বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেট দলে এক সময় তারকা ছিলেন তিনি। এখন বাদ পড়েছেন। সেই ব্রাত্য ক্রিকেটার জাহানারা আলম এ বার অভিযোগ আনলেন দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির বিরুদ্ধে। জুনিয়রদের উপর কী ভাবে জ্যোতি ‘অত্যাচার’ করেন তার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, কেন তাঁকে চক্রান্ত করে বাদ দেওয়া হয়েছে জাতীয় দল থেকে সেই কাহিনিও শুনিয়েছেন। বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরেই বাংলাদেশের মহিলা দল বিপাকে পড়েছে এই ঘটনায়। ধামাচাপা দেওয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘কালের কণ্ঠ’-তে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সিডনিতে বসবাস করা জাহানারা। বিশ্বকাপ চলাকালীন জ্যোতির কিছু আচরণ নিয়ে তিনি বলেছেন, “এটা নতুন কিছু নয়। জ্যোতি প্রচুর মারধর করে জুনিয়রদের। বিশ্বকাপের সময়ও জুনিয়ররা আমাকে জানিয়েছে, ‘না বাবা, এটা আর করব না। তা হলে আবার থাপ্পড় খেতে হবে’। কয়েক জন বলেছে, ‘কালকে মার খেয়েছি’। দুবাই সফরের সময়ও এক জুনিয়রকে রুমে ডেকে নিয়ে চড় মেরেছে।”
জুনিয়রদের উপর এই ব্যবহার জ্যোতি অনেক আগে থেকেই করে আসছেন বলে অভিযোগ করেছেন জাহানারা। তাঁর কথায়, “এক বার সিলেটে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ৩০-৪০ মিনিটের ফিটনেস সেশন হয়েছিল। তার পর কেউ ঠিক মতো হাঁটতেও পারছিল না। তখন দেখি এক জুনিয়র জ্যোতির কিটব্যাগ টেনে নিয়ে যাচ্ছে। জুনিয়ররাই সব সময় ওর কিটব্যাগ টানে। কত বার যে জ্যোতিকে বলতে শুনেছি, ‘এই বসে আছিস কেন? যা আমার ব্যাগ নামা’। জুনিয়ররা আসলে এই কাজ করতে বাধ্য, কিছু করার নেই। সিলেটেরই আর একটি ঘটনা জানি। দুটো ড্রেসিংরুমের একটা জুনিয়রদের জন্য বরাদ্দ। জ্যোতিকে দেখেছিলাম, ওটায় গিয়ে জুনিয়রদের দিয়ে মাথা টেপাচ্ছে, চুলে তেল দেওয়াচ্ছে।”
দলে যে জ্যোতি বাড়তি সুবিধা পান সেটাও উল্লেখ করেছেন জাহানারা। তাঁর কথায়, “জ্যোতি তো অনেক সময় ফিটনেস পরীক্ষাই দেয় না। ফিটনেস সেশনও করে না। সহকারী কোচকে (নাসিরুদ্দিন ফারুক) নিয়ে ব্যাটিং অনুশীলন করে বেশি। একজন আর একজনকে ‘ব্যাকিং’ দেয়।” আবাহনী ক্লাবে খেলার সময় জ্যোতি সতীর্থ শরিফার সঙ্গে মারামারি করেছিলেন বলেও জানিয়েছেন জাহানারা। শরিফার তলপেটে নাকি মেরেছিলেন জ্যোতি, যে কারণে পরে অস্ত্রোপচারও করাতে হয়।
আরও পড়ুন:
জাতীয় দল থেকে তাঁর বাদ পড়ার নেপথ্যেও জ্যোতির ‘হাত’ রয়েছে বলে মনে করেন জাহানারা। তাঁর দাবি, প্রথমে নাহিদা আর ঋতুমণি পরিকল্পনা করেন। তাঁরা যদি মনে করেন কাউকে ‘সাইজ’ করতে হবে, তখন জ্যোতির সঙ্গে আলোচনা করেন। জাহানারার কথায়, “জ্যোতির আবার আলাদা একটা গ্রুপ। ওর সঙ্গে আছে পিঙ্কি (ফরজানা হক) ও ইশমা (তানজিম)। রাবেয়া ওর ডান হাত। এখন সুমাইয়াও যোগ হয়েছে। এই হচ্ছে জ্যোতির প্যানেল। এরা যে কী করতে পারে কোনও ধারণাই নেই। পুরো ক্রিকেটটাকে এরা ধ্বংস করে দিচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর পরিবেশটা ওরা রাখছে না।”
বাংলাদেশ বোর্ড অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে। জানিয়েছে, জাহানারার আনা যাবতীয় অভিযোগ ভিত্তিহীন, বানানো এবং অসত্য। বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেট দলের উন্নতির সময়ে এ ধরনের অভিযোগ এনে বোর্ডকে কালিমালিপ্ত করতে চাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে তারা।