E-Paper

‘ফুড ডেলিভারি বয়’ রাহুল জিতে নিচ্ছেন সিএবি-র চার পুরস্কার

রাহুল খুবই প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে উঠে এসেছেন। ১৭ বছর বয়সে হারিয়েছেন মাকে। তাঁর বাবা অ্যাপ ক্যাব ড্রাইভার।

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২৫ ০৭:৫২
প্রাপ্তি: বাংলার প্রাথমিক দলেও সুযোগ পেয়েছেন রাহুল।

প্রাপ্তি: বাংলার প্রাথমিক দলেও সুযোগ পেয়েছেন রাহুল। ফাইল চিত্র।

সন্ধে ৭টা বাজলেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। রাত ১১টা পর্যন্ত পিঠে ভারী ব্য়াগ নিয়ে সোদপুরের বিভিন্ন রেস্তরাঁ থেকে খাবার সংগ্রহ করে দিয়ে আসতেন বাড়িতে বাড়িতে। ১২টার মধ্যে ফিরে আসতেন নিজের বাড়ি। সকাল ৬টা বাজলেই অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভেঙে যেত। বাবা ও দুই ভাই-বোনের জন্য খাবার তৈরি করে ছুটতেন মাঠে। দুপুর ৩টে পর্যন্ত ট্রেনিং করে ফিরে আসতেন। এ ভাবেই দিন কাটত রাহুল প্রসাদের।

পরিশ্রম বিফলে যায়নি। সিএবির বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে চারটি পুরস্কার পাচ্ছেন রাহুল। অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে কর্নেল সি কে নাইডু ট্রফিতে বাংলার সর্বোচ্চ স্কোরার তিনি। করেছেন ৩৫৩ রান। সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিও তিনি (২৭ উইকেট)। অনূর্ধ্ব-২৩ বিভাগে সেরা বোলারের পাশাপাশি বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কারও পাচ্ছেন। অনূর্ধ্ব-২৩ বিভাগে এক জন ক্রিকেটারকেই চারটি পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। যা নিয়ে গর্বিত তাঁর ছোটবেলার কোচ বীরেন্দ্রপ্রতাপ সিংহ।

রাহুল খুবই প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে উঠে এসেছেন। ১৭ বছর বয়সে হারিয়েছেন মাকে। তাঁর বাবা অ্যাপ ক্যাব ড্রাইভার। তিন বছর আগে থেকেই ক্রিকেট খেলে সংসারে সাহায্য করছেন। অনূর্ধ্ব-১৯ বাংলার হয়ে ভাল খেলার পরে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির শিবিরে ডাক পেয়েছিলেন। অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে ভাল খেলার ফলে সুযোগ পেয়েছেন বাংলার রঞ্জি ট্রফির প্রাথমিক দলে। লক্ষ্মীরতন শুক্লর প্রশিক্ষণে প্রাক-মরসুম প্রস্তুতি সারছেন তিনি।

অনূর্ধ্ব-১৯ ও অনূর্ধ্ব-২৩ বিভাগে ক্রিকেট খেলে যে পারিশ্রমিক পেয়েছেন, তা দিয়ে বাবাকে একটি নতুন গাড়ি কিনে দিয়েছেন। তা চালিয়েই এখন রোজগার করেন রাহুলের বাবা। বাংলার অনুশীলন থেকে বেরিয়ে রাহুল বলছিলেন, ‘‘মা চলে যাওয়ার পর থেকে খুবই কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। সংসার চলত না। কোভিডের সময় ক্রিকেট থেকেও উপার্জন হচ্ছিল না। লকডাউন উঠে যাওয়ার পরে ঠিক করি, জ়োমাটো-সুইগিতে খাবার ডেলিভারি করব।’’ যোগ করেন, ‘‘এক মাস খুব কষ্ট হত। রাত ১২টায় বাড়ি ফিরে আবার ভোর ৬টায় প্র্যাক্টিসে যাওয়ার মতো দম থাকত না। কিন্তু যেতে হত। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম যে!’’

রাহুলের ছোটবেলার কোচ বীরেন্দ্র প্রতাপ সিংহ আর্থিক ভাবেও সাহায্য করেছিলেন রাহুলকে। ২১ বছরের রাহুলের কথায়, ‘‘বীরু স্যর জানতেন না আমি ফুড ডেলিভারির কাজ করতাম। বকুনি খাওয়ার ভয়ই জানাইনি। এক দিন জানতে পেরে আমাকে খুব বকা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, সংসার নিয়ে ভাবতে হবে না। আমি যেন ক্রিকেট খেলে যাই।’’

সোদপুরের পানিহাটি স্পোর্টিং ক্লাবের মাঠে অনুশীলন করতেন রাহুল। সেখান থেকে কোচ আব্দুল মোনায়েমের কাছে অনুশীলন করতে যান। তার পর থেকেই ধীরে ধীরে উন্নতি শুরু হয়। অনূর্ধ্ব-১৯ বাংলা দলে ডাক পান। তার পরে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি। সেখান থেকে বাংলার অনূর্ধ্ব-২৩ দল। সিএবির প্রথম ডিভিশনে ঐক্য সম্মিলনীর হয়ে খেলেছেন গত মরসুমে। পি সেন ট্রফি খেলেছেন ইস্টবেঙ্গলের হয়ে। এ বার তাঁকে সই করাচ্ছে টাউন ক্লাব।

রাহুলের অন্যতম কোচ আব্দুল মোনায়েম বলছিলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই খুব কষ্ট করেছে। ওর মধ্যে হার-না-মানা লড়াই লক্ষ্য করেছি। ক্লাব ক্রিকেটেও খুব ভাল খেলেছে। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে পি সেন ট্রফি খেলেছিল। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি অফস্পিনটাও ভাল করে।’’

বাংলার হয়ে বুচি বাবু প্রতিযোগিতা খেলতে চেন্নাই উড়ে যাচ্ছেন রাহুল। কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্ল তাঁকে দলে রেখেছেন। লক্ষ্মী বলছিলেন, ‘‘আত্মতুষ্ট হলে চলবে না। এখান থেকে অনেক উন্নতি করতে হবে। ভারতীয় দলের হয়ে খেলার লক্ষ্য থাকা উচিত।’’

রাহুল তো সেই স্বপ্নই দেখেন। সাইকেল করে খাবার ডেলিভারি করতে গিয়ে অনেক বারই সময়ের মধ্যে নির্ধারিত ঠিকানায় পৌঁছতে পারেননি। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেটার হওয়ার পথে দ্রুত গতিতেই ছুটছেতাঁর গাড়ি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CAB Cricket Association Of Bengal CK Naidu Trophy

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy