অস্ট্রেলিয়ায় এক দিনের সিরিজ় হারলেও টি-টোয়েন্টি সিরিজ় হারতে হচ্ছে না ভারতকে। বৃহস্পতিবার চতুর্থ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৪৮ রানে হারিয়ে দিলেন সূর্যকুমার যাদবেরা। গোল্ড কোস্টে টসে হেরে আগে ব্যাট করে ভারত তুলেছিল ১৬৭/৮। জবাবে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস শেষ হয়ে গেল ১১৯ রানে। সিরিজ়ে ভারত আপাতত ২-১ এগিয়ে। পঞ্চম ম্যাচ শনিবার ব্রিসবেনে।
জিতলেও ভারতের চিন্তা থাকল ব্যাটারদের নিয়ে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বেশি দূরে নেই। এত দিনে মোটামুটি দলের কাঠামো তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা। তবে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ়ের চতুর্থ ম্যাচেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার রাস্তা থেকে হাঁটলেন না গৌতম গম্ভীরেরা। দলে ভারত কোনও বদল করেনি। বদল হল ব্যাটিং অর্ডারে। আচমকাই শিবম দুবেকে উপরে উঠিয়ে আনা হল। তিলক বর্মাকে মাঝে নামানো হল। অক্ষর পটেল আটে নামলেন।
তবে ব্যাটারদের যে ব্যর্থতা ছিল তা ঢেকে দিলেন বোলারেরা। অক্ষরের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং নজর কেড়ে নিল। ব্যাটে কাজে না এলেও চাপের মুখে নিয়ন্ত্রিত বল করলেন শিবমও। শেষ বেলায় এসে অস্ট্রেলিয়ার লোয়ার অর্ডার একার হাতেই শেষ করে দিলেন ওয়াশিংটন। বল করার সময়ে মনে হচ্ছিল ভারতের পক্ষে কাজ কঠিন। কিন্তু দিনের শেষে বোলারেরা হিসাব বদলে দিলেন। যে ক’জন বল করেছেন, সকলেই উইকেট পেয়েছেন।
গোল্ড কোস্টে অতীতে কখনও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলেনি ভারত। ফলে পিচ কেমন হতে পারে সে ব্যাপারে বিশেষ ধারণা ছিল না তাদের। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক মিচেল মার্শও টসের পর বলেন, এই মাঠে তাঁরা বিশেষ খেলেন না। ফলে খুব বেশি পরিচিত নন পিচ নিয়ে। তবে দিনের শেষে দেখা গেল, অস্ট্রেলিয়ার থেকে পিচ বেশি ভাল কাজে লাগাল ভারত।
পিচ মন্থর হওয়ায় বল সহজে ব্যাটে আসছিল না। ফলে ভারতীয় ব্যাটারদের খেলতে অসুবিধা হচ্ছিল শুরু থেকেই। শুভমন এবং অভিষেক শুরু থেকে আড়াআড়ি শট খেলার চেষ্টা করছিলেন। তা ছাড়া, গোল্ড কোস্টের মাঠ বেশ বড় হওয়ায় বড় শট খেলাও মুশকিলের হয়ে যাচ্ছিল। মন্থর পিচে অফকাটার-সহ সব বলে বিভিন্ন রকম বৈচিত্র এনে ভারতের ব্যাটারদের একটানা সমস্যায় ফেলে গেলেন নেথান এলিস।
সমস্যা হচ্ছিল আরও একটি জায়গায়। বলের অসমান বাউন্সের কারণে কোনও বল নিচু হয়ে আসছিল, কোনও বল আচমকাই উঁচু হয়ে যাচ্ছিল। ফলে দুই ওপেনারই খুব একটা সুবিধা করতে পারছিলেন না। ষষ্ঠ ওভারে মার্কাস স্টোইনিসের সে রকমই একটি বল আচমকা লাফিয়ে লাগল হেলমেটের নীচে। স্বাভাবিক ভাবে কনকাশন পরীক্ষা করাতে হল।
তবু পাওয়ার প্লে-তে প্রায় ৫০-এর কাছাকাছি রান উঠে যায়। তার পরেই প্রথম উইকেট হারায় ভারত। হেলমেটে লাগার পর অভিষেক বোধহয় একটু মরিয়া হয়ে গিয়েছিলেন। পরের ওভারে অ্যাডাম জ়াম্পাকে ছয় মারেন। দু’বল পরেই আউট।
মনে করা হয়েছিল তিনে সূর্যকুমার অথবা তিলক নামবেন। দেখা গেল শিবমকে হেঁটে আসতে। এই জায়গায় অতীতে খুব একটা খেলেননি তিনি। গোল্ড কোস্টে সিরিজ়ে টিকে থাকার ম্যাচে কেন ভারতীয় দল এ রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গেল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। সেই পরীক্ষা সফল হল না। শিবম ২২ রান করেছেন বটে, তবে খেলেছেন ১৮টি বল। অর্থাৎ স্ট্রাইক রেট একশোর সামান্য বেশি। তিনে ব্যাট করতে নামা ব্যাটারের পক্ষে তা খুবই কম। চারে নেমে সফল হলেন না সূর্য (২০) নিজেও। তার আগেই অবশ্য ফিরে গিয়েছেন শুভমন গিল (৪৬)। চলতি টি-টোয়েন্টি সিরিজ়ে নিজের সর্বোচ্চ রান করলেন বটে। কিন্তু এত বেশি বল খেললেন যা তাঁর থেকে আশা করা যায় না।
মরিয়া হয়ে তিলককে নামানো হল পাঁচে। তবে প্রতি দিন নতুন জায়গার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। সেই এশিয়া কাপ থেকেই তিলকের ব্যাটিং পজিশনের উত্থান-পতন চলছে। এ দিন তিনি পাঁচে মানিয়ে নিতেই পারলেন না। ৬ বল খেলে ৫ রান করে আউট। ব্যর্থ জিতেশ শর্মা (৫) এবং ওয়াশিংটন সুন্দর (১২)।
অতীতে দলের বিপদের সময় একাধিক বার দেখা গিয়েছে অক্ষর পটেলকে তুলে আনতে। কেন এ দিন তাঁকে আটে নামানো হল সেটাও গম্ভীরের কাছে প্রশ্ন। অক্ষর ১১ বলে ২১ রান করলেন। আরও বেশি বল পেলে নিশ্চয়ই বেশি রান তুলতে পারতেন।
অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা দেখে মনে হচ্ছিল তারা যেন অন্য পিচে খেলতে নেমেছে। প্রথম দু’ওভার একটু ধরে খেললেও তৃতীয় ওভার থেকেই হাত খুলতে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। অর্শদীপের দ্বিতীয় ওভার থেকে ১৫ রান নেয় তারা। পরের ওভারে বরুণ দেন ৯ রান।
আরও পড়ুন:
পঞ্চম ওভারে প্রথম সাফল্য পায় ভারত। অক্ষর তুলে নেন ম্যাথু শর্টকে। আম্পায়ার আউট দেননি। অক্ষরের জোরাজুরিতে রিভিউ নেন সূর্যকুমার। তা সফলও হয়। বরুণের বলে মার্শের ক্যাচ পড়ে। নবম ওভারে জশ ইংলিসকে (১২) ফিরিয়ে দেন অক্ষর। ওই আউটের পরেই অস্ট্রেলিয়ার মনোবল কিছুটা ভেঙে পড়ে। পরের ওভারেই ফিরে যান মার্শ (৩০)। শিবমের বলে দৈত্যাকার ছক্কা হাঁকিয়েও পরের বলেই ফেরেন টিম ডেভিড (১৪)।
অস্ট্রেলিয়ার অনেক আশা ছিল গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে। তাঁকে ম্যাচ ফিট করানোর জন্য বলও করানো হয়নি। স্টাম্প ছেড়ে শুরু থেকেই বড় শট খেলার চেষ্টা করছিলেন। তবে সফল হচ্ছিলেন না। ম্যাক্সওয়েলকে (২) তুলে নিলেন বরুণই। বাকি কাজটা করলেন ওয়াশিংটন। ১৭তম ওভারে বল করতে এসেছিলেন। প্রথম ওভারেই তুলে নেন স্টোইনিস (১৭) এবং জ়েভিয়ার বার্টলেটকে (০)। পরের ওভারে জসপ্রীত বুমরাহ নিখুঁত ইয়র্কারে আউট করেন বেন ডোয়ারশুইসকে (৫)।
অস্ট্রেলিয়ার রান রেট তার অনেক আগেই যেখানে পৌঁছে গিয়েছিল ওখান থেকে ম্যাচে ফেরা অসম্ভব ছিল। ১৯তম ওভারে অ্যাডাম জ়াম্পাকে (০) আউট করে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন ওয়াশিংটন।