অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জয়ের পরের দিনই সিদ্ধাবিনায়ক মন্দিরে পুজো দিয়ে এলেন ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। রিচা ঘোষ, শেফালি বর্মা, ক্রান্তি গৌড়, শ্রী চরণীদের একটাই প্রার্থনা, দেশের মাটিতে যেন বিশ্বকাপ জিততে পারেন।
বৃহস্পতিবার রাতে ম্যাচ জিতে টিম হোটেলে ফেরার পরেও কান্না থামছিল না জেমিমা রডরিগ্সের। ভারতীয় দলের প্রত্যেকে আবেগে ভেসে গিয়েছিলেন। কেউ কল্পনাই করতে পারেননি ৩৩৯ রান তাড়া করে জেতা সম্ভব। ইতিহাসের পাতায় নাম লিখে এ বার কাপ-প্রার্থনায় ডুবে গেলেন ভারতীয় ক্রিকেটারেরা।
শুক্রবার সারা দিন বিশ্রামের পরে দুপুরের দিকে মন্দিরে রওনা দেন রিচারা। সঙ্গ দেন তাঁদের অভিভাবকেরাও। বাবা মানবেন্দ্র ঘোষকে নিয়ে মন্দির গিয়েছিলেন রিচা। বঙ্গ তারকার বাবা বলছিলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার যা ঘটেছে, এখনও কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না। সত্যি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। রিচা যখন ব্যাট করতে নামল, খুব চাপে পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ও গুরুত্বপূর্ণ সময় দু’টো ছক্কা মেরে দেয়। সেই মুহূর্তে দ্রুত রান না তুললে আমরা আরও চাপে পড়ে যেতাম।’’
জেমিমা রডরিগ্সের কান্না দেখে ভারতের বাকি ক্রিকেটারেরাও চোখে জল ধরে রাখতে পারেননি। আবেগে ভাসেন রিচার বাবাও। তাঁর কথায়, ‘‘এমন একটি জয়ের পরে আবেগ ধরে রাখা খুব কঠিন। জেমাইমার আবেগ প্রত্যেকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল। এ বার একটাই প্রার্থনা, বিশ্বকাপ যেন জিততে পারি।’’
ভারতীয় দলের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার দীপ্তি শর্মাও আত্মবিশ্বাসী। ফাইনালে দুই ভারতীয় স্পিনারকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ, মুম্বইয়ের ডি ওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামের পিচ ব্যাটিং-সহায়ক। পেসাররা খুব একটা সাহায্য পাচ্ছেন না। রেণুকা সিংহ ঠাকুর, ক্রান্তি গৌড় গত সেমিফাইনালে সফল হতে পারেননি। রেণুকা একটিও উইকেট পাননি। ক্রান্তি ছ’ওভার বল করে ৫৮ রান দিয়েছিলেন। ভারতীয় বোলিং বিভাগে তাই স্পিনারদেরই বাড়তি দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিদের তালিকায় অ্যানাবেল সাদারল্যান্ডের সঙ্গে শীর্ষে রয়েছেন দীপ্তি। দু’জনেরই উইকেটসংখ্যা ১৭। বাঁ-হাতি স্পিনার শ্রী চরণী পেয়েছেন ১৩ উইকেট। তাঁর বিরুদ্ধে সহজে রান বার করতে পারছেন না কোনও ব্যাটার। শ্রী চরণীর ইকনমি রেট ৪.৯১। অর্থাৎ ওভার-প্রতি পাঁচেরও কম রান দিয়েছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিধ্বংসী ব্যাটারদের বিরুদ্ধেও চার ওভারে ৪৯ রান দিয়ে নিয়েছিলেন দুই উইকেট। ফাইনালে লরা উলভার্টদের আটকাতে ভারতীয় স্পিনারদেরই বড় দায়িত্ব নিতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাতে মিক্সড জ়োনে দীপ্তি বলছিলেন, ‘‘দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং বিভাগও শক্তিশালী। গভীরতা অনেক বেশি। তবে আমরা যে পদ্ধতিতে ম্যাচ খেলে এসেছি, সেটাই বজায় রাখব। আমাদের পরিকল্পনা সহজ, বিপক্ষকে বড় রান তুলতে দেব না। এই পিচে রান আটকানো খুব কঠিন। তবুও যতটা সম্ভব কম রানে বাঁধতে হবে বিপক্ষকে।’’
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তাঁর স্পেলের শুরুতেই উইকেট চান দীপ্তি। কারণ, এই পিচে যে কোনও ব্যাটার টিকে গেলে বড় রান তুলতে সমস্যা হবে না। তাঁর কথায়, ‘‘সব ম্যাচ তো আর সমান যাবে না। আমাদের লড়াই করেই এগোতে হবে। ফাইনালে দ্রুত উইকেট তোলার চেষ্টা করব। কারণ, বড় রান তাড়া করার চাপ প্রত্যেক দিন সামলানো যায় না। আমরা যদি আগে বল করি, দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৭০-এর মধ্যে আটকাতেই হবে।’’
ভারতীয় স্পিনারদের সামলানোর প্রস্তুতি শুরু করে দিল দক্ষিণ আফ্রিকাও। শুক্রবার থেকেই মুম্বইয়ের ডি ওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে অনুশীলন শুরু করে দিয়েছেন লরা উলভার্টরা। এ দিন মুম্বইয়ের তিন স্থানীয় স্পিনার নিয়ে এসে অনুশীলন করেন তাঁরা। দু’জন ছিলেন বাঁ-হাতি স্পিনার। এক জন অফস্পিনার। বাঁ-হাতি স্পিনারদের বিরুদ্ধে দীর্ঘক্ষণ রিভার্স সুইপের অনুশীলন করতে দেখা যায় দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ককে। নাদিন দে ক্লার্ক, মারিজ়ান ক্যাপরাও বেশ কিছুক্ষণ ব্যাটিং অনুশীলন করেন স্পিনারদের বিরুদ্ধে। কিন্তু দুপুর ৩.৩০ থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় অনুশীলন বাতিল করতে বাধ্য হন তাঁরা।
বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন উলভার্ট। আট ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ৪৭০ রান। ফাইনালে দ্রুত তাঁর উইকেট তুলে নিতে পারলে আরও কাপ-স্বপ্নে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবেন হরমনপ্রীতরা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)