২০০৮ সালের মুম্বই হামলার পর থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট। শুধুমাত্র আইসিসি ও এশীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় মুখোমুখি হয় দুই দেশ। কিন্তু গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হত্যালীলার পরে আরও কড়া পদক্ষেপ করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। তার ফলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের। আর্থিক দিক থেকে আরও দেউলিয়া হতে পারে মহসিন নকভির নেতৃত্বাধীন বোর্ড। পাশাপাশি সমস্যায় পড়তে পারে পাকিস্তানের ক্রিকেটও।
আইসিসির কাছে দাবি ভারতীয় বোর্ডের
পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের পর আইসিসির কাছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড আর্জি জানিয়েছে, এ বার থেকে আইসিসি প্রতিযোগিতাতেও যেন দু’দলকে এক গ্রুপে রাখা না হয়। অর্থাৎ, দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট তো বন্ধ হয়েই গিয়েছে, এ বার বিশ্বকাপ বা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো প্রতিযোগিতাতেও পাকিস্তানের মুখোমুখি হতে চাইছে না ভারত। পাকিস্তানের ক্রিকেটে অর্থের একটা বড় অংশ আসে এই সব ম্যাচ থেকে। যদি ভারত তাদের সঙ্গে খেলতে না চায়, তা হলে সমস্যায় পড়বে পাকিস্তান।
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ না হলে কী সমস্যা হবে পাক বোর্ডের
ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক প্রতিযোগিতা বন্ধ হওয়ার পর থেকে আইসিসি প্রতিযোগিতায় ভারত ও পাকিস্তানকে এক গ্রুপে রাখা একটা নিয়ম হয়ে গিয়েছে। আইসিসি ইচ্ছা করেই দুই দলকে এক গ্রুপ রাখে। তাতে গ্রুপ পর্বেই দেখা হয়ে যায় তাদের। ভারত-পাকিস্তানের এই খেলা থেকে লাভের একটা বড় অংশ আদায় হয়। ‘ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’ জানিয়েছে, গত দুই দশকে শুধুমাত্র ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা আয় করেছে আইসিসি। এই ম্যাচের সময় ১০ সেকেন্ডের একটি বিজ্ঞাপনের জন্যও কোটি কোটি টাকা খরচ করতে হয়। সেই সম্ভাবনা এ বার বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অন্তত ভারতীয় বোর্ড আইসিসির কাছে সেই দাবিই করেছে।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড সে দেশের ক্রিকেট চালানোর জন্য মূলত আইসিসির উপরেই নির্ভরশীল। আইসিসি থেকে যে টাকা তারা পায় সেখান থেকেই দেশের ক্রিকেটের খরচ চালানো হয়। আর সেই টাকার একটা বড় অংশ নির্ভর করে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের উপর। যদি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ না হয় তা হলে আইসিসির কাছ থেকে কম টাকা পাবে তারা।
গত কয়েকটি আইসিসি প্রতিযোগিতায় গ্রুপ পর্ব টপকাতেই ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তান। তাই যদি গ্রুপ পর্বে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ না হয়, তা হলে পরের দিকেও এই ম্যাচ হওয়ার সম্ভাবনা কম। সে ক্ষেত্রে যেমন বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থাও সমস্যায় পড়বে, তেমনই সমস্যায় পড়বে পাকিস্তান বোর্ডও। তাদের রোজগার কমবে।
আরও পড়ুন:
পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচের সম্প্রচার বন্ধ ভারতে
পাকিস্তানে আয়োজিত ক্রিকেট ম্যাচের সম্প্রচার ভারতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, পাকিস্তান সুপার লিগের কোনও খেলা এই দেশে দেখানো হবে না। এমনকি, পাকিস্তানের জাতীয় দলের আগামী সিরিজ়গুলিও দেখানো হবে না। ক্রিকেটের সবচেয়ে বেশি দর্শক রয়েছে ভারতে। তাই সব দেশ চায় ভারতে তাদের খেলা দেখানো হোক। ভারতের সময় অনুযায়ী খেলার সূচিও করে তারা। ভারতে সম্প্রচার থেকে ভাল টাকা পেত পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। কিন্তু যদি ভারতে পাকিস্তানের ম্যাচ দেখানো না হয় তা হলে আর্থিক সমস্যায় পড়বে পাকিস্তান বোর্ড। তার প্রভাব পড়বে সে দেশের ক্রিকেটেও।
সমস্যায় পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটারেরাও
পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটারদের বেশির ভাগেরই ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। সেই সব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবারদের একটা বড় অংশ ভারতীয়। কিন্তু পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের পরে অনেকগুলি ইউটিউব চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে শোয়েব আখতার, বাসিত আলি, রশিদ লতিফের চ্যানেল রয়েছে। ভারতে তাঁদের চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর্থিক সমস্যায় পড়বেন তাঁরা। অর্থাৎ, সে দেশের ক্রিকেটের পাশাপাশি ক্রিকেটারেরাও সমস্যায় রয়েছেন।
পাকিস্তানের ক্রিকেট ভারতের উপর কতটা নির্ভরশীল, সে কথা আগেই জানিয়েছিলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার রামিজ় রাজা। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, “এশিয়ার ক্রিকেটের ৯০ শতাংশ রোজগার হয় ভারত থেকে। তার ফলেই আইসিসির উপর ভারতের প্রভাব এত বেশি। এটাই ভয়ের। কারণ, যদি কাল ভারত আইসিসিকে বলে পাকিস্তানকে টাকা না দিতে, তা হলে আইসিসি সেটাই মানবে। সে ক্ষেত্রে পাকিস্তান ক্রিকেট ভেঙে পড়বে।” পহেলগাঁও হত্যালীলার পর ভারত যে ভাবে পাকিস্তান ক্রিকেটের উপর চাপ বাড়াচ্ছে তাতে সমস্যা বাড়ছে সে দেশের ক্রিকেট বোর্ডের। এই সমস্যা ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে। এখন দেখার, এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড আইসিসির কাছে নতুন কোনও আর্জি নিয়ে যায় কি না।