নিউ জ়িল্যান্ডকে হারিয়ে চতুর্থ দল হিসাবে মহিলাদের এক দিনের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠল ভারত। বৃহস্পতিবার বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে কিউয়িদের ৫৩ রানে (ডার্কওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে) হারালেন হরমনপ্রীত কৌরেরা। ৪৯ ওভারে ভারত ৩ উইকেটে ৩৪০ রান তোলার পর নিউ জ়িল্যান্ডের জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪৪ ওভারে ৩২৫ রান। শেষ পর্যন্ত নিউ জ়িল্যান্ড করে ৮ উইকেটে ২৭১ রান।
এ দিনের জয়ের পর ছয় ম্যাচে ভারতের পয়েন্ট হল ৬। অন্য দিকে, নিউ জ়িল্যান্ডের ছয় ম্যাচে পয়েন্ট চার। লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে ভারত হারলে এবং কিউয়িরা হারলে দু’দলই শেষ করবে ৬ পয়েন্টে। কিন্তু বেশি ম্যাচ জেতার সুবাদে শেষ চারে জায়গা নিশ্চিত করে নিল ভারত। কারণ হরমনপ্রীতদের জয়ের সংখ্যা তিন। নিউ জ়িল্যান্ড শেষ ম্যাচ জিতলেও তাদের জয়ের সংখ্যা হবে ২। লিগ পর্বে ভারতের পক্ষে প্রথম তিন দলের মধ্যে থাকা সম্ভব নয়। হরমনপ্রীতেরা চার নম্বরেই থাকবেন। কারণ তৃতীয় স্থানে থাকা ইংল্যান্ড ৯ পয়েন্টে পৌঁছে গিয়েছে আর ভারত শেষ ম্যাচ জিতলেও সর্বোচ্চ ৮ পয়েন্টে পৌছোবে। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে কারা প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে থাকবে, তা নিশ্চিত নয়। স্বাভাবিক ভাবেই সেমিফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ চূড়ান্ত হয়নি। দু’টি সেমিফাইনাল হবে যথাক্রমে ২৯ এবং ৩০ অক্টোবর।
মহিলাদের এক দিনের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠতে হলে নিউ জ়িল্যান্ডকে হারাতে হবে। এই পরিস্থিতিতে খেলতে নেমে বৃহস্পতিবার নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধেই ব্যাট হাতে জ্বলে উঠলেন দুই ওপেনার স্মৃতি মন্ধানা, প্রতিকা রাওয়াল। তাঁদের শতরানের সুবাদে জয়ের জন্য নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে হরমনপ্রীত কৌরের দল করে ৪৮ ওভারে ২ উইকেটে ৩২৯ রান। এর পর বৃষ্টির জন্য খেলা বন্ধ রাখতে হওয়ায় আম্পায়ারেরা সিদ্ধান্ত নেন ম্যাচ হবে ৪৯ ওভারের। এ দিনের ৩৪০ মহিলাদের এক দিনের বিশ্বকাপে ভারতের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
বুধবার পর্যন্ত ভারতের মহিলা দলের এক জন ব্যাটারও শতরান করতে পারেননি এ বারের বিশ্বকাপে। কোচ অমল মুজুমদারকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল। তিনি গত ছ’সাত মাসের পারফরম্যান্সের কথা বলে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেছিলেন। বৃহস্পতিবার মাঠে নেমে উত্তর দিলেন মন্ধানা এবং প্রতিকা।
টস জিতে মুম্বইয়ের ২২ গজে ভারতকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠান নিউ জ়িল্যান্ডের অধিনায়ক সোফি ডিভাইন। সেই সুযোগ সম্পূর্ণ কাছে লাগালেন মন্ধানা এবং প্রতিকা। শুরুটা একটু সাবধানে করলেও ম্যাচ যত এগিয়েছে, তত আগ্রাসী মেজাজে দেখা গিয়েছে দুই ওপেনারকে। অভিজ্ঞ মন্ধানাই কিউয়ি বোলারদের আক্রমণের মূল দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। প্রথম উইকেটের জুটিতে তাঁরা তুললেন ২১২ রান। মন্ধানা খেললেন ৯৫ বলে ১০৯ রানের ইনিংস। মারলেন ১০টি চার এবং ৪টি ছক্কা। মন্ধানা আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট করার সময় ২২ গজের অন্য প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন প্রতিকা। তবে সহ-অধিনায়ক আউট হওয়ার পর প্রতিকাও আগ্রাসী ব্যাটিং শুরু করেন তিনি। তাঁর ব্যাট থেকে এল ১৩৪ বলে ১২২ রানের ইনিংস। ১৩টি চারের পাশাপাশি ২টি ছয় মারলেন। তিন নম্বরে নেমে দ্রুত রান তোলার গতি বজায় রাখলেন আগের ম্যাচে প্রথম একাদশ থেকে বাদ পড়া জেমাইমা রদ্রিদেজও। চার নম্বরে নামা অধিনায়ক হরমনপ্রীত (১০) দ্বিতীয় বার খেলা শুরু হওয়ার পর মারতে গিয়ে আউট হন। জেমাইমা ৫৫ বলে ৭৬ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন। মারেন ১১টি চার। এক বলের জন্য ব্যাট করতে নেমে রিচা ঘোষ ৪ রান করেন।
নিউ জ়িল্যান্ডের কোনও বোলারই এ দিন বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি। ভারতীয়দের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের সামনে লাইন-লেংথ ঠিক রাখতে পারেননি তাঁরা। কেউই রানের গতি আটকাতে পারেননি। অ্যামেলিয়া কের ৬৯ রানে ১ উইকেট নিয়েছেন। ৪০ রানে ১ উইকেট সুজ়ি বেটিসের। ৫২ রানে ১ উইকেট রোজমেরি মেয়ারের।
ভারতের ইনিংস শেষ হওয়ার পর আরও এক দফা বৃষ্টি হওয়ায় ওভার সংখ্যা কমিয়ে ৪৪ করা হয়। তাতে নিউ জ়িল্যান্ডের জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩২৫। এই রান তাড়া করতে নেমে স্বস্তিতে ছিলেন না কিউয়ি ব্যাটারেরা। নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারিয়েছে ডিভাইনের দল। ক্রান্তি গৌড়ের শুরুতেই আউট হয়ে যান সুজ়ি বেটস (১)। তাতে আরও চাপে পড়ে যায় কিউয়িরা। অন্য ওপেনার জর্জিয়া প্লিমার (২৫ বলে ৩০) এবং তিন নম্বরে নামা অ্যামেলিয়া কের (৫৩ বলে ৪৫) দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু চার নম্বরে নেমে দলকে আবার চাপে ফেলে দেন অধিনায়ক ডিভাইন (৬)। ফলে ওভার প্রতি রান তোলার লক্ষ্য ক্রমশ বাড়তে থাকে নিউ জ়িল্যান্ডের। ভারতীয় বোলারেরাও এ দিন যথেষ্ট নিয়ন্ত্রিত বোলিং করায় ডিভাইনের দলের কাজ আরও কঠিন হয়ে যায়। পাঁচ নম্বরে নেমে চেষ্টা কিছুটা করলেন ব্রুকি হ্যালিডে। কিন্তু ২২ গজের অন্য প্রান্ত থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য পেলেন না। ম্যাডি গ্রিন আউট হলেন ১৮ রানে। ইসাবেলা গেজ়ের সঙ্গে হ্যালিডের ষষ্ঠ উইকেটের জুটিও প্রয়োজন মতো রান তোলার গতি বাড়াতে ব্যর্থ হয়। ভারতের জয়ের অপেক্ষা বৃদ্ধি ছাড়া আর কিছু করতে পারেননি তাঁরা। তাঁদের জুটি ওঠে ৭২ রান। হ্যালিডে করলেন ৮৪ বলে ৮১ রান। মারলেন ৯টি চার এবং ১টি ছয়। তিনি আউট হওয়ার পর নিউ জ়িল্যান্ডের আর কোনও আশা ছিল না। জেস কের করেন ১৮। গেজ় ৫১ বলে ৬৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেললেও লাভ হয়নি। তিনি ১০টি চার মারেন।
আরও পড়ুন:
এ দিন ভারতের সফলতম বোলার রেণুকা সিংহ ঠাকুর ২৫ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন। ৪৮ রানে ২ উইকেট ক্রান্তির। ১৯ রানে ১ উইকেট প্রতিকার। ৫৭ রানে ১ উইকেট দীপ্তি শর্মার। ৫৮ রানে ১ উইকেট শ্রী চরনির। ৬০ রানে ১ উইকেট স্নেহ রানার।