প্রত্যয়ী: ওয়াংখেড়েতে শেষ চারের দ্বৈরথের জন্য তৈরি কুলদীপ। —ফাইল চিত্র।
দু’জনই সেমিফাইনালের দ্বৈরথে দু’দলের বড় অস্ত্র হয়ে উঠতে পারেন। দু’জনই বাঁ-হাতি। তবে দু’জন দু’রকম ভূমিকা পালন করেন নিজেদের দলে।
এক জন, ভারতের চায়নাম্যান স্পিনার কুলদীপ যাদব। অন্য জন, নিউ জ়িল্যান্ডের ওপেনার ডেভন কনওয়ে।
ওয়াংখেড়েতে দু’দলের লড়াইয়ের আগে একটা আভাস পাওয়া গেল, কী ভাবছেন দুই ক্রিকেটার। কুলদীপ যাদব যেমন রসদ খুঁজছেন চলতি বিশ্বকাপে নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ থেকে। কনওয়ে আবার জানিয়েছেন, ভারতীয় চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে তাঁরা তৈরি।
রবিবার রাতে ভারত-নেদারল্যান্ডস ম্যাচের শেষে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের মিক্সড জ়োনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন কুলদীপ। সেখানে উঠে আসে গ্রুপ পর্বে ধর্মশালায় হয়ে যাওয়া নিউ জ়িল্যান্ড ম্যাচের কথা। সেই লড়াইয়ে কুলদীপকে প্রথম থেকেই আক্রমণ করেছিলেন নিউ জ়িল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু পরে আবার ফিরে এসে সফল হন ভারতীয় দলের অন্যতম সেরা স্পিনার।
সেই ম্যাচ থেকে কি নতুন করে আত্মবিশ্বাস পেয়েছেন যে, ব্যাটসম্যানরা আক্রমণ করলেও ফিরে আসা যায়? আত্মবিশ্বাসী কুলদীপ বলেন, ‘‘একশো ভাগ পেয়েছি। আমি তো বার বার একই কথা বলি। কখনও ব্যাটসম্যানরা আপনার উপরে চাপ তৈরি করবে, কখনও বোলাররা সেই চাপ ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু চাপ থেকে যে বেরিয়ে আসতে পারবে, সেই সাফল্য পাবে।’’ নিউ জ়িল্যান্ডের সঙ্গে ওই ম্যাচে প্রথম পাঁচ ওভারে চল্লিশের উপরে রান দিয়েছিলেন কুলদীপ। কিন্তু দ্বিতীয় স্পেলে তিনি তুলে নেন টম ল্যাথাম এবং গ্লেন ফিলিপসের উইকেট।
কুলদীপ যে রকম আত্মবিশ্বাসী, সে রকম ভারতের প্রতিপক্ষ নিউ জ়িল্যান্ড শিবিরও টগবগ করে ফুটছে। দু’দিন বেঙ্গালুরুতে ছিলেন কেন উইলিয়ামসনরা। শনিবার অনুশীলনও করেন জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে। এর পরে রবিবার মুম্বইয়ে পৌঁছে যান তাঁরা। মুম্বইয়ের রাস্তায় দীপাবলির আলোর রোশনাইও উপভোগ করেন নিউ জ়িল্যান্ডের ক্রিকেটাররা। তার মধ্যেই চলছে ভারতকে হারানোর অঙ্ক। নিউ জ়িল্যান্ডের মিডিয়া ম্যানেজারের পাঠানো এক ভিডিয়ো কথোপকথনে কনওয়ে বলেছেন, ‘‘আমরা সবাই জানি, ভারত কতটা শক্তিশালী দল। ওরা দারুণ ছন্দেও আছে। ন’টার মধ্যে ন’টা ম্যাচই জিতেছে।’’
নিউ জ়িল্যান্ড ওপেনার এর পরে যোগ করেন, ‘‘আমরা একটা উত্তেজক সেমিফাইনাল হওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। জানি, ভারত কঠিন প্রতিপক্ষ। তার উপরে ঘরের মাঠে খেলবে। কিন্তু সেই পরীক্ষার জন্য আমরা তৈরি।’’
তৈরি কুলদীপও। কিন্তু এই প্রস্তুতির পথে প্রযুক্তির উপরে বেশি ভরসা রাখতে চান না। নিজেকে তৈরি করতে কি ভিডিয়ো, পরিসংখ্যান, বিশ্লেষণ, ইত্যাদির উপরে বেশি ভরসা করেন? একটু হেসে কুলদীপ বলে চলেন, ‘‘একদমই না। মানে, ভিডিয়ো বিশ্লেষণের উপরে আমার ভরসা নেই, সে কথা বলছি না। তবে আমি কারও ব্যাটিং ভিডিয়ো একেবারেই দেখি না। নিজের বোলিংয়ের উপরেই কিন্তু বেশি জোর দিই।’’
সেই প্রস্তুতির অঙ্গ হল, পরিস্থিতি বুঝে নিজের বোলিংয়ে বৈচিত্র আনা। চায়নাম্যান স্পিনারের কথায়, ‘‘পিচের অবস্থাটা বুঝে নিতে হয়। তার পরে সেই অনুযায়ী লেংথের হেরফের বা বলের গতি কমানো-বাড়ানোর উপরে জোর দিই। উল্টো দিকের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে ভাবি না। আমি আমার শক্তি অনুযায়ী বল করতে চাই।’’
তবে কুলদীপ স্বীকার করেছেন, নতুন বলে পেসাররা যদি শুরুতে উইকেট তুলে নিতে পারেন, তা হলে স্পিনারদের ওপর থেকে চাপ কিছুটা কমে যায়। সোমবার দুপুরে বেঙ্গালুরু থেকে মুম্বই উড়ে যান ভারতীয় ক্রিকেটাররা।
ভারতীয় বোলারদের শুরুতে উইকেট তুলতে গেলে ফেরাতে হবে কনওয়ে বা রাচিন রবীন্দ্রকে। এই মুহূর্তে স্বপ্নের ফর্মে আছেন রাচিন। তিনটি শতরান হয়ে গিয়েছে এই বাঁ-হাতি তরুণের। তাঁর সতীর্থ ওপেনারকে নিয়ে কনওয়ে বলেছেন, ‘‘আমরা সবাই রাচিনের দক্ষতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলাম। জানতাম, ওর কী ক্ষমতা। এই বিশ্বকাপে রাচিন যে ভাবে নিজেকে মেলে ধরেছে, তা এক কথায় অসাধারণ।’’
এক দিন মুম্বইয়ে ছুটি কাটিয়ে তরতাজা হয়ে আছেন নিউ জ়িল্যান্ডের ক্রিকেটাররা। কনওয়ের এটা প্রথম এক দিনের বিশ্বকাপ। এর আগে টেস্ট বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপর ফাইনাল, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছেন তিনি। চলতি বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শতরান করেছিলেন কনওয়ে। ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘অবশ্যই খুব ভাল লাগছে এই জায়গায় পৌঁছতে পেরে। এটা আমার প্রথম ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ। অন্য একটা ফর্ম্যাট। দলের সবার সঙ্গে মিলেমিশে প্রতিযোগিতাটা দারুণ উপভোগ করছি।’’
চার বছর আগে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে হার মানতে হয়েছিল ভারতকে। সেই ম্যাচে কনওয়ে বা কুলদীপ কেউই খেলেননি। তাই দু’জনের কেউই অতীত নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। তাঁরা সামনে তাকাতে চান।
বুধবারের রাতে কে শেষ হাসি হাসেন, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy