কী দোষ সরফরাজ় খানের? কেন ভারত ‘এ’ দলে নেওয়া হল না তাঁকে? এই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। বাড়ছে বিতর্ক। বিতর্কের মাঝে মুখ খুলল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। জানানো হল, ফর্মের কারণে নয়, ফিটনেসের কারণে নেওয়া হয়নি ভারতীয় ব্যাটারকে।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের এক সূত্র ‘এনডিটিভি’-কে বলেছে, “সরফরাজ় কোয়াড্রিসেপসের চোটে বাইরে ছিল। সবে ও ক্রিকেটে ফিরেছে। রঞ্জি ট্রফিতে একটা ম্যাচ খেলেছে। এত দিন খেলার বাইরে ছিল। একটা ম্যাচের উপর নির্ভর করে ওকে ভারত ‘এ’ দলে নেওয়া যায় না। নির্বাচকেরা রঞ্জির এই মরসুমে ওর খেলা দেখবে। তার পর সিদ্ধান্ত হবে। আশা করি ও তাড়াতাড়ি সুযোগ পাবে।”
একই কথা তো ঋষভ পন্থের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তিনি চোটে দীর্ঘ দিন বাইরে ছিলেন। চোট সারিয়ে ফিরেছেন। এখনও একটিও ম্যাচ খেলেননি। সরাসরি ভারত ‘এ’ দলের অধিনায়ক করা হয়েছে তাঁকে। তার আগে হয়তো রঞ্জির একটি ম্যাচ খেলবেন পন্থ। যদি সরফরাজ়কে ম্যাচ না খেলার জন্য দলে না নেওয়া হয়, তা হলে কোন যুক্তিতে নেওয়া হল পন্থকে। তবে কি দু’জনের জন্য দু’রকম নিয়ম?
সরফরাজ়ের জায়গা না পাওয়ার নেপথ্যে আর একটি কারণ উঠে আসছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের একটি রিপোর্ট বলছে, লাল বলের ক্রিকেটে পন্থকে জায়গা দিতেই বাদ দেওয়া হয়েছে সরফরাজ়কে। পন্থ পাঁচ নম্বরে ব্যাট করেন। সরফরাজ়ও তাই। তাই তাঁকে নেওয়া হয়নি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, সরফরাজ়কে নাকি তিন নম্বরে ব্যাট করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সরফরাজ়ও তাঁর রঞ্জি দল মুম্বইকে জানিয়েছেন, তিনি তিন নম্বরে খেলতে চান। এখন ভারতের টেস্ট দলে তিন নম্বরে খেলেন সাই সুদর্শন। তিনি এখনও জায়গা পাকা করেননি। তাই সরফরাজ়ের সুযোগ রয়েছে।
সরফরাজ় জায়গা না পাওয়ায় ভারতের নির্বাচক প্রধান অজিত আগরকরকে নিশানা করেছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার বলেন, “আমি যখন ভাবলাম, কেন সরফরাজ়কে নেওয়া হল না, আমি কোনও ব্যাখ্যা খুঁজে পেলাম না। ওর জন্য খুব খারাপ লাগছে। আমি যদি নির্বাচক হতাম, তা হলে ওকে ফোন করে কী বলতাম?”
আরও পড়ুন:
অশ্বিনের মতে, আগরকরদের মনোভাব দেখে মনে হচ্ছে, জাতীয় দলের জন্য সরফরাজ়ের কথা আর ভাবা হচ্ছে না। তিনি বলেন, “ও ওজন কমিয়েছে। রান করেছে। শেষ যে টেস্ট সিরিজ় খেলেছে সেখানেও শতরান করেছে। তার পরেও যখন ওকে নেওয়া হচ্ছে না, তখন মনে হচ্ছে নির্বাচকেরা ভাবছেন, ওকে অনেক সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আর নয়।” অশ্বিন আরও বলেন, “আমি সরফরাজ় হলে এই সব কথাই ভাবতাম। ওকে ভারত ‘এ’ দলেও নেওয়া হল না। দেখে মনে হচ্ছে, ওর জন্য জাতীয় দলের দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।”
ঘরোয়া ক্রিকেটে ৫৬ ম্যাচে ৬৫.১৯ গড়ে রান করেছেন সরফরাজ়। শেষ পাঁচ বছরে তাঁর গড় ১১৭.৪৭। শেষ পাঁচ বছরে ২৪৬৭ রান করেছেন তিনি। করেছেন ১০টি শতরান ও পাঁচটি অর্ধশতরান। চোট সারিয়ে ফিরে রঞ্জির শুরুটাও খারাপ করেননি সরফরাজ়। দুই ইনিংসে ৪২ ও ৩২ রান করেছেন তিনি। যাতে ভারতীয় দলে সুযোগ পেতে ফিটনেস সমস্যা না হয় তার জন্য ১৭ কেজি ওজনও কমিয়েছেন। তার পরেও সুযোগ পাচ্ছেন না তিনি।
সরফরাজ়ের এই ধারাবাহিকতার কথা শোনা গিয়েছে অশ্বিনের মুখেও। তিনি বলেন, “ও আর কী করবে? এখন যদি ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে রান করে তা হলে নির্বাচকেরা বলবেন, ও শুধু প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার। আর কোথায় গিয়ে ও নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করবে? নির্বাচকদের এই সিদ্ধান্ত দেখে বোঝা যাচ্ছে, ওঁরা আর সরফরাজ়ের কথা ভাবছেনই না।”