Advertisement
E-Paper

‘আপনি সব সময় ঝলমল করেন’! মোদীর ত্বকচর্চার রহস্য জানতে চাইলেন বিশ্বকাপজয়ী হরলীন, কী উত্তর দিলেন প্রধানমন্ত্রী?

বিশ্বকাপ জেতার পর বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করতে যান ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। সেখানেই হরলীন দেওল জানতে চান, প্রধানমন্ত্রী কেন সব সময় ঝলমল করেন?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৫ ১১:৩৭
cricket

(বাঁ দিকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। হরলীন দেওল (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেখা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার দিল্লিতে ৭ নম্বর লোককল্যাণ মার্গে মোদীর বাসভবনে যান ক্রিকেটারেরা। সঙ্গে ছিলেন ভারতের প্রধান কোচ অমল মুজুমদার, সহকারী কোচ ও সাপোর্ট স্টাফেরা। প্রত্যেকের পরনে ছিল সাদা শার্ট, কালো ট্রাউজ়ার ও কালো ব্লেজ়ার। প্রধানমন্ত্রীর হাতে বিশ্বকাপের ট্রফি তুলে দেন তাঁরা। ক্রিকেটারদের সই করা জার্সিও তুলে দেওয়া হয়। সেই জার্সির নম্বর ‘১’। তাতে লেখা ‘নমো’। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আধ ঘণ্টা কথাও বলেন ক্রিকেটারেরা। সেখানে উঠে আসে নানা প্রসঙ্গ। কখনও ক্রিকেটারেরা মোদীকে কিছু প্রশ্ন করেন। আবার কখনও প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন। শেষে ক্রিকেটারদের একটি উপদেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

মোদীর ত্বকচর্চার রহস্য

হরলীন দেওল মোদীকে প্রশ্ন করেন, “স্যর, আপনার ত্বক সবসময় ঝলমল করে। আপনার ত্বকচর্চার রহস্য কি আমাকে বলবেন?” হঠাৎ করে যে হরলীন এমন একটি প্রশ্ন করবেন, তা ভাবতে পারেননি কেউ। খানিকটা অবাক হন সকলে। তার পরে হাসেনও। প্রধানমন্ত্রীও হয়তো এমন প্রশ্নের জন্য তৈরি ছিলেন না। প্রথমে মাথায় হাত দেন। তারপর তিনি বলেন, “আমি এ সব কথা ভাবি না।” তা শুনে বাকি ক্রিকেটারেরা বলেন, “স্যর, এটা দেশের কোটি কোটি লোকের ভালবাসা।” তাতে সকলের হাসি আরও বেড়ে যায়।

চুপ থাকেননি কোচ অমল মুজুমদারও। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, “দেখছেন তো স্যর, কী সব প্রশ্ন! কাদের নিয়ে আমাকে থাকতে হয়। সেই কারণেই তো দু’বছরে মাথার সব চুল পেকে গিয়েছে।”

ক্যাচ নিয়ে বল কেন পকেটে?

মোদী হরমনপ্রীত কৌরকে প্রশ্ন করেন, বিশ্বকাপ ফাইনালের শেষ ক্যাচ ধরে কেন বলটি পকেটে পুরে নিয়েছিলেন তিনি। জবাবে হরমনপ্রীত বলেন, “জানতাম না যে, বল আমার কাছে আসবে। এটাও হয়তো ঈশ্বরের পরিকল্পনা ছিল। তখন মনে হয়েছিল, এত দিনের পরিশ্রম সার্থক হল। সেই কারণেই বলটা নিয়ে নিয়েছিলাম। এই বলটা সারা জীবন আমার কাছে থাকবে।” হরমন আরও বলেন, “২০১৭ সালে বিশ্বকাপ শেষে আপনার সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তখন ট্রফি আনতে পারিনি। আজ পারলাম। আশা করব ভবিষ্যতেও আপনার সঙ্গে এ রকম ছবি তুলতে পারব।”

রাজা চার্লস নয়, মোদী বেশি প্রিয়

ইংল্যান্ডে খেলতে গিয়ে রাজা চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেটারদের। কিন্তু তার থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকে অনেক এগিয়ে রাখছেন অমল। ভারতের প্রধান কোচ বলেন, “জুন মাসে ইংল্যান্ডে খেলতে গিয়ে রাজা চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল। কিন্তু ওখানে নিয়ম ছিল, ২০ জনের বেশি নিয়ে যাওয়া যাবে না। তাই সাপোর্ট স্টাফদের নিয়ে যেতে পারিনি। ওদের সে কথা বলেছিলাম। ওরা বলেছিল, এই ছবিটা আমাদের দরকার নেই। দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ জেতার পর মোদীজির সঙ্গে ছবি তুলতে চাই।”

মোদীর বক্তৃতা অনুপ্রেরণা

বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটার হয়েছেন দীপ্তি শর্মা। তিনি জানান, মোদীর বক্তৃতা থেকে অনুপ্রেরণা পান তিনি। ভারতীয় ক্রিকেটার বলেন, “২০১৭ সালে আপনার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তখন ট্রফি আনতে পারিনি। এ বার পেরেছি। আপনার বক্তৃতা আমি মন দিয়ে শুনি। আপনাকে এত লোক এত কিছু বলে। তার পরেও আপনি শান্ত থাকেন। নিজের কথা দৃঢ় ভাবে বলেন। আপনার কথা আমাকে উদ্বুদ্ধ করে।”

তা শুনে প্রধানমন্ত্রী দীপ্তিকে প্রশ্ন করেন, “আপনার হাতে হনুমানজির ট্যাটু রয়েছে।” শুনে দীপ্তি বলেন, “হ্যাঁ। আমি নিজের থেকেও বেশি হনুমানজিকে বিশ্বাস করি।” মোদী আরও বলেন, “আপনি বিশ্বকাপ জিতে ইনস্টাগ্রামে জয় শ্রীরাম লিখেছেন।” দীপ্তি বলেন, “হ্যাঁ, লিখেছি।” মোদী পাল্টা বলেন, “দেখলেন তো আমি কিন্তু দেখেছি।”

কুস্তির পরিবেশে জন্মেও ক্রিকেটে

হরিয়ানার মেয়ে শেফালি। যে রাজ্য থেকে দেশের বেশির ভাগ কুস্তিগির উঠে আসে সেখান থেকে হঠাৎ ক্রিকেটে কেন গেলেন তিনি? প্রধানমন্ত্রীর এই প্রশ্নের জবাবে শেফালি বলেন, “হ্যাঁ, এটা সত্যি। আমি যে শহরে জন্মেছি সেখানে কুস্তির খুব চর্চা। কিন্তু আমি কোনও দিন আখড়ায় যাইনি। বাবার ইচ্ছা ছিল ক্রিকেটার হবে। বাবা পারেনি। তাই আমাক আর ভাইকে ক্রিকেটার করেছে।”

ক্যাচ ধরার আগেই হাসছিলেন শেফালি

বিশ্বকাপ ফাইনালে নিজে বল করে নিজেই সুনে লুসের ক্যাচ ধরেছিলেন শেফালি। মোদী জিজ্ঞাসা করেন, “ক্যাচ ধরার আগেই দেখলাম আপনি হাসছিলেন।” জবাবে শেফালি বলেন, “হ্যাঁ, মনে মনে ভাবছিলাম, বলটা চলে আয় আমার হাতে। সেটাই এল।”

মোদীর ভক্ত দাদা

চম্বল থেকে উঠে আসা ক্রিকেটার ক্রান্তি গৌড়ের দাদ মোদীর ভক্ত। নিজেই সে কথা জানিয়েছেন ক্রিকেটার। ক্রান্তি বলেন, “আমার দাদা আপনার ভক্ত। দাদাও ক্রিকেট খেলত। কিন্তু ওই সময় বাবার চাকরি চলে গিয়েছিল। তাই দাদাকে ক্রিকেট ছাড়তে হয়। আমি এগিয়ে গিয়েছিলাম। ওই সময় গ্রামে ‘বিধায়ক কাপ’ হয়েছিল। সেখানে চামড়ার বলে ২ উইকেট নিয়েছিলাম। ওটাই শুরু।”

হরমন, স্মৃতিরা কথা লুকিয়েছিলেন

বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের আগে চোট পেয়ে ছিটকে যান প্রতিকা রাওয়াল। আর খেলতে পারেননি তিনি। খাতায়-কলমে বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য না হলেও দলের সঙ্গে ট্রফি নিয়ে উল্লাস করেছেন প্রতিকা। তাঁকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন হরমনপ্রীতেরা। সেখানে প্রতিকা জানিয়েছেন, তাঁর জন্য বিশ্বকাপ জিততে চেয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। প্রতিকা বলেন, “ওরা ম্যাচের পর বলল যে, আমার জন্য ট্রফি জিততে চেয়েছিল। আমাকে আগে বলেনি। কথা লুকিয়েছিল। আমি অন্য এক জনের কাছে সেটা শুনেছিলাম। আমাদের দল একটা পরিবারের মতো।”

আপনি যেখানেই খেলেন, জেতেন

বাংলার রিচা ঘোষকে এই কথা বলেন মোদী। প্রথম বাঙালি হিসাবে বিশ্বকাপ জিতেছেন রিচা। তবে এর আগেও দেশের হয়ে ট্রফি জিতেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর কথার জবাবে রিচা বলেন, “হ্যাঁ, আমি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছি। মহিলাদের প্রিমিয়ার লিগ জিতেছি। এ বার এক দিনের বিশ্বকাপ জিতলাম। আমি বড় বড় ছক্কা মারতে ভালবাসি। হ্যারিদি, স্মৃতিদি সব সময় আমার পাশে থাকে। আমাকে উৎসাহিত করে।”

মোদীর কথায় সূর্যের ক্যাচ

বিশ্বকাপের ফাইনালে লরা উলভার্টের গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ ধরেছিলেন আমনজ্যোৎ কৌর। সেই ক্যাচেই ম্যাচের রাশ ভারতের হাতে চলে আসে। সেই ক্যাচের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে আমনজ্যোৎ বলেন, “ওই ক্যাচের মধ্যেই ট্রফিটা দেখছিলাম। ধরার পর মনে হল, বিশ্বকাপ ধরে ফেলেছি।” তা শুনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সূর্যকুমারও টি২০ বিশ্বকাপে এ রকম একটা দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়েছিল। আমার মনে আছে।”

খেলা থাকলেই বৃষ্টি হয়

গোটা বিশ্বকাপে একটি ম্যাচেই সুযোগ পেয়েছিলেন উইকেটরক্ষক উমা ছেত্রী। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেস্তে যায়। উমা বলেন, “দেশের হয়েই আমার অভিষেক হোক, বা বিশ্বকাপে হোক, আমার অভিষেক মানেই বৃষ্টি।” তা শুনে অমল বলেন, “ও তো উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে দেশের হয়ে খেলা একমাত্র মেয়ে।” তা শুনে মোদী বলেন, “হ্যাঁ, আপনি তো অসমের মেয়ে।”

সাজঘরে ময়ূর

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে স্মৃতি মন্ধানা অর্ধশতরান করেছিলেন। তার পরেই একটি ময়ূরের ছবি এঁকেছিলেন রেণুকা সিংহ ঠাকুর। সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন রেণুকা। ভারতীয় পেসার বলেন, “আমার লক্ষ্য থাকে সাজঘরের পরিবেশ সব সময় হাসিখুশি রাখা। যখন স্মৃতির অর্ধশতরান হল তখন মনে হল, এ বার শিকার করে ফেলতে হবে। তখনই ময়ূরের ছবি এঁকে সাজঘরে রেখেছিলাম।” ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছিলেন রেণুকা। মা তাঁকে মানুষ করেছেন। মায়ের পরিশ্রমের কথা উঠে এসেছে মোদীর মুখে। তিনি বলেন, “আপনার মাকে আমি প্রণাম জানাচ্ছি। উনি কঠিন জীবন কাটিয়েছেন। একা মা হয়ে তাঁর মেয়ের জন্য এত আত্মত্যাগ করেছেন। ওঁকে আমার প্রণাম জানাবেন।”

মোদীর উপদেশ

ভারতের বিশ্বকাপজয়ী দলকে একটি উপদেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভারতের মেয়েদের উদ্বুদ্ধ করার উপদেশ। মোদী বলেন, “আপনারা যখন বাড়ি ফিরবেন, তার কিছু দিন পর নিজেদের স্কুলে যান। একটা দিন কাটান। দেখবেন বাচ্চারা অনেক প্রশ্ন করবে। আপনারা যদি এটা করেন, স্কুল আপনাদের মনে রাখবে, বাচ্চারা আপনাদের মনে রাখবে।” মোদী আরও বলেন, “আপনারা তিনটে করে স্কুল বেছে নিন। সেখানে বছরে এক বার যান। ‘ফিট ইন্ডিয়া মুভমেন্ট’ নিয়ে বলুন। আমি তো সুযোগ পেলেই বলি। ওবেসিটি আমাদের দেশে বড় সমস্যা। আপনাদের মুখে শুনলে তাতে বেশি ভাল কাজ হবে।”

মোদীর খাবার পরিবেশন

কথোপকথন শেষ হওয়ার পর ভারতীয় দলের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেন মোদী। যেহেতু প্রতিকা হুইলচেয়ারে ছিলেন, তাঁকে নিজে খাবার পরিবেশন করেন প্রধানমন্ত্রী।

ICC Women\'s ODI World Cup 2025 Team India Women PM Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy