি ভর্তি। ম্যাথু হেডেনের মতো ক্রিকেটারও বলেছেন, ‘‘আমি ঈশ্বরকে দেখেছি। তিনি ভারতের হয়ে চার নম্বরে ব্যাট করেন।’’ বাকিদের থেকে কোথায় আলাদা সচিন? কেন তাঁর বিশ্বজোড়া এত প্রভাব? কেন তাঁকে ঘিরে এত বিস্ময়? অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের মতে, ‘‘বিশ্বে দু’ধরনের ব্যাটার হয়। এক, সচিন তেন্ডুলকর। দুই, বাকি সবাই।’’

খেলোয়াড়জীবনে সচিনের সব থেকে বড় প্রতিযোগী ছিলেন ব্রায়ান লারা। তিনিও সচিন সম্পর্কে নিজের মুগ্ধতা গোপন করেননি। লারা এক বার বলেছিলেন, ‘‘পৃথিবীর একমাত্র ব্যাটার, যার খেলা আমি খরচ করে টিকিট কেটে গ্যালারিতে বসে দেখতে রাজি, সে হল সচিন।’’

প্রবল প্রতিপক্ষদেরও গুণমুগ্ধ করে নিয়েছেন সচিন। সেখানে কোনও ‘মুম্বই লবি’র প্রভাব ছিল না। দেশকে বিশ্বকাপ না জেতানো পর্যন্ত ব্যাট ছাড়েননি। নেতৃত্ব ছেড়েছেন। নতুন অধিনায়কের সঙ্গ ছাড়েননি। দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন মাত্র একটি। জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন নবীন প্রজন্মকে। এই তো সেদিনও খেলতেন সচিন। শাসন করতেন ক্রিকেট বিশ্বকে। তিনি ব্যাট করতে নামলে গর্জন করত স্টেডিয়াম। আউট হলে নেমে আসত স্তব্ধতা।

চোখের পাতা পড়ার মতো নিঃশব্দে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে করেছেন ৩৪,৩৫৭ রান। খেলেছেন ৬৬৪টি ম্যাচ। হাফ ডজন বিশ্বকাপ। তাঁর জন্যই বিখ্যাত হয়ে গিয়েছে ২০১২ সালের ১৬ মার্চ। মিরপুরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এক দিনের ক্রিকেটে খেলেছিলেন ১১৪ রানের ইনিংস। তার আগেও তো কত শতরানই এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। ঠিক, আরও ৯৯টা শতরান করেছিলেন আগে। বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করেছিলেন সচিন। তেমনই ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর। বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে ২০০তম টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন! ব্যাটিংয়ের অধিকাংশ রেকর্ড এখনও তাঁর দখলে।

picture of Sachin Tendulkar

বিশ্বের একমাত্র ক্রিকেটার হিসাবে সচিন খেলেছেন ২০০টি টেস্ট। —ফাইল ছবি।

সচিনের ক্রিকেটজীবনের শুরু থেকে শেষ— পরতে পরতে বিস্ময়। আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক বার বলেছিলেন, ‘‘আমি ক্রিকেট জানি না। সচিন কী ভাবে খেলে তাও জানি না। তা-ও ওর খেলা দেখার চেষ্টা করি। কারণ আমি জানতে চাই, সচিন ব্যাট করলে কেন আমার দেশে অর্থনীতি ০.৫ শতাংশ কমে যায়!’’ অমিতাভ বচ্চনও এক বার বলেছিলেন, ‘‘সচিনের খেলা দেখার জন্য আমি শুটিংয়ের সময় পরিবর্তন করি।’’

সেই তিনিই জীবনের অর্ধশতরান পূর্ণ করে ফেললেন। সচিনের অর্ধশত বসন্ত। ১০০ সেঞ্চুরি, ২০০ টেস্টের পর জীবনের ৫০। শুরু আরও এক শতকের অপেক্ষা। যা শুরু হয়েছিল ২৪ এপ্রিল, ১৯৭৩। শুভ জন্মদিন সচিন।

Sachin Tendulkar Birthday Cricketer

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।