সোমবারই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। যে সিদ্ধান্ত নিয়ে চর্চা চলছে সারা দেশে। কিংবদন্তি ক্রিকেটারের সিদ্ধান্ত নিয়ে যখন উত্তাল দেশ, তখনই সোমবার বিরাট ও তাঁর অভিনেত্রী স্ত্রী অনুষ্কা শর্মাকে দেখে যায় বিমানবন্দরে। কোথায় তিনি যেতে পারেন, তা নিয়ে নানা জল্পনাও চলছিল। মঙ্গলবার জানা গেল, বিরাটদের গন্তব্যস্থল ছিল বৃন্দাবন। সেখানে বিরাট ও অনুষ্কা যান প্রেমানন্দ মহারাজের আশীর্বাদ নিতে।
এ দিন আবার মুম্বই বিমানবন্দর থেকে বেরোতে দেখা যায় বিরাট-অনুষ্কাকে। যেখানে ভক্তরা এবং সাংবাদিকরা ঘিরে ধরেন বিরাটকে। ভিড়ের মধ্যে থেকে এক জন বলে ওঠেন, ‘‘আপনি কেন অবসর নিলেন? আপনার জন্যই টেস্ট ক্রিকেট দেখতাম। এখন আর দেখব না।’’
পঞ্জাব কিংস দলের কর্ণধার ও বলিউডের অভিনেত্রী প্রীতি জ়িন্টাও মনে করেন, বিরাট অবসর নেওয়ার ফলে ক্রিকেট আর আগের মতো থাকবে না।
তিনি মঙ্গলবার টুইট করেন, ‘‘বিরাটের জন্যই আমি টেস্ট ক্রিকেট দেখতাম। ও অবসর নেওয়ায় টেস্ট ক্রিকেট আগের মতো থাকবে না।’’
এর মধ্যেই বিরাটের অবসর নিয়ে রীতিমতো বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসলেন শরণদীপ সিংহ। যিনি দিল্লি রঞ্জি দলের কোচ এবং প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচক। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বিরাট টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার কোনও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কি না রঞ্জি খেলার সময়!
ভক্ত: মঙ্গলবার বৃন্দাবনে প্রেমানন্দ মহারাজের আশ্রমে বিরাট ও অনুষ্কা। ২৪ ঘণ্টা আগে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন বিরাট। পিটিআই।
শরণদীপের উত্তর, ‘‘না, একদমই না।’’ সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে প্রাক্তন টেস্ট ক্রিকেটার শরণদীপ আরও বলেছেন, ‘‘বিরাট তো রঞ্জিতে লাল বলের ক্রিকেটর প্রস্তুতিই নিতে এসেছিল। যার মানে ওর অবসরের ভাবনা ছিল না। আমাদের সঙ্গে ইংল্যান্ড সিরিজ়ের টেস্ট ম্যাচ নিয়েও কথা বলেছিল। যার মানে, ওর ওখানে খেলার ভাবনা ছিল।’’
শরণদীপ আরও আরও জানিয়েছেন, এ বার ইংল্যান্ড সফরে নাকি শতরানও করতে চেয়েছিলেন বিরাট। বলেছেন, ‘‘এ বার বিরাটের ভাল প্রস্তুতি হয়েছিল। ও বলেছিল, যতগুলো সম্ভব শতরান করবে। যেমনটা ২০১৮ সালে করেছিল ইংল্যান্ড সফরে।’’ প্রাক্তন অফস্পিনার যোগ করেন, ‘‘ভেবেছিলাম, ইংল্যান্ড সফরে ওকে খেলতে দেখা যাবে। ইংল্যান্ড সফর অনেক কঠিন পরীক্ষা। জানি না ওকে ছাড়া ভারতীয় দল কী ভাবে সবকিছু সামলাবে।’’
ইংল্যান্ডের মাটিতে কঠিন সফরের কথা মাথায় রেখে এ বছরের শুরুতে রঞ্জি ট্রফিতে রেলওয়েজের বিপক্ষে দিল্লির হয়ে খেলেন বিরাট। পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ় খেলতে আগামী মাসে ইংল্যান্ড সফরে যাবে ভারত। ২০ জুন লিডসে শুরু হবে প্রথম টেস্ট।
বিরাটের অবসর নেওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরেও ভেসে আসছে প্রতিক্রিয়া। মন্তব্য করেছেন বিরাটের সতীর্থ থেকে প্রাক্তন ক্রিকেটাররা। চেতেশ্বর পুজারা বলেছেন, ‘‘২০১৫ সালের পরে জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়া সময় থেকেই টিম ইন্ডিয়ায় ‘ফিটনেস কালচার’ নিয়ে এসেছেন বিরাট। যা আগে ছিল না। ওর সময় পুরো দলটাই এই ব্যাপারে মনোযোগী হয়ে ওঠে এবং পরিশ্রম করতে শুরু করে।’’ পুজারা এও বলেন, ‘‘বিশ্বের অন্য দলগুলি এই ব্যাপারে খুবই সচেতন ছিল। কিন্তু ভারতীয় দলে ফিটনেসের ব্যাপারাটাকে গুরুত্ব দেওয়া শুরু হয় বিরাট দায়িত্ব নেওয়ার পরে।’’
অধিনায়ক বিরাট এবং কোচ শাস্ত্রীর জুটি ওই সময় ভারতীয় দলের পেস শক্তি অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছিল। যা নিয়ে পুজারা বলেন, ‘‘সেই সময় যে সমস্ত ফাস্ট বোলার ভারতীয় দলে এসেছিল, ফিট থাকতে মারাত্মক পরিশ্রম করতে হয়েছিল তাদের। অবশ্য অন্যরাও বাদ যায়নি। এমনিতে টেস্ট ক্রিকেটকে দারুণ গুরুত্ব দিত বিরাট। ও সবসময় চাইত ভারত যেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেট শক্তিতে পরিণত হয়। ওর লক্ষ্য থাকত যে কোনও অবস্থায় বিপক্ষের ২০ জনকে আউট করা।’’
ওই সময় ভারতীয় দলের বোলিং কোচ ছিলেন বি অরুণ। বিরাটকে নিয়ে তাঁর স্মৃতিচারণ, ‘‘কোনও সফরে গিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে চাইত না বিরাট। তার চেয়ে বেশি পছন্দ করত নেটে কোনও কঠিন উইকেটে ব্যাট করা।’’ অরুণ বলেন, ‘‘নেটে বোলারদের ১৬ গজ দূরত্ব থেকে বল করতে বলত বিরাট। থ্রো ডাউনও নিত ওই ১৬ গজ দূরত্ব থেকে। বিরাট মনে করত, প্রস্তুতি ম্যাচে সেই তীব্রতা থাকে না।’’
ভারতীয় পেসার মহম্মদ সিরাজ এখনও মেনে নিতে পারছেন না বিরাটের অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্তকে। সিরাজ বলেছেন, ‘‘বিরাট কোহলিই আমার কাছে মহানায়ক। অসাধারণ টেস্ট জীবনের জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন তোমাকে। বিরাট ভাইয়া, তোমার প্রভাব চিরকাল ভারতীয় ক্রিকেটে থেকে যাবে।’’ এর পরে সিরাজ বলেছেন, ‘‘আমার মতো অসংখ্য তরুণের কাছে তুমিই একমাত্র অনুপ্রেরণা। ভারতীয় দলের ড্রেসিংরুম তোমাকে বাদ দিয়ে আর আগের মতো থাকবে না।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)