ভাঙা পায়ে ঋষভ পন্থের লড়াকু ইনিংস দেখে মনে হয়েছিল, ভারতীয় বোলারদের মধ্যেও সেই আগ্রাসন দেখা যাবে। কিন্তু কোথায় কী? ইংল্যান্ডের প্রথম উইকেট ফেলতে সময় লাগল ৩২ ওভার। জসপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ সিরাজদের পাড়ার স্তরে নামালেন বেন ডাকেট, জ্যাক ক্রলিরা। ইংল্যান্ডের ব্যাটারদের দেখে মনে হল তাঁরা অন্য কোনও উইকেটে খেলছেন। যেখানে ভারতের ব্যাটারেরা সমস্যায় পড়লেন সেখানে শুরু থেকে চালিয়ে খেলল ইংল্যান্ড।
ভারতের ৩৫৮ রানের জবাবে দ্বিতীয় দিনের শেষে ইংল্যান্ডের রান ২ উইকেটে ২২৫। শতরান হাতছাড়া হয়েছে দুই ওপেনার ক্রলি ও ডাকেটের। ভারতের থেকে ১৩৩ রান পিছিয়ে রয়েছে ইংল্যান্ড। তবে যে ভাবে তারা ব্যাট করছে, সেই রকম চালিয়ে খেললে তৃতীয় দিন ভারতকে টপকাতে বেশি সময় লাগবে না বেন স্টোকসদের।
ম্যাঞ্চেস্টার টেস্টের দ্বিতীয় দিনের স্কোরকার্ড। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ম্যাঞ্চেস্টারে দ্বিতীয় দিনের সবচেয়ে বড় চমক ছিলেন পন্থ। প্রথম দিন তিনি যে চোট পেয়েছিলেন তাতে আবার খেলতে পারবেন, সেই আশা খুব কম ছিল। খবর ছড়িয়ে পড়েছিল যে সিরিজ় থেকেই ছিটকে গিয়েছেন পন্থ। কিন্তু দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরুর পর দেখা যায়, সাজঘরে প্রস্তুত তিনি। ৪১ রানের মাথায় শার্দূল ঠাকুর আউট হওয়ার পর নামলেন পন্থ। দেখে বোঝা যাচ্ছিল, হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে রান নিলেন। কিন্তু লড়াই ছাড়লেন না। অর্ধশতরান করলেন পন্থ। তিনি থাকায় ভারতের রান ৩৫০ পার হল। শেষ পর্যন্ত ৫৪ রানের মাথায় জফ্রা আর্চারের বলে বোল্ড হয়ে ফিরলেন পন্থ। ৩৫৮ রানে শেষ হল ভারতের প্রথম ইনিংস।
আরও এক বার বল হাতে নজর কাড়লেন বেন স্টোকস। চলতি সিরিজ়ে ইংল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল তিনি। প্রতিটা ইনিংসে উইকেট নিয়েছেন। ম্যাঞ্চেস্টারে প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন স্টোকস। তাঁকে সাহায্য করলেন আর্চার। তিনি নিলেন ৩ উইকেট। বৃহস্পতিবার প্রথম দেড় সেশনে যে ভাবে ইংরেজ পেসারেরা সুইং করাচ্ছিলেন, তাতে অবাক হতে হচ্ছিল। ৩০ ওভার পুরনো বলও এক হাত সুইং করছিল। সকালের দিকে মেঘলা আবহাওয়া ইংরেজ বোলারদের আরও সুবিধা করে দিয়েছিল।
কিন্তু কয়েক মিনিটে বদলে গেল ছবিটা। ভারত যখন বল করতে নামল, তখন মেঘ সরে উঠল ঝকঝকে রোদ। ফলে আবহাওয়ার সুবিধা পেল না ভারত। পাশাপাশি হয়তো একটা ভুলও করলেন শুভমন গিল। বুমরাহের পাশে নতুন বল তিনি তুলে দিলেন অভিষেক টেস্টে নামা অংশুল কম্বোজের হাতে। কম্বোজের বলের গতি ১২৫-১৩০ কিলোমিটারের আশপাশে। ফলে তিনি বেশি সুবিধা পেলেন না। প্রথম ওভার থেকে রান দিলেন। ফলে অপর প্রান্তে বুমরাহও সমস্যায় পড়লেন। চা বিরতির আগে মাত্র ১৪ ওভারে ৭৭ রান তুললেন ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার। সেখানেই খেলার ছবিটা বদলে গেল।
আরও পড়ুন:
চা বিরতির পরেও একই ছবি। দেখে বোঝা যাচ্ছিল না, যে একই পিচে খেলা হচ্ছে। সিরাজ, শার্দূল ঠাকুরও রান দিলেন। ওভারে ৫ রানের গড়ে রান করছিল ইংল্যান্ড। দুই ওপেনার অর্ধশতরান করেন। তাঁদের খেলতে কোনও অসুবিধা হচ্ছিল না। বুমরাহ বাদে ভারতের কোনও বোলার মেডেন নিতে পারেননি। ফলে রানের গতি কমেনি। কিন্তু বুমরাহ একাই কী করবেন? মাঝে মাঝে তাঁর বলে ইংরেজ ব্যাটারেরা সমস্যায় পড়লেও নিজের সেরা ছন্দে দেখা যায়নি তাঁকে। দেখে মনে হচ্ছিল, ইংল্যান্ডের দুই ওপেনারই শতরান করবেন। অবশেষে ইংল্যান্ডকে প্রথম ধাক্কা দেন জাডেজা। ৮৪ রান করে ফেরেন ক্রলি। ৯৪ রানে কম্বোজের বলে আউট হন ডাকেট। বাজে শট খেলার খেসারত দিতে হয় তাঁকে। দুই ব্যাটারই শতরান হাতছাড়া করেন। ডাকেটকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল, কতটা হতাশ তিনি।
দিনের বাকি সময় আরাম করে খেলে দিলেন জো রুট ও ওলি পোপ। দুটো উইকেট পেলেও ভারতীয় বোলারদের দেখে মনে হয়নি, ইংল্যান্ডকে চাপে রাখতে পেরেছেন তারা। দ্বিতীয় দিন ৪৬ ওভার ব্যাট করেছে ইংল্যান্ড। করেছে ২২৫ রান। বোঝা যাচ্ছে, কতটা দ্রুত রান করেছে তারা। তৃতীয় দিন প্রথম সেশনে যদি ভারত খেলায় ফিরতে না পারে তা হলে ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে বড় রান করবে। তেমনটা হলে তিন দিনেই ম্যাচের রাশ ভারতের হাত থেকে বেরিয়ে যাবে। এখন দেখার, তৃতীয় দিনের শুরুটা কেমন করেন শুভমনেরা।