ইডেনে হারের দায় কার? প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীরের? ব্যাটিং কোচ সীতাংশু কোটাকের? অধিনায়কের দায়িত্ব সামলানো ঋষভ পন্থের? না কি ইডেনের পিচের? না কি ক্রিকেটারদের? হারের পর থেকে প্রত্যেকে বলছেন, দায় তাঁর। কিন্তু প্রশ্ন হল, হারের দায় নিলেই কি দিশাহীন ভারতীয় ক্রিকেট দলে সব সমাধান হয়ে যাবে?
ইডেনে টেস্ট শুরুর আগে থেকেই চর্চায় ছিল পিচ। ২২ গজ নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছিল। ইডেনের পিচ প্রস্তুতকারক সুজন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রতি দিন আলোচনা করছিলেন গম্ভীরেরা। টসের পর দেখা গেল, এক, দুই, তিন নয়, চার জন স্পিনার খেলাচ্ছে ভারত। বোঝা গিয়েছিল, পিচে ঘূর্ণি রয়েছে। কিন্তু সেই ঘূর্ণির গোলকধাঁধায় নিজেরাই কুপোকাত হলেন পন্থেরা। আড়াই দিনে হেরে গেল ভারত।
দায় নিয়েছেন কোচ
অনিল কুম্বলে, হরভজন সিংহ, চেতেশ্বর পুজারারা পিচের সমালোচনা করলেন। ঠিক তখনই দায় টেনে নিলেন গম্ভীর। বললেন, “ইডেনের পিচ বিপজ্জনক ছিল না। খেলার উপযোগী ছিল। টেম্বা বাভুমা তো রান করল। খেলা যাবে না, এমন উইকেট তো ছিল না। জানি না কেন বার বার স্পিন সহায়ক পিচ বলা হচ্ছে! জোরে বোলারেরাই বেশি উইকেট পেয়েছে এই টেস্টে। ব্যাটারদের টেকনিক, মানসিক শক্তি এবং ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে হয় এ রকম পিচে। আমরা পারিনি। ভাল খেলতে না পারলে তো এমনই হবে। ১২৪ রান তাড়া করতে না পারার কোনও কারণ ছিল না।’’
দায় নিয়েছেন অস্থায়ী অধিনায়ক
কোচের থেকে কম যান না অধিনায়ক পন্থও (শুভমন গিল ঘাড়ের চোটে খেলতে না পারায় দ্বিতীয় দিন থেকে অধিনায়কত্ব করেছেন পন্থ)। তিনি বললেন, “এ রকম একটা ম্যাচের পর খুব একটা কিছু বলার থাকে না। আমাদের এই রান তাড়া করা উচিত ছিল। এই পিচে ১২০ রান তোলা একটু কঠিন ছিল ঠিকই। তা সত্ত্বেও বলছি, আমাদের এই চাপ সামলে নিয়ে সুযোগ কাজে লাগানো দরকার ছিল।” পন্থের কথা থেকে স্পষ্ট, পিচের অজুহাত তিনিও দিতে চাননি।
দায় নিলেন ব্যাটিং কোচ
তবে কি পিচ নিয়ে দলের কারও কোনও অভিযোগ নেই? ইডেনে হারের চার দিন পর দলের ব্যাটিং কোচ সীতাংশু কোটাক জানিয়েছেন, পিচ প্রস্তুতকারককে সমালোচনার হাত থেকে বাঁচাতেই নাকি নিজের ঘাড়ে দায় নিয়েছেন গম্ভীর।
কোটাকের মতে, সকলে গম্ভীরকে দায়ী করছেন। এতে হয়তো অনেকের অন্য কোনও উদ্দেশ্য সাধিত হচ্ছে। কোটাক বলেন, “সকলে গম্ভীরকে দায়ী করছে। কেউ বলছে না, ব্যাটারেরা খেলতে পারল না। কেউ বলছে না, ব্যাটিং কোচের আরও ভাল কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে। হারলেই সকলে গম্ভীরের পিছনে পড়ে। দেখে মনে হয়, ওদের অন্য কোনও উদ্দেশ্য আছে।” ব্যাটিং কোচ নিজেই নিজের উপর হারের দায় নিচ্ছেন। ঠিক যেমনটা নিয়েছেন গম্ভীর। ঠিক যেমনটা নিয়েছেন পন্থ।
গুয়াহাটিতে দ্বিতীয় টেস্টের আগে কোটাক বলেন, “গম্ভীর চায়নি পিচ প্রস্তুতকারকের উপর দোষ পড়ুক। তাই ও নিজের ঘাড়ে দোষ নিয়েছে। ভারতের মাটিতে খেলার সময় আমরা স্পিনের উপর নির্ভর করি। কারণ, স্পিন আমাদের শক্তি। আমাদের প্রত্যাশা থাকে, স্পিনের সাহায্যে চার থেকে সাড়ে চার দিনের মধ্যে ম্যাচ জিতব। প্রথম দু’দিন পেসারেরা সুবিধা পাক।”
আরও পড়ুন:
দায় কার?
কিন্তু মানুষ কি সব দায় নিজের কাঁধে নিতে চায়? চায় না বলেই হয়তো কোটাক দায়ী করেছেন পিচকেও। ইডেনের পিচ অনেক তাড়াতাড়ি ভেঙে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁরা বুঝতেই পারেননি সেটা হবে। কোটাক বলেন, “ইডেনে যেটা হল, আশা করা যায়নি। প্রথম দিনের পরেই পিচ ভেঙে গেল। পিচ প্রস্তুতকারকও সেটা চায়নি। আমরা প্রথম বা দ্বিতীয় দিন স্পিন আশা করিনি। ইডেনে সেটাই হয়েছে।” তার মানে তো পিচকে দায়ী করে গম্ভীরের উল্টো সুরে কথা বলছেন।
যদিও তার পরেই আবার গম্ভীরের সুর ফিরে এসেছে কোটাকের গলায়। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন ব্যাটারদের মানসিকতা নিয়ে। এই ধরনের পিচে কী ভাবে খেলা উচিত, তা মনে করিয়ে দিয়ে ভারতের ব্যাটিং কোচ বলেন, “এই উইকেটে পায়ের ব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাটারদের বলের লেংথ বুঝতে হবে। তা হলে তারা যে কোনও উইকেটে খেলতে পারবে। অনেক সময় খুব রক্ষণাত্মক হয়ে গেলেও আউট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।”
পাপক্ষালন হবে?
কোচ, অধিনায়কের কথা থেকে স্পষ্ট, ভারতীয় ক্রিকেট দলের অভ্যন্তরের অবস্থা দিশাহীন। প্রত্যেকেই হারের দায় নিচ্ছেন। কিন্তু সেখান থেকে বার হওয়ার উপায় বলে দিচ্ছেন না। বলছেন, এই পিচে ব্যাট করার জন্য পায়ের ব্যবহার ভাল হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সেই উন্নতি কী ভাবে সম্ভব তা বলছেন না। প্রশ্ন উঠছে, দায় নিলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়? পাপক্ষালন হয়? কোটাক বলছেন, খেলার আগে তাঁরা পরিকল্পনা করেন। কিন্তু মাঠে নেমে খেলতে হয় ব্যাটারদের। তখন তাঁদের কিছু করার থাকে না। কিন্তু প্রস্তুতি যদি ভাল ভাবে হয়, পরিকল্পনা যদি ভাল ভাবে হয় তা হলে তো মাঠে তার ফল দেখতে পাওয়া যাবে। সেটা তো পাওয়া যাচ্ছে না। তবে কি গোড়াতেই গলদ রয়েছে? গুয়াহাটিতে কি সমস্যার সমাধান হবে? না কি আরও এক বার দায় নেওয়ার পালা দেখবে ভারতীয় ক্রিকেট?