E-Paper

ধৈর্য বাড়াতে দিনে পাঁচ ঘণ্টা ব্যাটিং ধ্রুবের

ধ্রবের ছোটবেলার কোচ ফুলচাঁদ শর্মা জানালেন, দিনে পাঁচ ঘণ্টা ব্যাট করে ধৈর্য বাড়িয়েছেন ভারতীয় তরুণ। কখনওই খুব একটা প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান ছিলেন না। পরিশ্রম ও নিষ্ঠা তাঁকে এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে।

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:১৪
প্রস্তুতি: ইডেনে নজরে ধ্রুব। ক্যাচিং প্র্যাক্টিস রাহুলের।

প্রস্তুতি: ইডেনে নজরে ধ্রুব। ক্যাচিং প্র্যাক্টিস রাহুলের। —নিজস্ব চিত্র।

ইডেনে পা রাখার আগে মাঠ ছুঁয়ে প্রণাম করে নিলেন। এক বার তাকালেন আকাশের দিকে। চোখ বুজে প্রার্থনা করলেন। কী চাইলেন ঈশ্বরের কাছে? এমনিতেই স্বপ্নের ছন্দে রয়েছেন তিনি। ইডেনে ঋষভ পন্থের পাশাপাশি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে পারেন। তিনি— ধ্রুব জুরেল।

ধ্রবের ছোটবেলার কোচ ফুলচাঁদ শর্মা জানালেন, দিনে পাঁচ ঘণ্টা ব্যাট করে ধৈর্য বাড়িয়েছেন ভারতীয় তরুণ। কখনওই খুব একটা প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান ছিলেন না। পরিশ্রম ও নিষ্ঠা তাঁকে এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে। ঋষভ পন্থ ফিরে এলেও ধ্রুবকে বাদ দেওয়া যাচ্ছে না। সম্ভবও নয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ়ের প্রথম ম্যাচে ১২৫ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলেছিলেন ধ্রুব। দ্বিতীয় টেস্টে বেশি ব্যাট করার সুযোগ পাননি। দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় বেসরকারি টেস্টের দুই ইনিংসেই শতরান করেন তিনি। পুরো ম্যাচে তাঁকে আউট করা যায়নি। প্রথম ইনিংসে অপরাজিত থাকেন ১৩২ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে করেন অপরাজিত ১২৭।

স্বপ্নের ছন্দে থাকা ধ্রুবকে কোনও যুক্তিতেই বাদ দেওয়া চলে না। ইডেনে যে ধরনের পিচ তৈরি করা হয়েছে তাতে নীতীশ কুমার রেড্ডির প্রয়োজন নেই। বুধবার অনুশীলন শেষেই তাঁকে ভারতীয় দল থেকে ছেড়ে দেওয়া হল। রাজকোটে দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে খেলবেন নীতীশ। তাঁর জায়গায় বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলানো হবে জুরেলকে।

উদীয়মান ভারতীয় তারকার কাহিনি যে কোনও উঠতি ক্রিকেটারকে প্রভাবিত করতে পারে। ধ্রুবের বাড়ি আগ্রায়। কিন্তু সেখানে ভাল কোনও ক্রিকেট অ্যাকাডেমি ছিল না। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ধ্রুব সিদ্ধান্ত নেন, নয়ডায় ফুলচাঁদ শর্মার কোচিং সেন্টারে ভর্তি হবেন। প্রাক্তন ক্রিকেটার পরবিন্দর আওয়ানা, তন্ময় আগরওয়ালরা নয়ডার অ্যাকাডেমি থেকেই উঠে এসেছিলেন। কিন্তু ধ্রুবের বাবা নীমচাঁদ (জুরেল) চাইতেন ছেলে পড়াশোনা করুক। বড় হয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিক। নীমচাঁদ নিজেও ছিলেন সেনাবাহিনীতে। কার্গিল যুদ্ধের অন্যতম সৈনিক তিনি। কিন্তু ধ্রুব কোনও মতেই পড়াশোনায় নিজেকে আটকে রাখতে চাননি। স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতীয় দলে খেলার। যা পূরণ হয়েছে।

১৪ বছর বয়সে ঠাকুরদাকে হারান ধ্রুব। ঠিক তার ১৩ দিন পরে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের দিনে বাবাকে গিয়ে বলেন, তিনি নয়ডায় রওনা দেবেন ফুলচাঁদ শর্মার ক্যাম্পে যোগ দিতে। তাঁর বাবা বুঝিয়েছিলেন, এত দূরে একা যাওয়া সম্ভব নয়। ধ্রুব শোনেননি। নয়ডায় তাঁদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে অনুশীলন করার সিদ্ধান্ত নেন। আনন্দবাজারকে নীমচাঁদ বলছিলেন, ‘‘আমরা আটকাতে পারিনি। নয়ডায় পৌঁছে কোচকে বলে, ও ভর্তি হতে চায়। ফুলচাঁদ স্যর বারণ করেননি। ভেবেছিলেন, ও বোধহয় বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে। ওর থেকে তাই আমার ফোন নম্বর চান। ফোন করে জানতে চান ধ্রুব কি সত্যি বাড়ি থেকে পালিয়ে সেখানে গিয়েছে? আমি আশ্বস্ত করি, শুধুমাত্র ক্রিকেটের টানে এত দূরে একা গিয়েছে ও।’’

তার পরেই একটি সমস্যার মধ্যে পড়েন ধ্রুব। নয়ডায় যে আত্মীয়ের বাড়িতে থাকার কথা ছিল, তিনি ফোন তুলছিলেন না। ধ্রুবের বাবার কথায়, ‘‘মানুষ চিনতে পারিনি। এতটুকু ছেলের সঙ্গে যে কেউ এ রকম করতে পারে ভাবিনি। ও নয়ডা রওনা দেওয়ার আগে সেই আত্মীয় আশ্বস্ত করে যে ওর বাড়িতেই থাকবে ধ্রুব। অথচ ও সেখানে পৌঁছনোর পরে আমাদের ফোন তুলছিল না। ফুলচাঁদ স্যর যদি তাঁর বাড়িতে না নিয়ে যেতেন, আমার ছেলেকে হয়তো রাস্তায় শুয়ে থাকতে হত।’’ সেই দিনের কথা মনে পড়লে ফুলচাঁদেরও গলা বুজে আসে। বলছিলেন, ‘‘কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে ওকে যেতে হয়েছে। তাই আজ এত সফল। সে দিন ওর আত্মীয় ফোন তোলেনি বলেই হয়তো ওর মধ্যে হার-না-মানা লড়াইয়ের মানসিকতা তৈরি হয়েছে।’’

ভারত ‘এ’ দলের বেসরকারি টেস্ট সিরিজ় শুরু হওয়ার আগে ফুলচাঁদ শর্মার কাছে অনুশীলন করতে গিয়েছিলেন ধ্রুব। ওয়েস্ট ইন্ডিজ় সিরিজ়ে সফল হলেও তাঁর কোচ জানতেন, আসল পরীক্ষা দিতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধেই। টেস্ট ক্রিকেটে সফল হতে গেলে প্রয়োজন টেকনিক ও ধৈর্য। সেই দিকেই নজর দিয়েছিলেন কোচ। ম্যাচের পরিস্থিতি তৈরি করে দিনে তিনটি সেশন ব্যাট করাতেন। একেবারে টেস্ট ম্যাচের মতো দু’ঘণ্টা অন্তর বিশ্রাম দিতেন। কোচের কথায়, ‘‘টেস্টে সফল হতে গেলে সারা দিন ব্যাট করার অভ্যেস তৈরি করতে হয়। প্রত্যেক দিন পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা ব্যাট করত। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ়ের আগে এ ভাবেই তৈরি করেছি। টানা ব্যাট করার ফলে ধৈর্যও বেড়েছে। আশা করি, টেস্ট সিরিজ়েও ও সফল হবে।’’

ধ্রুবের প্রশংসা করেন ভারতীয় দলের সহকারী কোচ রায়ান টেন দুশখাতেও। বুঝিয়ে দেন, পন্থের পাশাপাশি খেলানো হবে তাঁকে। দুশখাতের কথায়, ‘‘গত ছয় মাসে জুরেল যে রকম খেলেছে, তাতে ওকে এই টেস্টের বাইরে রাখা কঠিন। গত সপ্তাহে বেঙ্গালুরুতে জোড়া শতরান করেছে। অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না যদি পন্থ ও জুরেল একসঙ্গে খেলে।”

ভারতের অনুশীলন দেখেও বোঝা গেল, দুই উইকেটকিপারকেই দলে রাখা হবে। ঋষভ খেলবেন ব্যাটসম্যান-কিপার হিসেবে। ধ্রুব বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান। কে এল রাহুল, যশস্বী জায়সওয়ালই ভারতের ওপেনার। তিন নম্বরে সাই সুদর্শন।

ইডেনে এ দিন ব্রঙ্কো পরীক্ষা দিতে দেখা গেল রাহুলকে। ফিজ়িয়ো আদ্রিয়ান লে রু তিনটি মার্কার বসিয়ে দৌড় করালেন ভারতীয় ওপেনারকে। রাহুল ব্যাটও করলেন দীর্ঘক্ষণ। বিকেলে গঙ্গার হাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে নতুন বলের বিরুদ্ধে ব্যাট করলেন দুই ওপেনার। ইডেনের পিচে যে বাউন্স থাকবে তা নিশ্চিত। তাই খাটো লেংথের বলের বিরুদ্ধে পুল শটের অনুশীলন করেন দুই ওপেনার।

ভারতীয় ব্যাটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ রাহুল। ঠান্ডা মাথায় ইনিংস সাজান। যশস্বী আক্রমণ করলেও তাঁকে রক্ষণাত্মক ইনিংসই খেলতে হবে। বিপক্ষের শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে রাহুলকে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ, শুধু পেস নয়, স্পিন বিভাগেও ভারতের কপালে ভাঁজ ফেলতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Eden Gardens KL Rahul

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy