E-Paper

আইপিএলে সফল অভিযানের পরে যশস্বীর লক্ষ্য টেস্ট ক্রিকেট

চলতি মরসুমে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে মোট ১৪ ম্যাচে যশস্বীর রান ৬২৫। রয়েছে পাঁচটি অর্ধশত রান ও একটি শতরান। ইডেনে মাত্র দু’রানের জন্য মরসুমের দ্বিতীয় শতরান আসেনি তাঁর ব্যাটে।

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২৩ ০৬:৫৬
An image of Yashashvi Jaiswal

কৃতজ্ঞ: বাটলারকে প্রশিক্ষক হিসেবে দেখেন যশস্বী।  ফাইল চিত্র।

আইপিএলের মঞ্চ যে কারও জীবন বদলে দিতে পারে তার উজ্জ্বল উদাহরণ তিনি। চলতি মরসুমে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে মোট ১৪ ম্যাচে তাঁর রান ৬২৫। রয়েছে পাঁচটি অর্ধশত রান ও একটি শতরান। ইডেনে মাত্র দু’রানের জন্য মরসুমের দ্বিতীয় শতরান আসেনি তাঁর ব্যাটে। কিন্তু ইডেন দেখেছে তাঁর নজির। মাত্র ১৩ বলে ৫০ রানে করে প্রতিযোগিতার দ্রুততম হাফসেঞ্চুরির মালিক এখন এই তরুণ। তিনি যশস্বী জয়সওয়াল।

রাজস্থান রয়্যালসে তাঁর ওপেনিংয়ে সঙ্গী জস বাটলার। শুধুমাত্র সঙ্গী বলা ভুল হবে। যশস্বী তাঁকে অন্যতম প্রশিক্ষক হিসেবেই দেখেন। আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকারে যশস্বী বলেন, ‘‘বাটলারের সঙ্গে ওপেন করে আমার জীবন পাল্টে গিয়েছে। ও শুধুমাত্র নিজের ব্যাটিং নিয়ে ভাবে না। ও যার সঙ্গে ব্যাট করছে, সে কতটা পরিণত হয়েছে সেই চিন্তাও করে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আইপিএলের মধ্যেই বাটলার আমাকে শিখিয়েছে, কী ভাবে নির্দ্বিধায় বড় শট নেওয়া যায়।’’

যশস্বীর আরও ব্যাখ্যা, ‘‘বাটলার বলেছিল যে, বল সামনের পায়ে শট খেলার আয়ত্তে চলে এসেছে, তা আর মাঠের মধ্যে না রাখতে। গুয়াহাটির বর্সাপাড়া স্টেডিয়ামে আমার স্টাম্পের পেছনে দাঁড়িয়ে প্রত্যেক দিন বড় শট নেওয়ার প্রশিক্ষণ দিত বাটলার। স্পিনার থেকে পেসার, কাদের কোন বলে আক্রমণ করা উচিত, তা শিক্ষকের মতো বুঝিয়েছে। আগে আমি স্পিনারদের বিরুদ্ধে খালি সুইপ করতে যেতাম। বাটলার শিখিয়েছে কী ভাবে রিভার্স সুইপ করে বোলার ও ফিল্ডারদের বিভ্রান্ত করে দেওয়া যায়। আমি যত বড়ই ক্রিকেটার হয়ে উঠি না কেন, বাটলারের অবদান কোনও দিনও ভুলব না।’’

ঘরের মাঠ ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে মুম্বই ইন্ডিয়ানসের বিরুদ্ধে তাঁর শতরান যেমন অন্যতম প্রিয় ইনিংস, তেমনই বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় মাঠ ইডেনে তাঁর বিধ্বংসী ৯৮ রানের ইনিংসকেও নিজের তালিকার উপরের দিকেই রাখছেন। যশস্বীর কথায়, ‘‘দু’টি ইনিংসই গুরুত্বপূর্ণ। এই দু’টি ইনিংস ক্রিকেটবিশ্বের সামনে আমাকে নতুন ভাবে পরিচয় দিয়েছে। আগে আমি ছিলাম ইনিংস গড়ে তোলার ক্রিকেটার। এখন কিছুটা বিধ্বংসী হয়ে উঠেছি। বোলারদের উপরে চাপ সৃষ্টি করতে পারছি। এক জন ব্যাটসম্যানকে যখন বোলাররা ভয় পেতে শুরু করে, তখনই কিন্তু সে সফল হয়। বিরাট ভাই, রাসেলদের ভয় পায় বোলাররা। আমিও সে রকম হয়ে উঠতে চাই। বোলাররা যেন ঠান্ডা মাথায় আমাকে বল করতে না পারে।’’

জুলাইয়ে ভারতের মাটিতে আসতে চলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই সিরিজ়ে যশস্বী, রিঙ্কু সিংহদের মতো প্রতিভাদের দেখে নেওয়া হতেই পারে। সেই সিরিজ়ের লক্ষ্যে কি এ বার প্রস্তুতি শুরু করবেন যশস্বী? তাঁর উত্তর, ‘‘ভাল খেলার জন্য অনুশীলন করি। বিশেষ কোনও সিরিজ়ের লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিই না।’’ যোগ করেন, ‘‘ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার জন্যই পরিশ্রম করছি। কিন্তু সেটা নিয়ে ভাবছি না। সুযোগ না পেলেও আফসোস থাকবে না। আমি অভিযোগ করব না। কারণ, নির্বাচন আমার হাতে নেই। আমার হাতে আছে ব্যাট। বিশ্বাস করি, যদি ক্রিকেটের প্রতি সৎ থেকে পরিশ্রম করি। সুযোগ এক দিন আসবেই।’’

শুধুমাত্র সীমিত ওভারের ক্রিকেট নয়, বড় ফর্ম্যাটেও দেশের হয়ে খেলার লক্ষ্য তাঁর। টি-টোয়েন্টির বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান হয়ে উঠলেও টেস্ট ক্রিকেটই যে তাঁর প্রিয় ফর্ম্যাট তা বলতে দ্বিধাবোধ করলেন না যশস্বী। তাঁর কথায়, ‘‘লাল বলের ক্রিকেট কিন্তু অনেক বড় পরীক্ষা। আইপিএলে যে ধরনের শট সহজেই খেলা যায়, রঞ্জি ট্রফিতে তা কিন্তু সহজে হয় না। কয়েকটি ওভারের পরে সাদা বল নড়াচড়া করা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু লাল বল শেষ পর্যন্ত সুইং করে। পুরনো হয়ে গেলে রিভার্স সুইং করে। ব্যাটসম্যান হিসেবে অনেক বড় পরীক্ষা দিতে হয় লাল বলে। টেস্টে যদি ভাল করতে পারি, তবেই নিজেকে ভাল ব্যাটসম্যান ভাবব।’’

জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী অরিজিৎ সিংহ গেয়েছেন, ‘‘দামাল ছেলের চোখে হাজার স্বপ্ন ছুটেছে।’’ এই লাইনটি যেন যশস্বীর জন্য উপযুক্ত। শুধু প্রতিভা বলে ছোট করা যায় না তাঁকে। জীবন সংগ্রামে জিতে আসা এক নায়কের নাম যশস্বী।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Yashasvi Jaiswal IPL 2023 Rajasthan Royals test cricket Team India

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy