ভারতের ইনিংসের কয়েক ওভার পরেই ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল দৃশ্যটা। শাহিন আফ্রিদিকে কোনও কথার জবাব দিতে এগিয়ে গিয়েছিলেন শুভমন গিল। কয়েক বল পরেই আবার অন্য এক দৃশ্য। এ বার হ্যারিস রউফের সঙ্গে ঝামেলা হয় অভিষেক শর্মার। তখন স্পষ্ট বোঝা যায়নি কী হয়েছে। তবে বিষয়টি যে গুরুতর ছিল এটা ম্যাচের পরেই বুঝিয়ে দিয়েছেন অভিষেক। জানিয়েছেন, পাকিস্তান বড্ড বেশি বাড়াবাড়ি করছিল। সেটারই জবাব ব্যাট হাতে দিয়েছেন তিনি।
সঞ্চালকের প্রশ্নের উত্তরে অভিষেক বলেন, “পাকিস্তানের বোলারেরা বেশি বাড়াবাড়ি করছিল। কোনও কারণ ছাড়াই আমাদের দিকে তেড়ে আসছিল, তর্ক করছিল। আমার সেটা একেবারেই পছন্দ হয়নি। তাই জন্যই ওদের জবাব দেওয়া দরকার ছিল। দলকে জেতাতে চেয়েছিলাম। সেটা পেরেছি।”
গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে শুভমনের সঙ্গে শতরানের জুটি গড়ে ভারতের চাপ অনেকটাই হালকা করে দেন অভিষেক। ছোটবেলা থেকেই দু’জনে একসঙ্গে খেলেছেন। সেই প্রসঙ্গে বললেন, “স্কুলে পড়ার সময় থেকেই আমরা একসঙ্গে খেলছি। একে অপরকে সঙ্গ দিতে পছন্দ করি। আগেই ঠিক করে নিয়েছিলাম, আজই কিছু একটা করতে হবে। যে ভাবে শুভমন খেলছিল সেটা দারুণ লেগেছে।”
আরও পড়ুন:
এশিয়া কাপের চারটি ম্যাচেই ভাল খেলেছেন অভিষেক। রবিবারই প্রথম অর্ধশতরান এল তাঁর ব্যাট থেকে। সাফল্যের নেপথ্যে দলের সমর্থনের কথা উল্লেখ করেছেন অভিষেক। বলেছেন, “যখন দেখবেন কোনও ব্যাটার এত ভাল খেলছে, তখন বুঝবেন নিশ্চয়ই তাঁর পাশে দল রয়েছে। কোচ এবং অধিনায়ক আমাকে খুবই সমর্থন করে। তাই জন্যই এত ভাল খেলার সাহস পাই।”
অধিনায়ক সূর্যকুমারও মেনে নিয়েছেন, সতীর্থেরা এত ভাল খেলায় তাঁর কাজ সহজ হয়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, “ওদের চারিত্রিক দৃঢ়তা আশা করি সকলেই বুঝতে পেরেছে। বল করার সময় ১০ ওভারের পরেও ওরা শান্ত ছিল। জলপানের বিরতির পর ওদের বললাম, ম্যাচ এখন শুরু হচ্ছে। ওটাই ওদের মানসিকতা বদলে দিল।”
জসপ্রীত বুমরাহ এ দিন সাফল্য পাননি। তাঁকে নিয়ে সূর্য বলেন, “কোনও অসুবিধা নেই। সকলকে বুঝতে হবে যে বুমরাহ রোবট নয়। একটা খারাপ দিন যেতেই পারে। আজ (শিবম) দুবে খেলে দিয়েছে।”
ফিল্ডিংয়ের সময় পাঁচটি ক্যাচ পড়েছে ভারতের। তবে চিন্তা করছেন না সূর্য। বরং মজা করে তাঁর উত্তর, “যারা ক্যাচ ফেলেছে সকলকেই ফিল্ডিং কোচ টি দিলীপ ই-মেল করে দিয়েছে। দেখুন না কী হয়।”
অভিষেকের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করে সূর্য বলেন, ‘‘ও তো ঠিক এইরকমই। নিঃস্বার্থ ব্যাটিং করে। পাওয়ারপ্লেতে কোনও দয়া-মায়া দেখায় না। কিন্তু পাশাপাশি এটাও জানে, দলের কী প্রয়োজন। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে পারে। প্রতিটা ম্যাচ থেকে ও শিখছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, কখনও অনুশীলন মিস করে না। ব্যাট করতে না চাইলেও মাঠে নেমে কিছু না কিছু করবে। কেউ যদি এত কঠোর পরিশ্রম করে, তা হলে ঈশ্বর সবসময় তার জন্য কিছু না কিছু পরিকল্পনা করে।"
শুভমনের ইনিংস নিয়ে সূর্য বলেন, ‘‘সকলে জানে, শুভমন কেমন খেলোয়াড়। আমি শুধু এটাই বলব যে, ও রান করতে জানে। আজ কম ঝুঁকি নিয়েছে। নিজের শটের উপর বিশ্বাস রেখেছে। আর ওই রিভার্স সুইপ! আমি সত্যিই খুশি। ও এই শটটা নিয়ে অনেক পরিশ্রম করছে।"
শুভমন-অভিষেকের বন্ধুত্ব নিয়ে চর্চা চলছে। সূর্য বলেন, ‘‘মাঠের বাইরে ভাল বন্ধু হওয়া সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে একসঙ্গে ওপেন করলে, সেই বন্ধুত্ব আরও গুরুত্বপূর্ণ। এমনও হয় যে, ইনিংসের মাঝে কাউকে কিছু বলতে হয় না। শুধু চোখের একটা চাউনিই যথেষ্ট। বোঝা যায়, একটা দ্রুত সিঙ্গল নিচে চাইছে। এক জন সসম্যায় পড়লে যে ভাল খেলছে সে তাকে সাহায়্য করে। একে অপরের পরিপূরক হওয়া যায়। ওদের ব্যাটিংয়ের সময় সেই বন্ধুত্বটাই ফুটে ওঠে।’’
উপমা দিয়ে সূর্য বলেন, ‘‘এটা আগুন এবং বরফের যুগলবন্দি। আর আমি এটাই দেখতে চাই। আজ শুরুটা খুব ভাল করার দরকার ছিল। ওরা সেটাই করেছে।’’
এই বরফ-আগুনের একটি ইতিহাস আছে। ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে শাহিন আফ্রিদিরা গিলকে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমাদের বোলিং বাংলাদেশ নয়।’’ গিল শতরান করে জবাব দিয়েছিলেন। শেষ বলে ছক্কা মেরে শতরানে পৌঁছনোর পর আফ্রিদিদের জবাব দিয়েছিলেন। সে দিন অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘আমাদের ব্যাটিংও পাকিস্তান নয়’’
রবিবার ম্যাচের পর শুভমন ইনস্টাগ্রামে চারটি শব্দ লেখেন, ‘‘গেম স্পিকস, নট ওয়ার্ডস।’’ যার বাংলা করলে দাঁড়ায়, জবাব মাঠে, কথায় নয়।