এশিয়া কাপ দু’দিন আগে শেষ হয়ে গেলেও ভারত-পাকিস্তান বিতর্ক থামার নাম নেই। বরং তা আরও বেড়ে চলেছে। এশিয়া কাপ জিতে ট্রফি নেয়নি ভারতীয় দল। সেই ঘটনা নিয়ে দু’দেশের প্রাক্তন ক্রিকেটারেরা একে অপরকে নিশানা করেছেন। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটারেরা ভারতের দুই প্রাক্তন ক্রিকেটারের সমর্থন পেলেন না। ভারতের ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কপিল দেব ও সেই দলের সদস্য সৈয়দ কিরমানি ভারতের এই কাজের সমালোচনা করেছেন। এই ঘটনা নিয়ে মুখ খোলেননি ভারতের আরও দুই প্রাক্তন অধিনায়ক বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা। ভারতের আরও এক প্রাক্তন অধিনায়ক তথা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রাক্তন সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ভারতকে শুভেচ্ছা জানালেও এই বিতর্কে নীরব তিনিও।
‘ইন্ডিয়া টুডে’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কপিল বলেন, “আমি চাই ক্রিকেটকে ক্রিকেটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হোক। সেটাই বোধহয় ভাল। সারা জীবন প্রতিপক্ষকে সম্মান দেখিয়েছি। এখনকার ক্রিকেটারদের মধ্যে সেটা উধাও।” পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমের কাছেও আর্জি জানিয়েছেন বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। তিনি বলেন, “এই ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমেরও একটা ভূমিকা আছে। খেলার মধ্যে যাতে কোনও ভাবেই রাজনীতি না ঢোকে সেটা আপনাদেরও দেখতে হবে। খেলোয়াড়দের মতো সাংবাদিকদেরও দায়িত্ব খেলাকে খেলার মধ্যে রাখার।”
কিরমানি আরও এক ধাপ এগিয়েছেন। তাঁর মতে, ভারত-পাকিস্তানের খেলায় কোনও ‘ভদ্রলোক’ ছিল না। মাঠে একে অপরের সঙ্গে যে ব্যবহার করা হয়েছে তা ঔদ্ধত্যপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে কিরমানি বলেন, “সত্যি বলতে, কোনও ভদ্রলোক এই ম্যাচ খেলেনি। মাঠে খারাপ ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ ব্যবহার করা হয়েছে। ভারতের বাইরে থেকে আমার বন্ধুরা যা বলছে তাতে আমি লজ্জিত। ওর বলছে, আমাদের সময় ক্রিকেট ভদ্রলোকেরা খেলত। কিন্তু এশিয়া কাপ যা হল তা জঘন্য।”
তাঁদের সময়ে ভারত-পাকিস্তান দু’দলের ক্রিকেটারেরা একে অপরকে কতটা সম্মান করতেন সেই উদাহরণ দেখিয়ে এখনকার সঙ্গে তার তুলনা করেছেন কিরমানি। তিনি বলেন, “আমাদের সময়ে কী সুন্দর সম্পর্ক ছিল। পাকিস্তানের ক্রিকেটারেরা ভারতে আসত। আমরা পাকিস্তানে যেতাম। কী ভালবাসা, কী বন্ধুত্ব ছিল। আমাদের পরিবারও এক অপরের সঙ্গে দেখা করত। কিন্তু এখন কী হচ্ছে? যা দেখছি তাতে হতাশ হচ্ছি। লজ্জা লাগছে।”
আরও পড়ুন:
কপিল ও কিরমানি ভারতীয় ক্রিকেটারদের সমালোচনা করলেও মুখ খোলেননি কোহলি ও রোহিত। গত বছর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন তাঁরা। আপাতত ক্রিকেটের বাইরে রয়েছেন। কোহলি সমাজমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেও ভারতের এশিয়া কাপ জয় নিয়ে কিছু লেখেননি। সংবাদমাধ্যমেও মুখ খোলেননি। রোহিতও সমাজমাধ্যমে নিজের ব্র্যান্ডের প্রচারে ব্যস্ত। বেঙ্গালুরুর সেন্টার অফ এক্সেলেন্সে ১০ কোজি ওজন ঝরালেও সূর্যদের এশিয়া কাপ জয় নিয়ে নীরব তিনি। ভারতের হয়ে ক্রিকেটজীবন শেষের পথে রোহিত, কোহলির। এক দিনের ক্রিকেটেও কত দিন তাঁরা খেলবেন, তার নিশ্চয়তা নেই। সেই কারণেই কি আর বিতর্কে জড়াতে চাইছেন না দুই ক্রিকেটার? সেই জন্যই কি নীরব থাকলেন তাঁরা?
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত চলাকালীনও সৌরভ মন্তব্য করেছিলেন যে, দু’দেশের মধ্যে ক্রিকেট বন্ধ হওয়া উচিত নয়। তিনি এশিয়া কাপ শেষে সমাজমাধ্যমে ভারতকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সৌরভ লেখেন, “দুর্দান্ত এক রাতের জন্য ভারতকে শুভেচ্ছা। চাপের মধ্যেও ব্যাট ও বলে ভারত দেখিয়েছে যে ওরা বেশি ভাল দল। এই তরুণ ছেলেগুলো দুর্দান্ত।” তবে ভারতের ট্রফি না নেওয়া নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি সৌরভ। তিনিও হয়তো বিতর্ক থেকে দূরে থাকতে চেয়েছেন। রোহিত, কোহলি, সৌরভেরা নীরব থাকলেও অবশ্য বিতর্ক কমছে না। তা বেড়েই চলেছে।